বাঙালি সংস্কৃতিতে জিলাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ০৭, ২০২২
১২:০৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৭, ২০২২
১২:০৯ পূর্বাহ্ন



বাঙালি সংস্কৃতিতে জিলাপি

ভেতরটা রসে টইটুম্বুর। আর বাইরের অংশটি মচমচে। স্বাদ যেন অমৃত! এটাই জিলাপি। মধ্যপ্রাচ্যের এই ‘মিষ্টান্ন’ এখন আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম একটি অংশ। রোজায় যার চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণ।

দুধ, ছানা ইত্যাদি ছাড়া যে মিষ্টিগুলো আমাদের দেশে তৈরি হয়, তার মধ্যে জিলাপি অন্যতম। বিশেষত রমজান মাসে ইফতারের সময় ভাজাভুজি ও ঝালের সঙ্গে এই খাবার দিয়ে মিষ্টিমুখ করতে পছন্দ করেন রোজাদারেরা। ফলে এ মাসে জিলাপির চাহিতা থাকে ব্যাপক।

ইফতার ছাড়াও গ্রাম কিংবা শহর সর্বত্রই বিভিন্ন উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল বা দোয়া খায়ের শেষে মিষ্টি বিতরণের যে রেওয়াজ, তাতেও জিলাপির স্থান সবার ওপরে। গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে বা মেলার দোকানে সদ্য ভেজে তোলা আখের গুড়ের রসে ডোবানো গরম-গরম জিলাপির স্বাদ নিতে ক্রেতাদের জটলা খুব চেনা দৃশ্য। গুড় ও চিনি উভয়ের রসেই জিলাপি তৈরি করা হয়। সে কারণে দামেও বিস্তর তফাৎ।

শহরাঞ্চলে অবশ্য গুড়ের জিলাপি তেমন পাওয়া যায় না। এখানে চিনির রসের তৈরি জিলাপিই জনপ্রিয়।

জিলাপির ইতিহাস অনেক পুরোনো। এর সর্বাধিক পুরোনো লিখিত বর্ণনা পাওয়া যায় মুহম্মদ বিন হাসান আল বোগদাদীর লিখিত ১৩শ শতাব্দীর রান্নার বইতে, যদিও মিসরের ইহুদিরা এর আগেই খাবারটি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিল। ইরানে এটি মিষ্টান্ন জেলেবিয়া নামে পরিচিত, যা সাধারণত রমজান মাসে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমানরা জিলাপি নিয়ে আসেন। মধ্যযুগে পারসি ভাষাভাষী তুর্কিরা খাবারটিকে ভারতবর্ষে নিয়ে আসেন। ১৫শ শতকের ভারতে জিলাপিকে ‘কুন্ডলিকা’ বা ‘জলবল্লিকা’ বলা হত। ১৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সংস্কৃত ভাষায় রচিত গ্রন্থ গুণ্যগুণবধিনীতে জিলাপি প্রস্তুত করার জন্য যে উপাদানের তালিকা পাওয়া যায়, তার সঙ্গে আধুনিক জিলাপি রন্ধনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে। প্রাচীন ভারতের সেই কুন্ডলিকা বা জলবল্লিকা থেকে এটি জিলাবি বা জালেবি নামে পরিচিতি পায়, বাঙালিদের কাছে এসে হয় জিলাপি।
এদিকে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের এই জিলিপির ইতিহাসের সম্পর্ক আছে। এই মিষ্টি সম্রাট জাহাঙ্গীরকে এতটাই প্রভাবিত করেছিল এবং তার এতই প্রিয় মিষ্টান্ন ছিল যে তিনি নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে এই জিলিপির নতুন নাম রাখেন ‘জাহাঙ্গীরা’।
জিলাপির আকার-প্রকারও বেশ বৈচিত্রময়। আড়াই প্যাঁচের সরু জিলাপি যেমন আছে, তেমনি আছে বড় বড় স্বাস্থ্যবান জিলাপি। রেসিপি এক হলেও সরু জিলাপির দাম একটু বেশি। সিলেটের বিভিন্ন ইফতারি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সরু জিলাপি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। আর বড় জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে।

এ ছাড়া যেকোনো আকারের একেকটি জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকায়। এসব জিলাপি ছাড়াও চালের গুঁড়া, বেসন ও ময়দার সঙ্গে খাঁটি জাফরান এবং ঘি ব্যবহার করে স্পেশাল জিলাপি ও এক থেকে দেড় কেজি ওজনের শাহী জিলাপির চাহিদাও রয়েছে দেশজুড়ে।

আরএম-০৫