কেড়ে নেওয়া হলো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, কান্না থামছে না মমতা রাণীর

বিশেষ প্রতিনিধি


মার্চ ১৩, ২০২১
১২:৫৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মার্চ ১৩, ২০২১
১২:৫৭ পূর্বাহ্ন



কেড়ে নেওয়া হলো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, কান্না থামছে না মমতা রাণীর

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দুই শতাংশ জমি প্রাপ্তি ও সেখানে একটি পাকা ঘর নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রায়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন অসহায় হতদরিদ্র মমতা রাণী বৈষ্ণবী। উপজেলার ভেরাডহর গ্রামের স্বামী-সন্তানহীন এই হতদরিদ্র নারী পরের দান-দক্ষিণায় চলেন। বিধবা ভাতা হিসেবে সরকার তাকে সুবিধা দিয়ে থাকে। এই নারী খাস জমিতে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছিলেন। তার এ অবস্থা দেখে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সরকারি সুবিধাভোগী হিসেবে তার নাম দাখিল করলে চূড়ান্ত তালিকায় তিনি মনোনীত হন। 

সরকার তার নামে মুজিববর্ষে বাড়ি বানানোর জন্য ইট, বালু, পাথর ও সিমেন্টসহ নির্মাণ উপকরণ পাঠিয়ে দেয়। তিনি কাজও শুরু করেন। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে শাল্লা উপজেলা থেকে মুজিববর্ষের ১৪৬টি ঘর কেটে নিলে তিনিও সেই কর্তিত তালিকায় পড়ে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ দিয়ে তার অর্ধনির্মিত ঘরটি গুড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় নির্বাক হয়ে গেছেন এই অসহায় নারী। এখন সারাক্ষণ বিলাপ করছেন তিনি।

শাল্লা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে পশ্চাদপদ ও দরিদ্র উপজেলা শাল্লা। হতদরিদ্র মানুষজন খাস জমিতে গ্রাম বানিয়ে বসবাস করেন। এসব বিষয় বিবেচনা করে শাল্লা উপজেলায় মুজিববর্ষের প্রায় দেড় হাজার ঘর বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু এসব ঘর বরাদ্দের নামে একটি চক্র দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় নানা অজুহাত দেখিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ১৪৬টি ঘর তালিকা থেকে কেটে নেয়। এই ঘর নির্মাণে জড়িত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রশিদকে ইতোমধ্যে পার্বত্য এলাকায় বদলি করা হয়েছে। মনোনীত সবাইকেই গৃহনির্মাণের উপকরণ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিল সরকার। এগুলো পেয়ে কাজও শুরু করেছিলেন সুবিধাভোগীরা। যাদের একজন অসহায় মমতা রাণী বৈষ্ণব। তবে একই গ্রামে একই পরিবারের তিনজনের তালিকা বহাল রেখে এই অসহায় নারীর নাম কেটে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। 

জানা গেছে, এই গ্রামে একই পরিবারের অনিল বৈষ্ণব, শিপুল বৈষ্ণব ও সন্দেশ বৈষ্ণব নামের এক পরিবারের তিনটি ঘরই বহাল রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মাসখানেক আগে মমতা রাণী বৈষ্ণবের ঘর নির্মাণের জন্য ইট, সিমেন্ট, বালু ও পাথর দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি তিনি কাজ শুরু করেছিলেন। এ উপজেলায় মুজিববর্ষের উপহারপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ঘর বরাদ্দের নামে একটি সিন্ডিকেট অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় জেলা প্রশাসন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গ্রামে গ্রামে পাঠিয়ে তদন্ত করায়। এ সময় ভুক্তভোগী অনেকেই নানা অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর বিভিন্ন এলাকায় কিছু টাকা ফেরত দেওয়া হয়। তাই নানা কারণে ১৪৬টি ঘর কেটে নেওয়া হয় শাল্লা উপজেলা থেকে। কেটে নেওয়া তালিকায় হতদরিদ্র নারী মমতা রাণী বৈষ্ণবও রয়েছেন। তবে তিনি এ বিষয়টি জানতেন না। এর মধ্যেই তার ঘরের কাজ শুরু হয়। সপ্তাহখানেক আগে তিনি খবর পান তার ঘর বাতিল হয়ে গেছে এবং ঘর ভেঙে উপকরণ নিয়ে যাওয়া হবে। এমন খবর শুনে বেঁকে বসেন এই নারী। শেখ হাসিনার উপহারের ঘর ভাঙতে দেবেন না বলে পণ করেন তিনি।

গত ৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ পাঠিয়ে তার ঘর ভেঙে নির্মাণ উপকরণ নিয়ে যান বলে জানান এলাকাবাসী। প্রতিবাদ করেও থামাতে না পারায় নির্বাক হয়ে যান এই বৃদ্ধা নারী। এখন নীরবেই চোখের জল মুছছেন তিনি।

মমতা রাণী বৈষ্ণব বলেন, 'মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলান মুজিবের নামের ঘরে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব। যখন ঘর তৈরির সরঞ্জাম পাঠানো হয়, তখন মনে হয় আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। কাজও শুরু করি। কিন্তু দুইদিন আগে পুলিশ এসে আমার ঘরটি ভেঙে মালামাল নিয়ে গেছে। আমাকে কেন ঘর দিয়ে আবার কেড়ে নেওয়া হলো আমি জানি না। আমি শেখ হাসিনার কাছে এর বিচার চাই। আমি ঘর ফেরত চাই।'

ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চৌধুরী বলেন, 'মমতা রাণী বৈষ্ণব খুব অসহায় নারী। কেউ নেই তার। বিধবা ভাতা আর আত্মীয়-স্বজনদের দানে খুপড়ি ঘরে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তিনি সুবিধাজনক খাস ভূমিতে খুপড়ি ঘরে থাকায় আমি তার নাম তালিকাভুক্ত করি। তিনি মনোনীত হন এবং নির্মাণ উপকরণ পেয়ে ঘর তৈরি শুরু করেন। দুইদিন আগে শুনেছি তার ঘরের নির্মাণসামগ্রী খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদীর হোসেন বলেন, 'তাকে (মমতা রাণী বৈষ্ণব) আমরা পরবর্তীতে ঘর করে দেব। এখন নানা সমস্যার কারণে ১৪৬টি ঘর কেটে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘর তার। তাই নির্মাণের মালামাল নিয়ে আসা হয়েছে।'

আরসি/বিএ-০২