সিলেট মিরর ডেস্ক
অক্টোবর ২৪, ২০২২
০৮:১০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০২২
০৮:১০ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক বাজার থেকে গ্যাস কেনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থের যোগান নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (বীরবিক্রম)। একই সঙ্গে বিদ্যুতের বদলে দিনের আলো ব্যবহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে রবিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্প খাতে জ্বালানি সংকটের প্রভাব প্রশমন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জ্বালানি সংকটে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমিত করেছে। ডলার সংকটে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি কমিয়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে ৩৮০ মিলিয়ন ঘনফুট করা হয়েছে। এতে অন্য খাতের মতো শিল্পে জ্বালানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে বেশি দামে হলেও শিল্প উদ্যোক্তারা জ্বালানি সরবরাহ চাইছে।
রবিবারের সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার কাছেও এমন দাবি জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ‘কেনার পয়সাই তো নেই, কী দামে বিক্রি করব সেটা তো পরের বিষয়।’
সেমিনারে তিনি বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে এমন ইঙ্গিত দেন। তবে হতাশার মধ্যেও আশার খবর হিসেবে ভোলা থেকে প্রতিদিন ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করার কথাও জানান। তবে বাস্তবে এটি সম্ভব কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘শিল্প ও কৃষিতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজনে দিনের বেলা অন্য সেক্টরে বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধ রাখা হতে পারে। আসুন সবাই মিলে আমাদের নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাত্রাটা কমাই। যুদ্ধের সময় আমাদের কিছু ছিল না। খাওয়াও ছিল না। কিন্তু বাঙালিরা পেরেছে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে পারব। শিল্পকে বাঁচাতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘এমনও দিন ছিল যখন রাতে আমরা বাতি দিয়ে থেকেছি। দিনের আলোয় সব কাজ করেছি। এত আরাম আয়েশে থাকতে হবে কেন? একটু কম করলেই হয়।’
সংকট কাটানোর উপায় হিসেবে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ‘আমরা কিছু ফাইন্যান্সিং চাইব কিছু ভালো দেশের কাছে। এখন এটা কতদূর সমর্থন পাব জানি না, তবে খুব শিগগিরই আমরা চেষ্টা করব এই অর্থায়ন যোগাড় করতে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটা দেশ থেকে খুব কম দামে এলএনজি কেনার জন্য প্রস্তাব পেয়েছি। তারা ১০ বা ১২ ডলারে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কীভাবে তারা দেবে তা জানি না।’
এবার শীতে কয়েকটি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসবে জানিয়ে গ্যাস সংকটেরও সুরাহা হওয়ার আশা করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘কতগুলো কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। সেখান থেকে কিছু গ্যাস দিতে পারব ইন্ডাস্ট্রিতে ৷ হাজার মেগাওয়াট সোলারের জন্য ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেব। বছরখানেকের মধ্যে সোলার এনে গ্যাসের ওপর চাপ কমাব।’
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ‘আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ভোলা গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাহাজে করে জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে।’
সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে সিএনজি করে এই গ্যাস আনা হবে। যদিও এ বিষয়ে এখনও তেমন কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। পেট্রোবাংলা এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি জানিয়েছে, তারা এখনও বিষয়টি জানে না।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ইজাজ হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই পরিস্থিতি আর দুমাস চললে আমরা একবারে শেষ হয়ে যাব।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়েক সেন, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, এফআইসিসিআই সহ-সভাপতি স্বপ্না ভৌমিক, বিকেএমইএ সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন অপূর্বসহ অনেকে।
এসই/০৭