শামস শামীম, সুনামগঞ্জ
এপ্রিল ০৭, ২০২১
০২:০৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ০৭, ২০২১
০২:০৯ পূর্বাহ্ন
চল্লিশোর্ধ অপ্রকৃতিস্থ একজন ভাবলেশহীন নারী। উস্কোখুস্কো চুল। ছয়দিনের নবজাতক সন্তানকে বুকের সঙ্গে লেপ্টে ধরে তিনি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসকের কক্ষে। উৎসুক রোগীরা দেখছেন আর আফসোস করছেন। তাদের কাছে ‘পাগলি’ হিসেবে পরিচয় পাওয়া নাম-ঠিকানাহীন ওই নারী কোন পুরুষের লালসার শিকার হলেন, তা নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছিলেন তারা। অজ্ঞাত পুরুষটিকে গালমন্দও করছিলেন। ওই নারীর চেয়ে তার নবজাতক কন্যাসন্তানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। অনেকে কন্যাটিকে দত্তক নিতে চাইলেও আইনি জটিলতার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে।
এদিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারী ও তার সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে। তাদের জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষ ছেড়ে দিলেও মা ও সন্তান বিছানাতেই মলমূত্র ত্যাগ করছেন। শিশুটির ভবিষ্যত নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন। তাই স্থানীয় থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরিসহ সমাজসেবা অফিসকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। অন্যান্য রোগীদের সমস্যা হওয়ায় গাইনি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষেই বিছানা পেতে তাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। তার দেখভাল করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্সের পাশাপাশি আয়াদেরও নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বেলা ১টায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নবজাতককে দুধ খাওয়াচ্ছেন ওই নারী। কথা বলতে চাইলে শুধু হাসছিলেন। নাম ও পরিচয় কী জিজ্ঞেস করা হলেও শুধু হাসেন তিনি। এ সময় কয়েকজন রোগী তাকে দেখছিলেন।
সদর উপজেলার শ্রীনাথপুর গ্রামের ইকবাল হোসেন তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, 'পাগল নারীটি রাতে সন্তান রেখে দুইবার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমরা তাকে ফিরিয়ে সন্তানের পাশে রেখেছি। তার নাম ও পরিচয় জানার চেষ্টা করলেও কিছু বলেননি। শুধু হাসেন। আবোল-তাবোল বকেন। শিশুটির কী হবে এটা নিয়ে আমরাও চিন্তিত।'
ওই ওয়ার্ডে পুত্রবধূ নিয়ে আসা আমেনা বিবি বলেন, 'যে এই পাগলির সর্বনাশ করেছে আল্লাহ তার সর্বনাশ করুন। এত সুন্দর শিশুটির এখন কী হবে? নারীর অভিভাবক খুঁজে অন্তত শিশুটিকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। না হলে ফুটফুটে শিশুটির সমস্যা হবে।'
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অজ্ঞাতনামা ওই নারীকে তারা সিজোফ্রেনিয়া রোগী হিসেবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার পরিচয় উদ্ধারের জন্য সমাজসেবা অফিসের সঙ্গে কথা বলেছেন। নিজেরাও স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে কোনো অভিভাবকের সন্ধান মিলেনি এখনও। সুনামগঞ্জ সমাজসেবা অফিসের বালিকা এতিমখানা থাকলেও সেখানে নবজাতক রাখার কোনো সুযোগ নেই বলে জানা গেছে।
সদর হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার লিজা বলেন, 'আমরা ওই নারী ও নবজাতকের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। নারীর অভিভাবককে খোঁজা হচ্ছে। তাছাড়া অনেকে নবজাতক শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু এভাবে মায়ের কোল থেকে নবজাতককে দত্তক দিতে হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চিকিৎসকের সামনে তাকে ভবঘুরে হিসেবে প্রত্যয়ণ করতে হবে। তারপর আদালতের মাধ্যমে দত্তক নেওয়ার কাজ সম্পন্ন করা যাবে। আমরা সবাই মিলে এই প্রক্রিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছি।'
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. আনিসুর রহমান বলেন, 'ওই নারী ও তার চিকিৎসার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষ ছেড়ে দিয়ে তাদের সেবা চলছে। তবে বাথরুম ব্যবহারের বদলে ওই নারী বিছানাতেই মল-মূত্র ত্যাগ করায় সমস্যা হচ্ছে। আমরা সমাজসেবা অফিস, থানা ও প্রশাসনকে অবগত করেছি।'
এসএস/আরআর-১৩