ঘটনাবহুল ম্যাচে সিলেট হারল ১৫ রানে

রাফিদ চৌধুরী


ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
১২:১৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
০৩:৪১ পূর্বাহ্ন



ঘটনাবহুল ম্যাচে সিলেট হারল ১৫ রানে

সিলেটে দর্শক শূন্য স্টেডিয়ামে এবারই প্রথম দেশের সব তারকা ক্রিকেটাররা খেলেতে নেমেছেন। তবে সিলেট দলে অলক কাপালি ছাড়া সিলেটের স্থানীয় আর কোনো খেলোয়াড় নেই। তাই স্থানীয় দর্শকদেরও আগ্রহের মাঝে তেমন একটা নেই সানরাইজার্স। তবুও অলক কাপালি থাকায় মাঠের পশ্চিম পাশের উচু টিলায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় কিছু ক্রীড়া পাগল দর্শক খেলা দেখেছেন। তবে হতাশ হয়েই তাদের ফিরতে হয়েছে। খুলনা টাইগার্সের ১৮২ রানের বিপরীতে ১৬৭ রানেই থেমে যায় সিলেটের ইনিংস। 

ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল অধিনায়ক বিতর্ক দিয়ে। সেই রেশ কাটতে না কাটতে নতুন অধিনায়ক রবি বোপারা বল টেম্পারিং! নিয়মিত পারফরমার নাজমুল অপুকে বোলিং না দেওয়া। অলক কাপালিকে দিয়ে তার ঘরের মাঠে চেষ্টা না করানো নিয়ে ছিল বিতর্কিত একদিন। বিপিএলের সিলেট পর্বের প্রথম দিনেই ঘটে গেল এত কিছু। ফল দিন শেষে সিলেটকে ১৫ রানের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। 

যদিও টস ভাগ্যে জিতে নিয়েছিল সিলেট সানরাইজার্স। জিতেই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক রবি বোপারা। সিলেট শুরুটাও করেছিল দারুণ। সোহাগ গাজীর করা প্রথম ওভারেই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচারসহ অলরাউন্ডার মাহেদী হাসানকে হারায় খুলনা। দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর চাপ সামলে নেন ইয়াসির রাব্বি। নেমেই তিনি খেলতে থাকেন মারমুখী ভঙ্গিতে। দ্রুতই মারেন কয়েকটি বাউন্ডারি। তবে বিপিএলে অভিষিক্ত পেসার একেএস স্বাধীনের বল বুঝতে না পেরে ১৮ বলে ২৩ রান করে ফিরে যান তিনিও। 

পাওয়ার প্লের সময়েই ৪৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসে খুলনা। ব্যাটারদের এই যাওয়া আসার মিছিলের অন্য প্রান্ত ঠিকই আগলে রেখেছিলেন সৌম্য সরকার। চতুর্থ উইকেট জুটিতে সঙ্গী হিসেবে পান অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে। এরপরই যেন পালটে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। দুজনের ব্যাট যেন হঠাৎসই হেসে উঠে। সৌম্যের দেখেশুনে মারকুঠে শট আর মুশফিকের ধুন্ধুমার চার ছয়ে যেন মুখরিত হয়ে উঠে সিলেট স্টেডিয়াম। 

শেষ পর্যন্ত আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৮২ রানে গিয়ে থামে খুলনা। চার ৪ ও চার ছক্কায় ৬২ বলে ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন সৌম্য সরকার। অন্যদিকে অধিনায়ক মুশফিক ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৩৮ বলে ৬২ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। সিলেটের হয়ে সোহাগ গাজী ও অভিষিক্ত স্বাধীন নেন একটি করে উইকেট। অন্যটি ছিল রানআউট। 

১৮৩ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুটা খারাপ হয়নি সিলেটের। লেন্ডেল সিমন্সকে সঙ্গে নিয়ে আনামুল খেলতে থাকেন মারমুখী। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম তার অচেনা নয়। এই মাঠে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস কাপ টি-টুয়েন্টিতে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ৬৩ বলে ১০৫ রান করেছিলেন। ঘরোয়া লিগের ম্যাচ খেলতেও নিয়মিত আসা হয় সিলেটে। তাই চেনা এই উইকেটে মারকুঠে ব্যাটসম্যানের ভূমিকাতেই ছিলেন তিনি। তবে অন্যপ্রান্তে সিমন্স ছিলেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিমায়। ১৭ বলে ১ চার মেরে মাত্র ১০ রান করেই ফিরে যান তিনি। 

সিমন্সের বিদায়ের পরও থামেনি আনামুলের ব্যাট। কলিন ইনগ্রামকে সঙ্গে নিয়ে সচল রাখেন রানের চাকা। তবে অর্ধশতকের কাছে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। মাত্র তিন রান দূরে থাকতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। ৩ ছক্কা ও ৩ চারের মারে ৩৩ বলে ৪৭ রানটি সিলেট সানরাইজার্সের এদিন ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। আনামুলের বিদায়ের পর একে একে বিদায় নেন মিঠুন ও রবি বোপারা। মোসাদ্দেককে সঙ্গে নিয়ে কলিন ইনগ্রাম একটা চেষ্টা করেছিলেন। তবে ব্যক্তিগত ৩৭ রান করে তিনিও ফিরে যান। এরপর ৪ বলের বেশি টিকতে পারেননি সানরাইজার্সের লোকাল বয় অলক কাপালি।

অলক যখন ফিরে যান তখন বাকি আর ১১ বল। জয়ের জন্য প্রয়োজন তখনও ৪৭। বিপিএলে মানদণ্ডে যা অসাধ্য। তবে সে অসাধ্য সাধনের ক্ষীণ চেষ্টা করেছিলেন আলাউদ্দিন বাবু। শেষদিকে ঝড় তুলে তিনি ৭ বলে ৩ ছয় ও ১ চারে সংগ্রহ করেন ২৫ রান। তবে শেষ চেষ্টা হয়নি। তার আগেই ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছিল। ফলে ১৫ রানের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে সানরাইজার্স।

খুলনার হয়ে থিসারা পেরেরা ও সৌম্য সরকার শিকার করেন ‍দুটি করে উইকেট। এছাড়া খুলনায় হয়ে খেলা দুই সিলেটি নাবিল সামাদ ও খালেদ আহমদ নেন একটি করে উইকেট।

শেষ দিকে ম্যাচে উত্তেজনার পারদ ছড়ালেও দিনের শুরুটা বিতর্ক দিয়ে হওয়ায় প্রশ্ন কিছু থেকেই যায়। বল টেম্পারিংয়ের দায়ে সিলেটকে ৫ রানের পেনাল্টি পেতে হয়েছে। তবে বড় শাস্তি ঝুলে আছে এখনও। অন্যদিকে দলের নিয়মিত পারফরমার নাজমুল অপুকে বোলিংয়ে না পাঠানোও ছিল একটা বিস্ময়ের বিষয়। 

এএন-০১