সুরক্ষা বলয়েও ভাঙেনি সিলেটের দর্শকদের উচ্ছাস

ক্রীড়া প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
০২:৩৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২২
০৩:২৪ পূর্বাহ্ন



সুরক্ষা বলয়েও ভাঙেনি সিলেটের দর্শকদের উচ্ছাস

সিলেটের মাঠে খেলা মানে গ্যালারি দর্শকে পরিপূর্ণ। টিকেটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইন। আট-নয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কেউ পান সোনার হরিণ টিকেট, কেউবা ফিরেন খালি হাতে। ক্রিকেট মানেই এখানে বিরামহীন ‍উচ্ছ্বাস। তবে এবার সিলেটের মাঠে রাখা হয়নি দর্শক প্রবেশ সুবিধা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে জৈব সুরক্ষা বলয় বজায় রাখতে সারা দেশের মতো সিলেটের গ্যালারীও দর্শকবিহীন। তবে ক্রীড়া পাগল সিলেটের দর্শক উন্মাদনা যে দমিয়ে রাখা কঠিন তা দেখা গেল গতকাল। খেলা উপভোগ করতে মাঠের পশ্চিম দিকে লাক্কাতুরা চা বাগানের টিলা বেয়ে উঠলেন উৎসুক দর্শকদের কেউ কেউ। আরেকটু ভালো দেখতে অনেকে চড়ে বসলেন গাছে। 

ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা দেড়টা ছুঁই ছুঁই। স্টেডিয়ামের পাশের ঐ টিলাতে কয়েকজনকে এসে দাঁড়াতে দেখা গেল। তাদের সবাই বয়সে কিশোর। স্কুলের গণ্ডি পেরুননি হয়তো তাদের অনেকে। নগরের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহাগ আহমেদ। পাশ্ববর্তী পশ্চিম পীরমহল্লায় বাসা। শীতের মধ্যদুপুরে রোদে ঝাঁজ নেই। রোদ গায়ে মেখে তাই তিনি টিলা বেয়ে উঠেছেন প্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের খেলা দেখতে।  সাকিব এবার খেলছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। দলটির অধিনায়কও তিনি। কথায় কথায় সোহাগ জানালেন-তার গ্রামের বাড়িও বরিশালে।

সিলেট মিরর অনলাইনকে তিনি বলেন, বিপিএলে এবার বরিশালের টিমে সাকিব খেলায় আমি খুব খুশি। কারণ আমার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। বাবা এখানে বাগানের ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। তাই পরিবারের সঙ্গে থাকি। আজ বরিশালের খেলা থাকায় দেখতে এসেছি। আরও এসেছি প্রিয় খেলোয়াড় সাকিবকে দেখতে। 

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নিকটবর্তী এলাকাগুলোর কয়েকটি হলো পশ্চিম পীরমহল্লা, বাদামবাগিচা ও লাক্কাতুরা চা বাগান। বরিশাল, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষরা আসেন এই চা বাগানে কাজের আশায়। অনেকেই থেকে যান বাগানে, কেউ বা আবার বাগান ছেড়ে অন্যত্র এসে কাজ করেন। এসময় অনেকেই বাগান ছেড়ে বসত গাড়েন এসব এলাকায়।

সোহাগের বাবা বাগানে থেকে গেলেও থাকেননি তার বন্ধু হাসানের বাবা। তার বাবা এখন স্থানীয় বাজারে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা খুলেছেন। আলাপকালে জানায় কুমিল্লার দেবিদ্বার এলাকায় তাদের গ্রামের বাড়ি। সাকিবের বরিশালের বিপক্ষে এদিন খেলা ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। তবে বাড়ি কুমিল্লা হলেও হাসান মূলত এসেছেন সাকিব আল হাসানের খেলা নিজ চোখে দেখতে।

সিলেট মিররের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কুমিল্লার খেলা ছিল কি না জানতাম না। এখানে এসে দেখেছি। তবে আমি এসেছি সাকিবকে দেখতে। তার দল জিতলেই আমি খুশি। 

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের সংখ্যা। কেউ কেউ খেলা দেখেছেন শুধু চোখের তৃপ্তি জোড়োতে। কেউ কেউ আবার সাকিবের ভক্ত হিসেবে। শেষপর্যন্ত সাকিবের দল ৩২ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও জিতে নিয়েছেন বরিশাল অধিনায়ক সাকিব। 

শুধুমাত্র বরিশাল কুমিল্লার ম্যাচেই না। বিকেল গড়াতেই মাঠে নামে গ্রাউন্ডের স্থানীয় দল খ্যাত সিলেট সানরাইজার্স ও খুলনা টাইগার্স। সেই ম্যাচটি দেখতেও দর্শকদের উৎসাহের খামতি ছিল না। অন্ধকারের মধ্যেও টিলা বেয়ে অনেকে উপরে উঠেছেন। অলক কাপালি ছাড়া সিলেটের আর কোনো খেলোয়াড় দলে নেই। এ নিয়ে স্থানীয় সিংহভাগ দর্শকের আক্ষেপেরও শেষ নেই। তবুও সিলেট সানরাইজার্সের ম্যাচে উৎসুক দর্শকদের আগ্রহ কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। 

উৎসুক দর্শকদের অনেকেই টিলা থেকে ভালোভাবে দেখতে না পেয়ে গাছের ডালে বসে খেলা দেখেছেন। কারণ প্রতিপক্ষ দলে আছেন সিলেটের দুই খেলোয়াড় নাবিল সামাদ ও খালেদ আহমদ। খুলনা দলের এই দুই সিলেটি উইকেট নিয়ে এসব দর্শকদের আনন্দে ভাসালেও সিলেট হতাশ করেছে। শেষ দিকে উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচটি তারা হেরেছে ১৫ রানে।

আরসি-০৪