সুনামগঞ্জে ডামি শহিদ মিনার তৈরি করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
০৮:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১
০৮:১৬ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে ডামি শহিদ মিনার তৈরি করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা

১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর সৃনামগঞ্জ শহরে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ নির্মিত শহিদ মিনারের ভ‚মি নিয়ে মামলা ও ইনজাংশনের প্রতিবাদে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে ডামি শহিদ মিনার করে ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। 

তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান একুশের প্রথম প্রহরে এই ডামি শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। 

রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সন্তান কমাÐ, জেলা আওয়ামী লীগ, জাসদ, আইন সহায়তাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠনও মূল শহিদ মিনারে একুশের শ্রদ্ধা না জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাগণ কর্তৃক নির্মিত ডামি শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন। 

তারা অবিলম্বে মুক্তিযোদ্ধাগণ কর্তৃক একাত্তরে নির্মিত অনন্য শহিদ মিনারের মামলা তুলে নেওয়াসহ শহিদ মিনারের ভ‚মিতে গড়ে তোলা বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছর সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের অস্তিত্ব অস্বীকার করে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, শহিদ মিনারের ভ‚মিতে বাণিজ্যিক মার্কেট অপসারণ ও শহিদ মিনার এলাকায় ইনজাংশন তুলে নেওয়াসহ ছয় দফা দাবিতে প্রতিবাদ স্বরূপ সুনামগঞ্জ শহিদ মিনারের মূল বেদি কালো কাপড়ে ঢেকে দিয়েছিলেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা গত বছরের ১৬ মার্চ কালো কাপড়ে ঢাকা শহিদ মিনার অবমুক্ত করেছিলেন। 

সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধারা গত বছরের ৮ মার্চ  এর প্রতিবাদে সুনামগঞ্জ শহরে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে শহিদ মিনারের ভ‚মি উদ্ধার ও শহিদ মিনার নিয়ে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। 

তারা ওইদিন আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। 

স্মারকলিপিতে জেলা জজশিপের কর্মচারীদের নামে শহিদ মিনারের ভ‚মিতে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে রাতের আধারে একটি বাণিজ্যিক মার্কেট ভেঙ্গে ফেলা হলেও পশ্চিমের মার্কেটটি এখনো বিদ্যমান রয়ে গেছে। 

দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের তৈরি শহিদ মিনার নিয়ে মামলা ও বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলনরত বীর মুক্তিযোদ্ধারা এবার ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে আবারও ককশিটে ডামি শহিদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন। তারা অবিলম্বে শহিদ মিনারকে নিয়ে এই অপ্রীতির ঘটনার অবসান দাবি করেছেন।

রবিবার সকাল সাড়ে সাতটায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ডামি শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেন।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার হাজি নূরুল মোমেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জ শত্রুমুক্ত করে ১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর থেকেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরা শহিদ মিনার নির্মাণ করে ১৬ ডিসেম্বর শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করেছিলেন। আমাদের অনন্য শহিদ মিনার অস্বীকার করে আদালতে মামলা দায়ের, সম্প্রতি শহিদ মিনারের ভ‚মিতে ইনজাংশন জারি এবং শহিদ মিনার এলাকায় দুই দিকে বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে আমরা কর্মসূচি পালন করে আসছি। আমাদের প্রতিবাদে একটি মার্কেট অপসারণ করা হলেও আরো একটি মার্কেটসহ এখনো মামলাটি রয়ে গেছে। এবার প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় আমরা ডামি শহিদ মিনার তৈরি করে ভাষাশহিদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছি।’

শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণকালে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবু সুফিয়ান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আলী আমজাদ, সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার আব্দুল মজিদ, মুক্তিযোদ্ধা বিনোদ রঞ্জন, মুক্তিযোদ্ধা শাহীন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর প্রমুখ। 

এস এস/বি এন-০৪