চাকরি পেতে ব্যর্থ, অবশেষে সফল কৃষিকাজে

সৈয়দ হাবিবুর রহমান ডিউক, শায়েস্তাগঞ্জ


ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
০১:৫৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
০১:৫৩ অপরাহ্ন



চাকরি পেতে ব্যর্থ, অবশেষে সফল কৃষিকাজে

লেখাপড়া করে শুধুই চাকরির পেছনে ছুটতে হবে বা চাকরিই করতে হবে এরকম কোনো কথা নেই। লেখাপড়া শেষ করে নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে চাইলে অন্যভাবেও সফল হওয়া যায়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ শায়েস্তাগঞ্জের সফল উদ্যোক্তা মো. সোহাগ মিয়া।

সোহাগ মিয়া হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিশাপট গ্রামের মো. শাহ আলমের পুত্র। তিনি হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে এমবিএ শেষ করেছেন। বর্তমানে তার বয়স প্রায় ২৯। তিনি লেখাপড়া শেষ করে প্রায় ৪ বছর চাকরির জন্য ঘোরাফেরা করেছেন। অবশেষে চাকরি না পেয়ে  নিজের প্রচেষ্টাকে অন্যভাবে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন একজন সফল চাষী।

জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে তিনি কৃষিকাজে সময় দিচ্ছেন। নিজের জমিতেই গড়ে তোলেছেন বিভিন্নরকম শাক-সবজির বাগান। তার বাগানে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে করলা, টমেটো ও শিম। সোহাগ মিয়া এ বছর ৬০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। এবার তার জমিতে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার শিম বিক্রি করে আসতে পারে ২ লাখ টাকা। শিম ফলাতে তার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো। প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি চাষ করেছেন শিম। তার জমিতে কোনোরকম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। ফলে একদম দেশীয় স্বাদে ক্রেতারা শিম কিনে খেতে পারবেন। সোহাগ মিয়ার জমিতে ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। কৃষিকাজে তাকে সহায়তা করেন তার মা ও বোন।

সোহাগের কৃষিজমিতে কর্মরত শ্রমিক আনজব আলী জানান, দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে তিনি কাজ করেন সেখানে। এই টাকা দিয়েই সংসার চালান তিনি।

সৌদি আরবে ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন একই গ্রামের ফরিদ মিয়া। দেশে এসে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। মোরগের খামার দিয়ে লোকসান হয়েছে অনেক টাকা। পরে সোহাগের বিভিন্ন সবজির চাষ দেখে উৎসাহ পান তিনি। নিজেও করেন বিভিন্নরকম সবজির চাষ। এতে করে এখন ফরিদ মিয়াও ভালো টাকা আয় করছেন।

সোহাগের মা রেজিয়া খাতুন জানান, তার উচ্চশিক্ষিত ছেলে যখন চাকরি পাচ্ছিলেন না, তখন খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তিনি। পরে ছেলে যখন কৃষিকাজে মনোনিবেশ করলেন, তখন তিনিও তাকে সহযোগিতা করতে লাগলেন। এখন আর কোনো চিন্তা নেই তার। ছেলে এখন সফল কৃষক। ছেলের চাষ করা নানারকমের সবজি বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হয় তাদের।

এ বিষয়ে সোহাগ মিয়া বলেন, 'হিসাববিজ্ঞানে এমবিএ শেষ করে ৪ বছর চাকরির পেছনে ছুটেছি। কিন্তু চাকরি জোটেনি তার ভাগ্যে। পরে পারিবারিক জমিতে টমেটো, করলা ও শিমের চাষ শুরু করি। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ করেছি। যে কারণে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। আর বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারি। টমেটো আর করলা চাষ করার পরে এবার শিম চাষ করেছি। শিম চাষে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো। আল্লাহর রহমতে বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি ২ লাখ টাকার শিমের বিচি বিক্রি করতে পারব। ৪ বছর চাকরির পেছনে না ঘুরে কৃষিকাজ করলে এতদিনে অনেক টাকা আয় করতে পারতাম।'

তিনি বলেন, 'আমাকে দেখে গ্রামের অনেকেই এখন বিভিন্নরকমের সবজি চাষ শুরু করেছেন। একই সঙ্গে আমার সবজির ক্ষেতে কাজ করে ৪/৫টি পরিবারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।' সরকারি সহযোগিতা পেলে তিনি আরও জমিতে নানা ধরনের সবজি চাষের উদ্যোগ নেবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত ধর বলেন, 'তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য কৃষিকাজ এই মুহূর্তে স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম উপায়। কৃষিকে উপজীব্য করে অনেক তরুণ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নের নিশাপট গ্রামের সোহাগ তার প্রকৃত উদাহরণ। ২০১৮ সাল থেকে তিনি কৃষিকে ভিত্তি করে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার এই অগ্রযাত্রায় কৃষি বিভাগ সবসময় তার পাশে আছে। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য সরকার ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় সোহাগের মতো অন্যান্য তরুণও এ পেশায় আসতে উৎসাহ পাবেন বলে আমি মনে করি। তরুণ উদ্যোক্তাদের পাশে কৃষি বিভাগ সবসময় আছে।'

 

এসডি/আরআর-০৯