দেওয়ান শামসুল আবেদিন
মে ১৪, ২০২১
০৭:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ১৪, ২০২১
০৭:৫০ অপরাহ্ন
জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো আর কখনও ফিরে আসবে না। পিছন ফিরে তাকালেই আমার হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে একে একে। বিশেষ করে শৈশবের ঈদের অমলিন আনন্দ এখনও হৃদয়ে রেখাপাত করে।
ঈদের আগের দিন থেকেই শুরু হতো ঈদের প্রস্তুতি। রাত থেকে শুরু হতো নানা পদের পিঠা-পায়েস বানানোর কাজ। আমরা নয় ভাই, পাঁচ বোন। আমাদের কাজের লোকই ছিল চৌদ্দ থেকে পনেরো জন। আমার দাদি, বাবা, আম্মা, সবার নতুন কাপড়-চোপড় আনা হতো। রাত থেকেই শুরু হতো পিঠা খাওয়া-খাওয়ি। আমার প্রিয় পিঠা ছিল খেজুর গুঁড়ের সন্দেস। দেশের অন্যান্য স্থানে যা ডোবা পিঠা হিসেবে খ্যাত।
ঈদ! তাই আগের দিন পড়তে বসার শাসন ছিল না। রাতে গল্পগুজব, খেলাধূলা আর হইচই করেই ১১টা থেকে ১২টা বেজে যেতো। তারপর ঘুম। সকালে উঠতে হবে। আমাদের ভাই-বোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল, কে কত সকালে গোসল করবে।
ছোটবেলায় আমরা জানতাম, ঈদের দিন ভোরে পবিত্র জমজম কূপের পানি নাকি প্রত্যেক পুকুরে আসে। তাই সেই কাক ডাকা ভোরে পুকুরে গিয়ে গোসলে নামতাম। গোসল করেই ঘরে এসে সবাই নতুন কাপড় পড়তাম। তারপর নতুন কাপড়ে প্রতীক্ষা করতাম ঈদের নামাজের। আমাদের সব ভাইয়েরা বাবার সঙ্গে নামাজে যেতাম মসজিদে। আমাদের বাড়ির সামইে ছিল মসজিদ। মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে হইহুল্লোড় করে ঘরে ফিরতাম। ঘরে এসেই দাদা, দাদি, বাবা, আম্মা, ফুফু, চাচাসহ গুরুজনদের সালাম করতাম। তারা দোয়া করতেন, সেলামিও দিতেন।
পরে সবাই মিলে ডাইনিং রুমে এসে বসতাম। আমাদের পরিবারের সবাই আমরা একসঙ্গে খেতাম। বড় টেবিল সাজানো থাকতো কোরমা-পোলাওসহ নানাবিধ মুখরোচক খাবার।
দুপুরে হইচই করে নতুন জামা গায়ে দিয়ে বের হতাম। যেতাম আমাদের নিকটাতœীয়দের বাড়িতে। বিকেলে আমাদের বাড়ির সামনে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ফুটবল খেলা হতো। এভাবেই ঈদের দিনের সূর্য পশ্চিম আকাশে হারিয়ে যেত।
এমনি করেই হইচই আর খেলাধূলার আনন্দঘন পরিবেশে কেটে যেত বিকেল। মসজিদ থেকে ভেসে আসত আজানের সমুধুর সুর আর শেষ হতো একটি বছরের প্রতীক্ষিত আনন্দময় ঈদের দিন। হায়! আর কি ফিরে আসবে আমার সেই হারিয়ে যাওয়া সোনার দিনগুলো।