সাংবাদিকরা খুঁজে খুঁজে ‘নেগেটিভ’ নিউজ করে : শাবিপ্রবি উপাচার্য

শাবিপ্রবি প্রতিনিধি


অক্টোবর ২০, ২০২২
০২:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২০, ২০২২
০২:২৫ পূর্বাহ্ন



সাংবাদিকরা খুঁজে খুঁজে ‘নেগেটিভ’ নিউজ করে : শাবিপ্রবি উপাচার্য

সাংবাদিকদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যত ‘নেগেটিভ’ খবর আছে, সেগুলো দেওয়ার জন্য সাংবাদিকরা একদম উঠে পড়ে লেগেছে। অথচ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সেশনজট মুক্ত ও র‌্যাগিং মুক্ত নিয়ে সাংবাদিকরা নিউজ করে না। তারা খুঁজে খুঁজে ‘নেগেটিভ’ বিষয়গুলো নিয়ে নিউজ করে। মিথ্যাচার করে জাতির সামনে তুলে ধরে।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ট পুত্র শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় আলোচনাসভায় সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিয়েও জবাবদিহিতা চান উপাচার্য।

আলোচনাসভায় সাংবাদিকরা এসেছে কিনা জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা আসছো এখানে? কয়জন আসছো তোমরা? তিন জন? আমি দুঃখজনক বলব ব্যাপারটা। আমাদের যত নেগেটিভ খবর আছে, তা দেওয়ার জন্য সাংবাদিকরা একদম উঠে পড়ে লাগে। আমরা তাদের অনেক ধরনের সাপোর্ট করি, কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে সাংবাদিকদের উপস্থিতি একেবারে নাই বললেই চলে। বেশির ভাগ প্রোগ্রামে তারা থাকে না, তারা কি নিয়ে থাকে এটা আমি জানি না। '

এদিকে উপাচার্য শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকীকে রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম দাবি করলেও শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। অনুষ্ঠানে প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রলীগের কর্মী ছাড়া অন্যরা উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা গেছে। মূলত অনুষ্ঠান চলাকালে বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকায় শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন নিউজের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এপিএ মূল্যায়নে তলানিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, এটা ঠিক। কিন্তু আমরা তো অনেক জায়গায় ভালো করেছি, তাই না? এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামোতে অনেক ভালো করছে। '

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির কোনো গন্ধ নেই উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, 'যেখানে প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু নেগেটিভ নিউজ আসে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে দুর্নীতি নিয়ে তো কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। সেশনজট দূর করতে পেরেছি আমরা। এটা নিয়ে কোনো নিউজ হয়নি। ’

গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান শীর্ষে রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘গবেষণায় আমরা সারা বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে উপরের অবস্থানে রয়েছি। এই ব্যাপারটা নিয়ে তারা লিখছে না। আমরা গবেষণার জন্য বাজেট ৯০ লাখ থেকে ৮ কোটি টাকায় নিয়ে গেছি। ৫% টাকা আমরা গবেষণার জন্য বরাদ্দ করেছি।  কিন্তু ওটা নিয়ে কোনো নিউজ হয় নাই। ’

এদিকে সিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাংকিংয়ের ২০২২ সংস্করণে দেখা যায় যে, গবেষণা সূচকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে একই সূচকে ১২তম অবস্থানে রয়েছে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবেশতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের যেমন সবুজ ঘাস, সবুজ গাছপালা, ওয়াটার বডি, একই ভাবে পাহাড় টিলা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো সুন্দর একটা চমৎকার পরিবেশে আমরা সবাই মিলে থাকি, শিক্ষকরা পড়াশোনা, জ্ঞান দান করছেন, গবেষণা করছেন এগুলো নিয়ে কিন্তু লেখালেখি হয় না। ’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিলা কেটে হল নিমার্ণ করে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেন। এ ছাড়া টিলা কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

উপস্থিত সাংবাদিকদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে ধন্যবাদ দিই, তোমরা যারা আসছো। আমি আশা করি, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পজিটিভ বিষয়গুলো নিয়ে নিউজ করবে।  যদি সত্যিকারার্থে নেগেটিভ কিছু থাকে সেগুলো নিয়ে নিউজ করবে।  খুঁজে খুঁজে বের করে করে নিউজ করা ঠিক না। '

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো ভালো কাজের অংশীদার তোমরা, তোমরা এটার জন্য গর্ববোধ করতে পারো। কিন্তু খুঁজে খুঁজে বের করে মিথ্যচার করা, জাতির সামনে এ সমস্ত তথ্যগুলো তুলে ধরাকে আমরা ভালোভাবে নিতে পারি না। ’


এসই/০২