মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার
মার্চ ২৩, ২০২১
১২:২২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২৩, ২০২১
১২:২২ পূর্বাহ্ন
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার টিলাগাঁও রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির খামখেয়ালীপনায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে কৃষকদের। অসময়ে খাসিয়ামারা নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এখন দুই তীরের বিস্তীর্ণ হাওরের হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল। সেচ সংকটের কারণে বোরো ফলন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। শুকিয়ে মরে যাচ্ছে রোপণকৃত ধানের চারা।
কৃষকদের ভাষ্য, হাওরে জলমহাল ও ছোট ছোট জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় একমাত্র নদীর পানিই তাদের ভরসা। কিন্তু রোপণের পর শুরুতেই রাবার ড্যাম প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটি নদীর পানি ছেড়ে দিলে পানি সংকটে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
সরেজমিনে হাওর এলাকা ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টিলাগাঁও রাবার ড্যাম কর্তৃপক্ষ অসময়ে নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ায় সেচের অভাবে ধ্বংসের মুখে রয়েছে আবাদকৃত বোরো ফসল। কোথাও পানির ব্যবস্থা না থাকায় জমি ফেটে রোপণকৃত চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে কৃষকদের চাপে রাবার ফুলিয়ে রাখলেও নদীতে এখন পানি নেই। নদীতে পূর্বে যে পানি জমানো ছিল এই পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে কৃষকরা জমিতে পানি দিতে পারতেন। রাবার ফোলালেও আগের মতো পানি জমানো এখন কঠিন হবে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং হাওরের জলমহাল ও ছোট ছোট জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় একমাত্র খাসিয়ামারা নদীর পানিই দুইপাড়ের কৃষকদের ভরসা। এই নদীর পানি দিয়ে সুরমা ও লক্ষ্মীপুর এই দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল আবাদ করা হয়।
বিভিন্ন গ্রামের একাধিক কৃষক বলেছেন, টিলাগাঁও রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির খামখেয়ালীপনা সিদ্ধান্তে অসময়ে নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ায় আমাদের বোরো ফসল এখন হুমকির মুখে রয়েছে। পানি দিতে না পারায় মাটি ফেটে চারা শুকিয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উপজেলার বক্তারপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মতিন ও উমর গণি বলেন, এই মৌসুমে খাসিয়ামারা নদীর রাবার ফুলিয়ে পানি আটকানোর ফলে দুই ইউনিয়নের টিলাগাঁও, বক্তারপুর, মীরপুর, জিরারগাঁও, সুলতানপুর, এরুয়াখাই, খাগুড়া, মহব্বতপুর, রসরাই লক্ষ্মীপুর, কালাইউড়া ও নোয়াগাঁওসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা নদী থেকে সেচের মাধ্যমে বোরো ফসল রক্ষা করেন। কিন্তু এ বছর বোরো চারা রোপণের পর উপকারভোগী কৃষকদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দেওয়ায় পানির অভাবে মরে যাচ্ছে রোপণকৃত বোরো চারা। কৃষকদের এ ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার কারা নেবে?
উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমীরুল হক বলেন, অসময়ে নদীর পানি ছেড়ে দেওয়ায় কৃষকদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এখন পানি সংকটে বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ফসল ধ্বংসের মুখে পড়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ করেছেন যে কৃষকরা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সেচ বাবদ টাকা না দেওয়ায় তারা পানি ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা সেচের ব্যবস্থা করেছেন, তাদেরকে কৃষকরা খরচ দিয়েই পানি নিচ্ছেন। এখন পানি ব্যবস্থপনা কমিটি কৃষকের কাছে বাড়তি কিসের টাকা নিতে চায় তা আমার বোধগম্য নয়।
টিলাগাঁও রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (দায়িত্বে থাকা) আবদুল হক ইচ্ছাকৃতভাবে পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রাবার বিকল হওয়ার কারণে হঠাৎ করে পানি ছুটে যায়। পরে রাবার সচল করে আবারও পানি আটকানো হয়েছে। আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যেই নদীতে পানি জমে যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাবার ড্যামের পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।
এইচএইচ/আরআর-০২