জেলা পরিষদ নির্বাচন আজ: সিসিটিভিতে চোখ ইসির

সিলেট মিরর ডেস্ক


অক্টোবর ১৭, ২০২২
০৪:৫২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০২২
০৪:৫২ পূর্বাহ্ন



জেলা পরিষদ নির্বাচন আজ: সিসিটিভিতে চোখ ইসির

গাইবান্ধার উপনির্বাচনের পর এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রেও সিসিটিভি স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসিটিভি, যার মাধ্যমে নির্বাচন সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবে কমিশন। এ নির্বাচনে প্রতি জেলায় গড় ভোটার এক হাজার ৬৭ জন, ভোটের মাঠে নেই বিএনপি। তারপরও অনিয়ম-কারচুপি ঠেকাতে কেন সিসিটিভি ব্যবহার করা হচ্ছে  তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আগের নির্বাচনের তুলনায় এবার জেলা পরিষদে প্রার্থী ও ভোটার কম, তবে ভোটের মাঠে উত্তাপ বেশি। নির্বাচনে আজ ৫৭ জেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।  

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, নির্বাচনে পেশিশক্তির ব্যবহার, টাকার ছড়াছড়ি, সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ভোট কেনাসহ নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আছে, সেগুলোর দিকে নির্বাচন কমিশনের নজর বেশি দেওয়া উচিত ছিল। অল্পসংখ্যক ভোটারকে পর্যবেক্ষণ করলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে হলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ও বিবেচনায় আনতে হবে।  

সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, শুধু গোপন কক্ষে ইভিএমএ অন্য কেউ বোতাম টিপে ভোট দেওয়াটাই অনিয়ম নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেই পরিবেশ তৈরি করতে হলে অনেক অনিয়ম রোধ করতে হবে। জেলা পরিষদের নির্বাচনে যেখানে জনপ্রতিনিধিরাই ভোটার এবং ভোটাররা সবাই পরিচিত, সেখানে সিসিটিভি বসানো খুব বেশি কার্যকর নয়। তিনি বলেন, হুমকি-ধমকি দিয়ে চাপে রাখা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেনা—এসব তো সিসিটিভির আওতায় আনা সম্ভব নয়।  

ভোটের প্রস্তুতি জানাতে গিয়ে গতকাল কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সিসিটিভির প্রচলনটা সাম্প্রতিক। আমরা এটার মাধ্যমে এখান থেকে নির্বাচন মনিটর করতে পারি। এটা একটি ভালো দিক। আমাদের তো কোনো পক্ষ নেই। আমরা চাই ভোটাররা যেন তাঁদের ভোটটা দিতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সিসিটিভির ব্যবহার করছি। ’ প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। আমরা আমাদের কাজ করছি। ’ 

এর আগে নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, ভোটাররা মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছিল, সেগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন আনা হয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের মতোই ভোট হবে। সিসিটিভিতে নির্বাচন সরাসরি মনিটর করবে কমিশন।

গত বুধবার গাইবান্ধায় সিসিটিভিতে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র দেখে মাঝপথে ভোট বন্ধ করে নানামুখী আলোচনায় আছে নির্বাচন কমিশন।  

এ নির্বাচনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ২৭ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৬৯ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯ জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই শুধু এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ফেনী ও ভোলায় চেয়ারম্যান ও সদস্য সবাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। এ ছাড়া আইনি জটিলতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।

নির্বাচনে ৯৪ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ভোটগ্রহণের আগে দুই দিন, ভোটগ্রহণের দিন ও ভোটগ্রহণের পরের দিন দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্বাচনে মোট ভোটার ৬০ হাজার ৮৬৬ জন। দেশের ৬১টি জেলার স্থানীয় সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠানের (সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে এই ভোটার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড সদস্য পদ ৪৪৮টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদ ১৬৬টি। চেয়ারম্যান পদ রয়েছে ৫৭টি। সারা দেশে ৪৬২টি ভোটকেন্দ্রের ৯২৫টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি বসানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গছে, গড়ে একটি জেলার ভোটার এক হাজার ৫৬ জন। মাগুরা, জয়পুরহাট ও ঝালকাঠিতে ভোটার সংখ্যা পাঁচ শর কম। চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭৩১ জন ভোটার।  


ভোটের আগের দিন আওয়ামী লীগের মতবিনিময়সভা

নির্বাচনকে সামনে রেখে গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ফরিদপুর এসেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে মতবিনিময়ও করেন। নেতাদের দাবি, মতবিনিময়ের কারণে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়নি।  

গতকাল ফরিদপুর সদরের বদরপুরে ব্র্যাকের লার্নিং সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর পৌনে ২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলে। এতে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফারুক হোসেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। পরিচালনা করেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক। নানক ও নাছিম দলীয় নেতাকর্মীদের ফারুক হোসেনের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেন।  

জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান  বলেন, আওয়ামী লীগের মতবিনিময়সভা করাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না তা কাজগপত্র ঘেঁটে জানানো যাবে।


বৈধ অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা

জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগে-পরে তিন দিন ও ভোটের দিনসহ মোট সাত দিন বৈধ অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার।


সূত্র : কালের কণ্ঠ

 এএফ/০১