শাল্লায় ভূমি বিরোধের জেরে আতঙ্কে নারী ও শিশুরা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


এপ্রিল ২৪, ২০২১
১২:০৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৪, ২০২১
১২:০৮ পূর্বাহ্ন



শাল্লায় ভূমি বিরোধের জেরে আতঙ্কে নারী ও শিশুরা

সুনামগঞ্জের শাল্লায় ভূমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক নিরীহ পরিবারের নারী ও শিশুরা আতঙ্কে আছেন। প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের ভয়ে পুরুষরা বাড়িছাড়া থাকায় তাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা করায় বাড়িতে এসে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে নারী ও শিশুদের। প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। এ ঘটনায় গত ২০ এপ্রিল শাল্লা থানায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

মামলার বিবরণ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শাল্লা উপজেলার শাল্লা গ্রামের মন্নান মিয়ার ছেলে সুজানুর মিয়া ও তার আত্মীয়-স্বজনরা একই গ্রামে তাদের প্রতিবেশী হারিছুজ্জামান মনু ও তার পরিবারকে নানাভাবে নির্যাতন করছে। বসতবাড়ি দখলের জের ধরে বেশ কয়েকবার মারধরও করেছে। জোরপূর্বক তারা হারিছুজ্জামান মনুর ভাই জামাল আহমদের ঘরের ছাদে পানি নিষ্কাশনের টিন বসিয়ে দিয়েছে। এতে বৃষ্টির পানিতে তার বসতঘর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া তাদের রেকর্ডীয় বসতবাড়ির জায়গা দখলেরও চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। লোকবল বেশি থাকায় প্রতিপক্ষ নানা ছুতোয় মনুর পরিবারকে হুমকি-ধমকিসহ নির্যাতন করে আসছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল নিজ বাড়িতে কাজ করা অবস্থায় মামলার বাদী হারিছুজ্জামান মনু ও তার পরিবারের সদস্যদের ঘরে ঢুকে মারধর ও নির্যাতন করেছেন সুজানুর ও তার লোকজন। সুজানুর মিয়ার নেতৃত্বে দেধীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কয়েকজন ঘরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। হারিছুজ্জামান মনুর চিৎকার শুনে তার ভাতিজা কামরুজ্জামান এগিয়ে এলে তাকেও রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। প্রতিপক্ষকে থামাতে চাইলে প্রতিবেশী দোকানদার ও প্রত্যক্ষদর্শী নজির মিয়া চৌধুরীও হামলাকারীদের হামলার শিকার হন। আহত হন হারিছুজ্জামানের ঘরের কাজে নিয়োজিত এক নির্মাণ শ্রমিক। তাদেরকে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। হামলার সময় ঘরের নারী ও শিশুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদেরকেও শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানান।

এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে পুলিশ মন্নান মিয়া নামক এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে এসে আবারও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলার পর ও আসামি জামিনে বেরিয়ে আসার পর প্রতিপক্ষের ভয়ে ওই পরিবারের দুইজন পুরুষ বাড়িছাড়া রয়েছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- সুজানুর মিয়া, জয়নাল মিয়া, মন্নান মিয়া, ছন্নান মিয়া, সোহাগ মিয়া, মিজানুর রহমান ও নবীনুর মিয়া।

ভুক্তভোগী পরিবারের ৭ বছর বয়সী শিশু নুসরাত জাহান মুনা বলে, 'আমি যাইতাছি বাজারে, আফসরের মা দৌড়াই ধরবার লাগি আইতাছে আমারে। আমি দৌড় দিয়া বাসায় ডুকছি। বারইলে আমারে খালি কুদায়। ঘর থাকি বাইর অইতে পারি না।'

প্রত্যক্ষদর্শী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'ওইদিন হঠাৎ দেখি সুজানুররা গ্যাঞ্জাম পাতছে, মারধর করতাছে। হামলা কইরা ভাঙচুর করছে। পরে আমি সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করি।'

মামলার বাদী হারিছুজ্জামান মনু বলেন, 'আমার পরিবারের নারী ও শিশুরা বের হতে পারছে না। আমরাও পলাইয়া পলাইয়া থাকি। দাঙ্গাবাজ লোকরা অস্ত্রশস্ত্র লইয়া আমাদেরকে প্রাণে মারার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এরা আমাদের বাড়িঘর দখল করে আমাদের এলাকাছাড়া করতে চায়।'

আর অভিযুক্ত সুজানুর মিয়া বলেন, 'হারিছুজ্জামান অনু ও তার পরিবারের লোকদের সঙ্গে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। সেদিন তারা আমাদের ওপর হামলা করলে আমাদের প্রতিরোধে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমরা কারও জায়গা দখল করিনি।'

শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আলম বলেন, 'মামলা দায়েরের পর আমরা এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছি। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।'

 

এসএস/আরআর-০৬