অযৌক্তিক দাবির ধর্মঘটে সিলেটে জনভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক


নভেম্বর ২৩, ২০২১
১০:৪৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ২৩, ২০২১
১০:৪৯ পূর্বাহ্ন



অযৌক্তিক দাবির ধর্মঘটে সিলেটে জনভোগান্তি
# হেটে কেন্দ্রে এসেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা

নগরে উচ্ছেদকৃত অবৈধ স্ট্যান্ড পুনঃস্থাপনসহ অযৌক্তিক বিভিন্ন দাবিতে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে সিলেটে চরম জনভোগান্তি হয়েছে। ধর্মঘটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে মাত্র কয়েকদিন আগে ধর্মঘট পালনের পর আবারও ধর্মঘট মড়ার উপর খাড়ার ঘা।  

পাঁচদফা দাবিতে সোমবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে সিলেট বিভাগে কর্মবিরতির ডাক দেন পরিবহন শ্রমিকরা। কিন্তু ভোর থেকেই তারা নগরের মোড়ে মোড়ে বিশেষ করে নগরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা দেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় বিআরটিসির কিছু বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশা চললেও বন্ধ ছিল বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস-ট্রাক-সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সবধরনের গণপরিবহন। ধর্মঘটে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে পায়ে হেটে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয়। 

সোমবার নগরের চন্ডীপুল, হুমায়ুন রশিদ চত্বরসহ নগরের বিভিন্ন প্রবেশমুখ ঘুরে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে আসেন। স্ট্যান্ডে এসে ধর্মঘটের খবর শুনে বিপাকে পড়েন তারা। বাধ্য হয়ে অনেকে বাসায় ফেরত যান। বিআরটিসির পর্যাপ্ত বাস না থাকায় গাড়ির জন্য অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা যায়। 

সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ থাকায় গতকাল সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। কেউ কেউ রিকশা-মোটরসাইকেলে করে কেন্দ্রে আসেন। অনেককেই হেটে আসতে হয়। কিছু পরীক্ষার্থী অটোরিকশা রিজার্ভ করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কেন্দ্রে এলেও পথে পথে পরিবহন শ্রমিকাদের বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। 

নগরের অগ্রগ্রামী স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরীক্ষাকেন্দ্রে সন্তানকে নিয়ে আসেন দীপা দাস। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘ধর্মঘটের কথা আগে জানতাম না। সকালে বের হয়ে শুনতে পাই ধর্মঘট। ফলে বাগবাড়ি এলাকা থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত হেটে আসতে হয়েছে। পরে এখান থেকে রিকশা নিয়ে কেন্দ্রে এসেছি। অনেক পরীক্ষার্থী যানবাহন না পেয়ে বিপদে পড়েছে। বাচ্চাদের পরীক্ষার সময় কীভাবে এ ধরনের অবিবেচক কাজ করা হয় বুঝতে পারি না।’

বাস-মিনিবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ থাকায় রাস্তায় যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে মোটরসাইকেল চালকদের। অন্যান্য যানবাহনের মতো ভাড়ার চুক্তি করে চলেছে এসব মোটরসাইকেল। তবে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হয়েছে কয়েকগুণ বেশি। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছেন অনেকে।

হবিগঞ্জ যেতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন মো. হিরন মিয়া। সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত তিনি কোনো যানবাহন পাননি। এ সময় তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘হবিগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশে সকাল ৬টায় এখানে এসেছি। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। মাঝেমধ্যে দুই একটি মাইক্রোবাস পেলেও শ্রমিকরা গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। মোটরসাইকেল চললেও ভাড়া চাইছে পাঁচগুনের বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে কিছুদিন পরপর এমন বিড়ম্বনা লেগেই থাকে। ধনীরা তাদের গাড়ি নিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু আমরা কী করব?’

একই এলাকায় ষাটোর্ধ্ব মাকে নিয়ে তিনঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘খুব জরুরি কাজে মৌলভীবাজারে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এসে জানতে পারি ধর্মঘট চলছে। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে কয়েকঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না।’

প্রসঙ্গত, সিলেট জেলা অটোটেম্পু, অটোরিকশা চালক শ্রমিক জোটের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা, ‘প্রহসনের নির্বাচন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘোষিত কমিটি’ বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবত আদায়কৃত লাখ লাখ টাকা ফেরত প্রদান এবং সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ পরিচালককে প্রত্যাহার, সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসমূহ প্রত্যাহার, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সব প্রকার হয়রানি বন্ধ, মেয়াদোত্তীর্ণ শেরপুর সেতু, শেওলা সেতু, লামাকাজী সেতু, শাহপরাণ সেতু ও ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু থেকে টোল আদায় বন্ধ এবং চৌহাট্টাসহ নগরের বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশাসহ ছোট গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থার দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটি।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজীব আলী সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলমান রয়েছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করছেন। সোমবার রাতে বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে একটি সভা রয়েছে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত হবে সে আলোকে পরবর্তী কর্মসূচি চলবে।’

এনএইচ/আরসি-০৫