মৌলভীবাজারে একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দির

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


অক্টোবর ১৯, ২০২১
০১:০৫ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৯, ২০২১
০১:০৫ পূর্বাহ্ন



মৌলভীবাজারে একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দির

এরইমধ্যে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ভূয়াই দুর্গা মণ্ডপে পূজা উদযাপনের দৃশ্যটা যেন একটু অন্যরকম ছিল। এখানে মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ এবং হিন্দুদের পূজা অর্চনার জন্য মণ্ডপ একই আঙ্গিনায় পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। 

একই আঙিনায় অবস্থিত মসজিদে ভোরে ফজরের সময় মোয়াজ্জিনের সুমিষ্ট কণ্ঠের আজান শেষে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে চলে যান। এরপর সকাল থেকেই মণ্ডপে শুরু হতো পূজা অর্চনা। এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বহন করে বহু বছর চলছে উপজেলার ভূয়াই জামে মসজিদ ও ভূয়াই দুর্গামণ্ডপ। 

জানা গেছে, আজানের সময় থেকে নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাক-ঢোলসহ যাবতীয় শব্দ বন্ধ থাকে। নামাজের প্রথম জামায়াত শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলাও হয় না। একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ। 

স্থানীয় মনিরুল ইসলাম জানান, জুড়ীতে ধর্মীয় সম্প্রীতির এটি একটি উদাহরণ। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই অনেক বছর ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় উৎসব পালন করছেন তারা। এটি তাদের জন্য অনেক বড় গর্বের বিষয়। 

ভ‚য়াই জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের একই আঙিনায় দুটি প্রতিষ্ঠান। এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ স্বাধীনভাবে ঘুরতে আসেন। আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখা হয়। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই অনেক বছর ধরে চলছে এ সম্প্রীতির বন্ধন।’ 

ভূয়াই জামে মসজিদের মুসল্লি মোস্তাকিম আহমদ বাবুল বলেন, ‘এখানে কোনো ধরনের বিভেদ ও ঝামেলা ছাড়াই হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন। দুর্গাপূজার সময়েও ঢাক-ঢোল নিয়ে কোনো সমস্যা হয় না। মসজিদ ও মণ্ডপ কমিটি সমন্বয় করে যার যার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করেন। 

ভূয়াই পূজা মণ্ডপের সভাপতি পিযুষ কান্তি দাস বলেন, ‘এখানে একটি টেবিলে নামাজের সময়সূচি রাখা আছে। নামাজের শুরু ও শেষ দেখে আমরা আমাদের পূজা উদযাপন করি। নামাজে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য আমরা সর্বদা সচেষ্ট আছি। আমাদের এখানে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে কোনো ধরনের বিভেদ নেই। আমরা মিলেমিশে যার যার ধর্ম পালন করছি।’

আরসি-১০