আমীর হোসাইন, শাল্লা
মার্চ ০৬, ২০২১
০২:৩১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ০৬, ২০২১
০২:৫২ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জ জেলাধীন শাল্লা উপজেলায় ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খোদ বাঁধ নির্মাতারাই বাঁধগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্ত রহস্যের বিষয় হচ্ছে, এসব জেনেও পাউবো কর্মকর্তারা নিরব ভূমিকা পালন করছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা (এসও) টাকার বিনিময়ে পিআইসি দেওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে। তা না হলে দূর থেকে মাটি আনার প্রচুর পরিমাণ জায়গা থাকা সত্ত্বেও একেবারে বাঁধের গোড়া কেটে মাটি উঠানো হয়েছে। কিন্ত কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করছে।
জানা যায়, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার চুক্তির মাধ্যমে শাল্লায় ১৫৬টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে (পিআইসি) বাঁধের কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ২৪ কোটি টাকা। বাঁধের কাজের জন্য কিছু নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়। পাউবো নীতিমালা অনুযায়ী, বাঁধের ৩০ মিটারের ভেতর থেকে কোনো মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়াও আরও অনেক নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু পিআইসি'র সভাপতি এই নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বাঁধের গোড়া থেকেই মটি উত্তোলন করেছেন। যার ফলে বাঁধগুলোর ঝুঁকি বিপদজনকভাবে বেড়ে গেছে।
কৃষকদের অভিযোগ, অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের একেবারে গোড়াতেই বিশাল বিশাল গর্ত করা হয়েছে। এই গর্তগুলো ভরাট করা না হলে বৃষ্টির পানিতে অথবা বন্যার পানি এলেই বাঁধগুলো ধসে যেতে পারে এবং দুঃস্বপ্ন নেমে আসতে পারে অসহায় কৃষকদের জীবনে। গর্তগুলো ভরাটের পরও সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত হতে পারবেন কি না এ ব্যাপারেও শঙ্কিত রয়েছেন কৃষকরা। কারণ বাঁধগুলোর নিচের শক্ত মাটি কাটার পর বাঁধগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, টাকা দিলেই কর্মকর্তারা প্রতিবেদনের খাতায় ভালো লিখে চলে যান। না হলে কী করে এতজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাঁধের গোড়ায় গর্ত করা হলো? কীভাবে দুরমুজ ছাড়াই অনেকগুলো বাঁধ নির্মাণ করা হলো? তাদের মতে, ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার মধ্যে রয়েছে ৫৫, ৫৮, ৫৯, ৬০ ও ৬১ নম্বর বাঁধ। এছাড়া আরও অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রয়েছে। এ বাঁধগুলোর একেবারে গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা দায়িত্বপ্রাপ্তদের অনেকেই গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে ৫৫ নম্বর পিআইসি'র দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়ন মিয়া বলেন, 'আমি নতুন এসেছি। মাটি কাটার সময় ছিলাম না।'
শাল্লা গ্রামের ঠাকুর চান, রবিন্দ্র দাস, সুশিল দাস, মহাদেব দাস, গুরুধন দাস, মফিজুল মিয়া, আক্তার মিয়া, বাচ্চু মিয়া ও হুমায়ুন মিয়াসহ আরও কয়েকজন বলেন, বাঁধের গোড়া কেটে তিন থেকে চার ফুট দূরে গর্ত করা হয়েছে এটা ঠিক, কিন্ত এক্সকেভেটরে মাটি কাটার সময় আমরা ছিলাম না। প্রতিবাদ করব কী করে?
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, দূর থেকে মাটি আনার প্রচুর পরিমাণ জায়গা থাকা সত্ত্বেও যেভাবে বাঁধের গোড়ায় গর্ত করা হয়েছে, তা বাঁধ ধ্বংসের নামান্তর। এই গর্তগুলো ভরাট করা না হলে বন্যার পানি এলেই বাঁধগুলো ভেঙ্গে আমাদের স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই আমরা এই গর্তগুলো ভরাটের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাঁধ পরিদর্শনে যাওয়া পাউবো'র কর্মকর্তা আব্দুল জলিলকে গর্তগুলো দেখিয়ে তার পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে আপনার (প্রতিবেদক) সঙ্গে আমার কথা বলার অনুমতি নেই। আপনি এসও সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন।'
আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) আব্দুল কাইয়ুম মুঠোফোনে বলেন, 'আপনারা যা দেখেন তা লেখেন, কোনো সমস্যা নেই।' একথা বলেই তিনি কল কেটে দেন। পরে বার বার যোগাযোগের চেষ্টার পর কল রিসিভ করে গর্তের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমরা গর্ত ভরাট করার জন্য বলছি, আপনারাও বলেন।'
এ ব্যাপারে শাল্লা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, 'আমি এগুলো দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।'
এএইচ/আর আর-০৭