সাকিবকে নিয়ে যা বললো আনন্দবাজার

খেলা ডেস্ক


মার্চ ২৬, ২০২২
১১:১২ অপরাহ্ন


আপডেট : মার্চ ২৬, ২০২২
১১:১৫ অপরাহ্ন



সাকিবকে নিয়ে যা বললো আনন্দবাজার

আইপিএলের শুরু আর বাংলাদেশ-সাউথ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজ একই সময়ে পড়েছে। মার্চ মাসের শুরুর দিকে সাকিব আল হাসান দুবাই যাওয়ার আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সাউথ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার মতো মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় তিনি নেই। তার আগেই অবশ্য টেস্ট খেলা, না খেলা নিয়ে দোলাচলের কথা জানিয়েছিলেন সাকিব, চেয়েছিলেন খানিকটা বিরতিও। নানা কথা চালাচালির পর বিসিবিও সাকিবকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অনানুষ্ঠানিক ছুটি দিয়েছিল।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন অবশ্য সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিলে, ‘সাকিবের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা ভালো না থাকলে আইপিএলে খেলতে চেয়েছিলেন কেনো?’ দুই পক্ষের এই দ্বান্দ্বিক অবস্থার সমাধান হয় পাপনের সঙ্গে সাকিবের বৈঠকে। দক্ষিণ আফ্রিকা খেলতে উড়াল দেন সাকিব। সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ঐতিহাসিক ওয়ানডে জয়ে সাকিব লড়েছেন সামনে থেকে। ৭৭ রানের একটা দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। শেষ ওয়ানডেতেও বল হাতে সাকিব নিয়েছেন দুই উইকেট।

সাকিবের সাম্প্রতিক নানা কাণ্ড নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে ভারতের প্রভাবশালী বাংলা গণমাধ্যম আনন্দবাজার বলেছে, ‘নিন্দুকরা আওয়াজ তুলতে শুরু করেন। তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। অনেকে বলেন দেশ নয়, ক্লাবের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলাতেই বেশি মন শাকিবের।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘শাকিব কি নিজের মর্জিতে চলেন? নিজের ইচ্ছা হলে খেলেন, আবার ইচ্ছা না হলে খেলেন না? দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে এই ঘটনাই তো প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় শাকিব নিজের মর্জি মতো চলেছেন। ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়েও আইসিসিকে জানাননি। এর ফলে এক বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন তিনি। কখনও সিরিজ শুরুর আগে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি দেশের সেরা ক্রিকেটার, সেটাই যেন ডাঁটের সঙ্গে বার বার বুঝিয়ে দেন শাকিব।’

সাকিবের ক্রিকেট মেধার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, ‘হ্যাঁ, তিনি দেশের সেরা ক্রিকেটার। টেস্ট ক্রিকেটে আইসিসির অলরাউন্ডারদের ক্রমতালিকায় শাকিব চতুর্থ। এক দিনের ক্রিকেটে এক নম্বর। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দু’নম্বর। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আর কোনও ক্রিকেটার তিন ধরনের ক্রিকেটে আইসিসি-র ক্রমতালিকায় প্রথম দশেও নেই। মেহেদি হাসান শুধু মাত্র এক দিনের ক্রিকেটে রয়েছেন। তাও অষ্টম স্থানে। শাকিব সেখানে শীর্ষে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেও তিনি সেরা কি না তা নিয়েও চর্চা হতে পারে।’

আনন্দবাজার-এর দাবি, সব সমালোচনার যোগ্য জবাব দিয়েছেন সাকিব। নিজস্ব প্রতিবেদকের নামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সেই শাকিব সমস্ত নিন্দার ঝড়কে ছুড়ে ফেলেন আফ্রিকার জঙ্গলে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম এক দিনের ম্যাচে ৬৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলেন। জেতে বাংলাদেশ। ম্যাচের সেরা হন শাকিব। পরের ম্যাচে শাকিব শূন্য করেন। বাংলাদেশ ম্যাচ হারে। পরের ম্যাচে বল হাতে দু’টি উইকেট এবং ১৮ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের। সদ্য ভারত যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে সিরিজ হেরে ফিরেছিল, সেখানে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।’

আনন্দবাজার-এর প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ছিল সাকিবের ‘দেশপ্রেম’ প্রমাণ করার মঞ্চ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এই সিরিজ জেতা বাংলাদেশের কাছে ঐতিহাসিক, আর সাকিবের কাছে দেশ প্রেম প্রমাণ করার মঞ্চ। সিরিজ তখন ১-১। শেষ এক দিনের ম্যাচেই হবে সিরিজের ফয়সালা। এমন সময় শাকিবের পরিবারের একাধিক সদস্য অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি তাঁর সন্তান। এমন অবস্থাতেও ম্যাচ খেলতে রাজি শাকিব। দেশকে জিতিয়ে তবেই দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়েন তিনি।’ 

সব হিসেবের পরও আনন্দবাজারের মনে আছে একটা প্রশ্ন, ‘বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের সঙ্গে এক আসনে বসানো হয় শাকিবকে। তাঁর তুলনা করা হয় গ্যারি সোবার্স, কপিল দেব, ইয়ান বোথাম, ইমরান খানদের সঙ্গে। নিজেকে সেই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন সাকিব। তাই কী মাঝে মধ্যে তাঁর নায়কোচিত মর্জি সহ্য করতে হয় বাংলাদেশ বোর্ডকে?’


এএফ/০৪