সাম্প্রদায়িক হামলার চেষ্টা রুখে দিল জনতা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


এপ্রিল ০১, ২০২১
০২:৩৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০১, ২০২১
০২:৩৮ পূর্বাহ্ন



সাম্প্রদায়িক হামলার চেষ্টা রুখে দিল জনতা

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর এলাকায় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলার চেষ্টা রুখে দিয়েছেন সাধারণ জনতা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত এক তরুণের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গত সোমবার (২৯ মার্চ) মাইকিং করে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়েছিল ওই গোষ্ঠী। খবর পেয়ে স্থানীয় সচেতন জনতা পাল্টা মাইকিং করে তাদের ধর্মীয় গুজব ও বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ করে এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। পরে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো ও সমাবেশ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকার নির্দেশনা দেন।

জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষে দিরাইয়ের চরনারচর ইউনিয়নের লৌলারচর এলাকার এক হেফাজত কর্মী মারা যান। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে গত সোমবার ওই এলাকার হেফাজত অনুসারীসহ সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠী পার্শ্ববর্তী শ্যামারচর বাজারে মাইকিং করে প্রচারণা চালায়। তারা জমায়েতের নামে হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিয়ে মাইকে প্রচারণা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ায় এলাকায়। এতে উত্তেজনা বিরাজ করে। হিন্দু গ্রামগুলোতে দেখা দেয় আতঙ্ক। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে এলাকার সচেতন মানুষজন শ্যামারচর বাজারে পাল্টা মাইকিং করে এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে যারা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে এলাকাকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

জানা গেছে, ওই হেফাজত কর্মীর লাশ তার বাড়িতে আসার পর দিরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তার বাড়িতে যান। তারা লাশ দাফনে সহযোগিতা করেন। তারা ফিরে যাওয়ার পরই এলাকার হেফাজত অনুসারী সাম্প্রদায়িক একটি গোষ্ঠী এ ঘটনায় মাইকে হিন্দুবিরোধী প্রচারণা চালায়। এতে উত্তেজনা তৈরি হয়।

এদিকে, এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দিরাই থানার পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ছুটে আসেন। তারা এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে শান্তি বিনষ্টকারীদের রূখে দেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় স্থানীয় সচেতন জনতা প্রশাসনকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এদিকে জানা গেছে, গত রবিবার (২৮ মার্চ) হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের সময় দোয়ারাবাজার উপজেলার আমবাড়ি এলাকায় স্থানীয় মসজিদের এক ইমাম সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেন। তিনি পার্শ্ববর্তী প্রভাবশালী ও এলাকার জনপ্রিয় এক বনেদি হিন্দু পরিবারের বিরুদ্ধে যুবকদের উস্কানি দেন। একপর্যায়ে তিনি ওই হিন্দু সম্প্রদায়ের খ্যাতনামা এক ব্যক্তিকে মারার জন্য এলাকার যুবকদের নির্দেশ দিলেও কেউ তা মানেনি। পরে এ ঘটনা নিয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ নিয়ে শালিস বসে। শালিসে ইমামকে সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা না বলার জন্য শাসিয়ে দেওয়া হয়।

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা নিহত ছেলের বাড়িতে গিয়ে সান্ত্বনা জানিয়ে এসেছিলাম। তাদেরকে সহযোগিতাও করেছি। আমরা আসার পরই দুষ্কৃতিকারীরা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয় সচেতন মানুষজন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। স্থানীয়রা দুষ্কৃতিকারীদের বিষয়ে সজাগ রয়েছেন।'

 

এসএস/আরআর-১১