সিলেট মিরর ডেস্ক
অক্টোবর ২৪, ২০২২
০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ২৫, ২০২২
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত বলা যায়। এটি ‘সুপার সাইক্লোন’ হতে পারে।
এদিকে নিম্নচাপটি আজ রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘সিত্রাং’।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যের বরাত দিয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছেন, এখন নিম্নচাপটির গতিপথ উত্তর-পশ্চিম দিকে। গতিপথে যদি পরিবর্তন ঘটে তাহলে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে তা ভারতের ওডিশা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এখন পর্যন্ত গতিপথ সেদিকেই। তবে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যদি উত্তর-পূর্ব দিকে ধাবিত হয়, বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানলে দেশের উপকূলের ৭৩০ কিলোমিটার এলাকায় এর প্রভাব থাকবে। কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে গভীর নিম্নচাপটি দ্রুত এগুচ্ছে। এতে এটি কিছুটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
গভীর নিম্নচাপটির বাড়তি অংশের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে ভারী ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার থেকে অতি ভারী ৮৯ মিলিমিটার বর্ষণ হতে পারে।
ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত (পুন.) তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং দেশের উপকূলীয় ১৯টি জেলায় একযোগে আঘাত হানতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন যে পূর্বাভাস আছে ১৯টি (উপকূলীয়) জেলাই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ৩ বছরে যে ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়েছে তার চেয়ে এটির আঘাত হানার এরিয়া অনেক বেশি।’
সচিবালয়ে রোববার (২৩ অক্টোবর) ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং ইস্যুতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী এর অবস্থান হলো ৮৮. ৫ দ্রাঘিমাংশ এবং ১৬ অক্ষাংশ। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এটি ৮৭ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ এবং ১৭ ডিগ্রি অক্ষাংশের সংযোগস্থলে পৌঁছার পর সরাসরি উত্তর-পূর্ব দিকে টার্ন নিতে পারে। যদি উত্তর-পূর্ব দিকে টার্ন করে তাহলে যে গতিপথ দেখানো হয়েছে এটি একেবারে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা- উপকূলের সব (১৯টি) জেলায় আঘাত হানতে পারে।’
আর যদি এখন যে ডিরেকশন আছে, উত্তর-পশ্চিম দিকে যাচ্ছে, তাহলে এটি ভারতের ভুবনেশ্বর ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে। এখন পর্যন্ত এটাই আমাদের শেষ আপডেট, বলেন মন্ত্রী।
এনামুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর এখনো বলছে, সন্ধ্যায় (রোববার) এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে এবং আঘাত হানার সম্ভাব্য সময় বলছে ২৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার)। ২৪ অক্টোবর (সোমবার) দিবাগত রাতের পর থেকে ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘যেভাবে ম্যাপিং করা হয়েছে একেবারে কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত আমাদের ৭৩০ কিলোমিটার উপকূল সম্পূর্ণরূপে আক্রান্ত হবে। এটা সিভিআর সাইক্লোন পর্যন্ত হবে। গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। এটা এখনো ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়নি, সন্ধ্যায় হবে। রূপান্তরিত হলে তখন এর নামকরণ করা হবে সিত্রাং। এখন পর্যন্ত নামকরণ করা হয়নি।’
ঝুঁকিতে থাকা দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলা
১. খুলনা ২. সাতক্ষীরা ৩. বাগেরহাট ৪. পটুয়াখালী ৫. বরগুনা ৬. ভােলা ৭. পিরােজপুর ৮. বরিশাল ৯. ঝালকাঠি ১০. নােয়াখালী ১১. লক্ষ্মীপুর ১২. ফেনী ১৩. চাঁদপুর ১৪. চট্টগ্রাম ১৫. কক্সবাজার ১৬. ফরিদপুর ১৭. মাদারীপুর ১৮. গােপালগঞ্জ ১৯. শরীয়তপুর।
এসই/০২