ধর্মপাশা প্রতিনিধি
মার্চ ২৬, ২০২১
১২:৪১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২৬, ২০২১
১২:৪১ পূর্বাহ্ন
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিরসুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের সামনের সড়ক থেকে গতকাল বুধবার (২৪ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজি চাল উদ্ধার করেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর রহমানের (৪৮) কাছ থেকে এ চাল উদ্ধার করা হয়।
এদিকে, উদ্ধার করা চাল জমা রাখায় ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক (৫০) মারধরের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নিয়োজিত ডিলার আরব আলীর ছেলে পিয়াস আহমেদ (২২) ও তার ছোট ভাই দীন ইসলাম (১৫) এ মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আরব আলী ও জহির উদ্দিন নামের দু'জন ডিলার রয়েছেন। ওই ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৯৩৫ জন কার্ডধারী রয়েছেন। ডিলার আরব আলী গত ১৫ ও ১৬ মার্চ দুইদিনে উপজেলার মধ্যনগর খাদ্যগুদাম থেকে ১৪ টন ১৬০ কেজি চাল উত্তোলন করেন। ১৬ মার্চ দুপুর থেকে তিনি ওই ইউনিয়নের হামিদপুর চৌরাস্তা মোড়ে থাকা ডিলারের গুদাম থেকে কার্ডধারীদের মধ্যে প্রত্যক কার্ডধারীর বিপরীতে প্রতি কেজি চাল ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন।
ডিলার আরব আলীর গুদাম থেকে গতকাল বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল নিয়ে হামিদপুর গ্রামে নিজ বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন মুজিবুর রহমান (৪৮) নামের এক ব্যক্তি। ডিলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন- স্থানীয় এক ব্যবসায়ী মুঠোফোনের মাধ্যমে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে এ তথ্য জানান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে হামিদপুর গ্রামের সামনের সড়ক থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজি ওজনের এক বস্তা চালসহ মুজিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেন এলাকাবাসী। এ সময় এলাকার অন্যান্য লোকজনের পাশাপাশি বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান কাঞ্চন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সানোয়ার হোসেন সেখানে উপস্থিত হন। উপস্থিত লোকজনের সামনে মুজিবুর রহমান ডিলার আরব আলীর কাছ থেকে এক বস্তা চাল আনার কথা স্বীকার করেন। পরে উপস্থিত লোকজন উদ্ধার হওয়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ওই চাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হকের জিম্মায় রাখেন। এ নিয়ে মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে একটি মুচলেকা রাখেন এলাকাবাসী।
মুজিবুর রহমান বলেন, 'আমি ডিলার আরব আলীর গুদামও বস্তা উডানো ও নামাইবার কাম করি। আমার মজুরি বাবদ ডিলার আমারে এই চাল দিছইন। আমি কষ্টের মজুরি নিছি। আমার কোনো দোষ নাই। কোনো দোষ থাকলে হেইডা ডিলারের।'
এদিকে, উদ্ধার হওয়া চাল নিজ জিম্মায় নিয়ে গতকাল রাত ১২টার দিকে নিজ গ্রাম জয়পুরের দিকে রওয়ানা হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক। ডিলার আরব আলীর বাড়ির সামনের সড়কে পৌঁছামাত্র ডিলারের ছেলে পিয়াস আহমেদ (২২) ও দীন ইসলাম (১৫) মঞ্জুরুল হকের ওপর চড়াও হয়ে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। টেনে-হিঁচড়ে তার ফতোয়া ও লুঙ্গি ছিড়ে ফেলা হয়। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ওই দু'জন সেখান থেকে সটকে পড়েন।
হামলায় আহত মঞ্জুরুল হক বলেন, 'খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ডিলার আরব আলীর দুই ছেলে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আমাকে মারধর করে আমার পকেটে থাকা ৯ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আমি ঘটনাটি সঙ্গে সঙ্গে ওসি সাহেব ও ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি।'
ডিলার আরব আলী বলেন, 'আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি ভিত্তিহীন। আমার স্ত্রী মোছা. সখিনার নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির একটি কার্ড রয়েছে। আমার গুদামে মুজিবুর রহমান শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাই আমার স্ত্রীর নামের চালগুলো তাকে দিয়েছি। স্থানীয় একটি মহল আমাকে বিপাকে ফেলার জন্য নানা অপবাদ রটাচ্ছে।'
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নির্মল দেব বলেন, 'ঘটনাটি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান বলেন, 'ঘটনাটি শুনেছি। ডিলারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এসএ/আরআর-০৪