মামুনুল হকের সমালোচনা করে বিপাকে শিক্ষক

বিশেষ প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ


এপ্রিল ০৫, ২০২১
১১:০৭ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৫, ২০২১
১১:১০ অপরাহ্ন



মামুনুল হকের সমালোচনা করে বিপাকে শিক্ষক
নিরাপত্তা দিতে শিক্ষা উপমন্ত্রীর নির্দেশ

হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক ও 'শিশু বক্তা' রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নিয়ে সমালোচনার অভিযোগে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে তোপের মুখে পড়েছেন এক স্কুলশিক্ষক। তিনি এখন হেফাজত নেতা-কর্মীদের হুমকিতে আতঙ্কে আছেন। শালিস বসিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা তার চাকরিচ্যুতির দাবি করেছে। এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করায় প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনার খবর পেয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল সোমবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসককে ফোন করে ওই শিক্ষকের নিরাপত্তা দেখভালের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি এই প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেছেন।

এদিকে, একই ঘটনার জের ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করায় তাহিরপুরে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যুবলীগ নেতা ও শাল্লা উপজেলার আরেক যুবলীগ নেতা হুমকি পেয়ে আতঙ্কে আছেন। তাহিরপুরের মুক্তিযোদ্ধাসন্তান ও যুবলীগ নেতা এমাদ হোসেন জয়কে তাৎক্ষণিক মামলা দিয়ে পুলিশ আদালতে পাঠানোর পর সোমবার দুপুরে তাকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

অন্যদিকে, শাল্লা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবলীগ নেতা অরিন্দম অপু চৌধুরীর বিরুদ্ধেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি বিষয়টি অবগত করেছেন। এছাড়া এ ঘটনাটি কেন্দ্রীয় যুবলীগের পক্ষ থেকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, গতকাল রবিবার (৪ এপ্রিল) সকালে দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের বাংলাবাজারে একটি রেস্তোরাঁয় নাস্তা করছিলেন রফিনগর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস বি গোলাম মোস্তফা। এ সময় বাজারে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কয়েকজন ব্যক্তি মাওলানা মামুনুল হক ও 'শিশু বক্তা' রফিকুল ইসলাম মাদানীর বক্তব্য শুনছিলেন। তিনি তাদেরকে এসবে বিশ্বাস না করে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান। এ সময় স্থানীয় এক হেফাজত নেতা ওই শিক্ষকের বক্তব্য শুনে উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমানার অভিযোগ আনেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে যোগ দেন হেফাজতের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে বাজারে বিক্ষোভ করেন মামুনুল হকের অনুসারীরা। তারা ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন। বিষয়টি একপর্যায়ে বড় ঘটনার দিকে মোড় নেয়।

খবর পেয়ে দিরাই উপজেলার চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন, থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম, রফিনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজোয়ান হোসেন খানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জরুরি সভায় বসেন। সভায় হেফাজতের স্থানীয় অনুসারীরাও যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং প্রধান শিক্ষক এস বি জয়নাল আবেদিনের চাকরিচ্যুতির দাবি করেন। চাকরিচ্যুতি না করলে তার রেহাই নেই- এমন হুমকিও দেন তারা।

একপর্যায়ে তাদের অনড় অবস্থানের কারণে ও প্রশাসনের অনুরোধে প্রধান শিক্ষক ক্ষমা চান। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলেও হেফাজতের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে প্রধান শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে।

ইউপি চেয়ারম্যান রেজোয়ান হোসেন বলেন, 'প্রধান শিক্ষক কী বলেছিলেন আমরা কেউ শুনিনি। হেফাজতের স্থানীয় একজন হুজুর বিষয়টি শুনে অন্যান্যদের অবগত করেন। এতে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা ওই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতিরও দাবি জানান। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করে নিবৃত্ত করি। পরে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রধান শিক্ষককে দিয়ে ক্ষমা চাওয়াই।'

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, 'খবরটি শোনার পরই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। তবে কিছু লোক প্রধান শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি ও বিচার দাবি করেছিল। আমরা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিষয়টি শেষ করে দিয়ে এসেছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।'

সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন, 'হেফাজত নেতার সোনারগাঁও কাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশের মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথিত স্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্ট শেয়ার করছেন। কিন্তু তাহিরপুরে আমার কর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে এ কারণে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর ঘটনা নিন্দনীয়। এছাড়া শাল্লার যুবলীগ নেতা অপুকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা যারা দেশে ভাঙচুর, হামলা করে দেশের ক্ষতি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। পুলিশ যাতে বিভ্রান্ত হয়ে অযথা আমাদের নেতা-কর্মীদের হয়রানি না করে, সেদিকে নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছি।'

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'সোমবার সন্ধ্যায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় আমাকে দিরাইয়ের শিক্ষকের বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখতে বলেছেন। তার নিরাপত্তায় আমরা সচেষ্ট আছি। কেউ যাতে ধর্মীয় গুজব ছড়িয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।'

 

এসএস/আরআর-১৩