চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে হাফ ম্যারাথন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি


অক্টোবর ৩০, ২০২১
০৪:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ৩০, ২০২১
০৪:৩১ পূর্বাহ্ন



চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে হাফ ম্যারাথন

সকালের হালকা কুয়াশায় ঢাকা আকাশ। আবছা আলো, আবছা আঁধার। কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের রক্তিম রশ্মি যখন চায়ের দেশ মৌলভীবাজারকে রাঙিয়ে তুলবে ঠিক তখনই দেখা গেল মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র চত্বরে দাঁড়িয়ে আছেন দেশ-বিদেশের ছয় শতাধিক দৌড়বিদ। সুস্বাস্থ্যের জন্য এ হাফ মেরাথেনে মৌলভীবাজারের চা বাগান ও পাহাড়ি পথে দৌড়ালেন এই দৌড়বিদরা। 

শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটি ও রানার্স ক্লাবের আয়োজনে এবং মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতায় শুরু হয় ‘বেঙ্গল কনভেনশন হল হাফ ম্যারাথন ২০২১।’

সকাল সাড়ে ছয়টার আগেই ছয় শতাধিক অংশগ্রহণকারী নারী-পুরুষ মেয়র চত্বরে জড়ো হন। মেয়র চত্বরে তখন উৎসবের উচ্ছ্বাস। অনেক দিন পর অনেকের দেখা। প্রায় দুই বছর আগে একসঙ্গে এ রকম দৌড়ের একটা উৎসব-আনন্দ দিন কাটিয়েছিলেন তাঁদের অনেকে। মাঝখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণে স্থবির ছিল পুরো জীবনযাত্রাই। সেই স্থবিরতা ভেঙেছে আজকের দৌড়কে কেন্দ্র করে।

মৌলভীবাজার পৌর মেয়র চত্বর থেকে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে একসঙ্গে ২১ কিলোমিটার এবং ১০ কিলোমিটার দূরত্বের হাফ ম্যারাথন শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যারাথন উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা রহমান, কবি-সংগঠক সৈয়দ মোসাহিদ আহমদ, বেঙ্গল কনভেশন হলের পরিচালক সৈয়দ মুনিম আহমদ প্রমুখ।

১০ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক সড়ক হয়ে দেওড়াছড়া চা বাগানের ভেতর ‘একাত্তর বধ্যভ‚মি’ হয়ে মৌলভীবাজার জেলা স্টেডিয়ামে আসে।  আর ২১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন বর্ষিজোড়া ইকোপার্কা সড়ক হয়ে দেওড়াছড়া চা বাগান পাড়ি দিয়ে ‘ছয়সিড়ি দিঘি’ হয়ে মৌলভীবাজার স্টেডিয়ামে আসে।

বধ্যভ‚মি ও ছয়ছিড়ি দিঘির ইউটার্ন পাড়ি দেওয়া প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর হাতে বেল্ট পরিয়ে দেওয়া হয়। রানাররা চা বাগান ও পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছান।

পরে দু’টি গ্রুপে ১০ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথনে তিনজন নারী ও তিনজন পুরুষ এবং ২১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথনে তিনজন নারী ও তিনজনপুরুষকে পুরস্কার তুলে দেন পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান।  

আয়োজকরা জনান, ১০ কিলোমিটার ম্যারাথনে (পুরুষ) রংপুরের সাজ্জাদ হোসেন স্নিগ্ধা প্রথম হন। তাঁর ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সময় লাগে ৩৮ মিনিট। ১০ কিলোমিটার ম্যারাথনে (নারী) সিলেটের নাছরিন বেগম প্রথম হন। ১০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে নাসরিনের সময় লাগে ৫৫ মিনিট।

২১ কিলোমিটার ম্যারাথন (পুরুষ) নৌবাহীনীর সদস্য আসিব বিশ্বাস প্রথম হন। তিনি ১ ঘণ্টা ১৭ মিনিটে ২১ কিলোমিটার পাড়ি দেন। ২১ কিলোমিটার ম্যারাথন (নারী) বগুড়ার মৌসুমি আক্তার এপি প্রথম হন। ২১ কিলোমিটার পাড়ি দিতে তাঁর সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৩ মিনিট।

১০ কিলোমিটার পথ ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ও ২১ কিলোমিটার পথ ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মধ্যে যে সকল রানার পৌঁছান তাদের সকলকে মৌলভীবাজার জেলা ব্রান্ডিং ‘চা কন্যা’ ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

ম্যারাথনে অংশ নেওয়া চট্টগ্রামের নৃপেন চৌধুরী (৭১) বলেন, ‘ম্যারাথনে অংশ নিয়ে খুব ভালো লেগেছে। খুব উপভোগ করেছি। ২০১৬ থেকে দেশে-বিদেশে ৫৪টি ইভেন্টে অংশ নিয়েছি। আমি মৌলভীবাজার আবার আসতে চাই।’

হাফ ম্যারাথন আয়োজকদের একজন চিকিৎসক সঞ্জীব মীতৈ বলেন, ‘এবারের হাফ ম্যারাথনে ২১ কিলোমিটার ও ১০ কিলোমিটার এ দুই ক্যাটাগরির দূরত্বের দৌড় অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনের উদ্দেশ্য দৌড়ের মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ থাকার বার্তা দেওয়া। পাশাপাশি মৌলভীবাজারের চা-বাগানসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবার কাছে উপস্থাপন করা। আমরা এর আগেও বিভিন্ন ধরনের আয়োজন করেছি। আশা করি সামনের দিনগুলোতে এই ধারা অব্যাহত রাখব।’

আয়োজকেরা বলেন, ‘চায়ের জেলা হিসেবে এবার মেডেলের থিম করা হয়েছে ‘চা-কন্যা’। এই আয়োজনের মাধ্যমে জেলাবাসী স্বাস্থ্যসচেতন ও দৌড়ের প্রতি আগ্রহী হবে।’

এসএইচ/বিএ/আরসি-০২