ঘরে উঠছে নতুন ধান, ব্যস্ত জগন্নাথপুরের কিষানিরা

আলী আহমদ, জগন্নাথপুর


এপ্রিল ২৯, ২০২১
১০:৩২ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৯, ২০২১
১০:৩২ অপরাহ্ন



ঘরে উঠছে নতুন ধান, ব্যস্ত জগন্নাথপুরের কিষানিরা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরগুলোতে চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় বৈশাখী উৎসব। আর এ বৈশাখী তুলতে  হাওরপাড়ের কৃষকদের সঙ্গে কিষানিরাও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ধান তুলতে কৃষকদের পাশে থেকে কিষানিরা কাজ করে যাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও হাওরপাড়ের কিষান-কিষানিরা জানান, একমাত্র বোরো ফসলের ওপর এ উপজেলার কৃষকরা নির্ভরশীল। বোরো ধান তুলতে পারলেই কৃষক পরিবারের সারা বছরের আহার জোগানোর পাশাপাশি বিয়ে-শাদি, ঘর নির্মাণ ও সংস্কার ইত্যাদি কাজ করতে পারেন তারা। আর বোরো ফসল ঘরে না উঠলে তাদের দুঃখ-কষ্টের শেষ থাকে না।

গত মঙ্গলবার নলুয়ার হাওরে কথা হয় দাসনোওয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কিষানি বিন্দু রানী দাসের সঙ্গে। তিনি নিজের কলেজপড়ুয়া মেয়ে স্বর্নালী দাসকে নিয়ে ধান শুকানোর কাজ করছিলেন। কাজের ফাঁকে বিন্দু রানী দাস জানান, বোরো ফসলের ওপর তাদের ছয় সদস্যের পরিবার নির্ভরশীল। এবার ১০ কেদার (৩০ শতাংশে এক কেদার) জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তারা খুশি।' আর মেয়ে স্বর্ণালী দাস জানান, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ। তাই মনের আনন্দে ধান তোলার কাজে কৃষক বাবা-মার পাশে থাকছেন তিনি।

নলুয়ার হাওরের গাদিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা সুলতানা বেগম বলেন, 'বৈশাখী এলে কৃষকরা ধান কেটে মাড়াই দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর ধানগুলো শুকিয়ে ঝাড়ি দিয়ে বস্তাবন্দি ও উগারে তোলার কাজ কিষানিদের করতে হয়। এবার প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় আমরা খুশি মনে ধান গোলায় তুলতে পারছি।'

নলুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য শান্তনা ইসলাম বলেন, 'হাওরপাড়ের ঘরে ঘরে এখন কৃষকদের পাশাপাশি কিষানিরা সমানতালে ধান তোলার কাজ করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিবারের কাজের পাশাপাশি ধান শুকানো ও সংরক্ষণের   কাজ করছেন তারা।'

হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুরের আহ্বায়ক সিরাজুল হক বলেন, 'এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি হাওরপাড়ের মানুষ। এর মধ্যে প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় হাসি-আনন্দে সোনার ধান গোলায় তুলছেন কৃষকরা।' 

জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, 'উপজেলায় এবার ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ধান তোলার কাজ চলছে। পুরুষের পাশে থেকে নারীরা ধান তোলার কাজ করায় দ্রুত ধান ঘরে উঠছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে।'

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা আক্তার বলেন, 'কৃষিকাজে এখন কৃষকের পাশাপাশি সমানতালে কিষানিরা কাজ করছেন। ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও বস্তাবন্দি করে সংরক্ষণ সব কাজে নারীরা পারদর্শী। হাওর ঘুরে ধান তোলার কাজে নারীদের কর্মচাঞ্চল্যতার আনন্দময় মুহূর্ত এখন দৃশ্যমান।'

 

এএ/আরআর-০১