বহিস্কারের হুমকিতেও ঠেকানো যায়নি তাদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২৪, ২০২৩
০১:১২ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৫, ২০২৩
০৭:৩২ অপরাহ্ন



বহিস্কারের হুমকিতেও ঠেকানো যায়নি তাদের!


বহিস্কারের হুমকি দিয়েও সিলেটে নির্বাচন থেকে নিজ দলীয় কাউন্সিলরদের আটকাতে পারেনি বিএনপি। বিএনপিদলীয় বর্তমান ৭ কাউন্সিলরের ৬ জনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

শুরু থেকেই এবারের সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। দলটি সিটি মেয়র, এমনকি কাউন্সিলর পদেও দলীয় নেতাদের অংশ না নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে সিলেটে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন বলে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। তবে নানা নাটকীয়তার পর ২০ মে সমাবেশ করে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন আরিফুল হক। 

ঠিক এর আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান নগরের ৪ নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তবে লোদী ছাড়া বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলরদের কেউই নির্বাচন থেকে সরে আসেননি। বর্তমান কাউন্সিলরদের ৬ জনই প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেন- সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন।

এরআগে সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী, ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল। এ ছাড়া সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, সদ্য বিদায়ী সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম শাহনাজ এবার ২৫ নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে শামীম বিএনপির মুক্তাদির বলয় ও হাদী আরিফ বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত।

এদিকে বর্তমান ৬ কাউন্সিলর ছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাধারণ ৪২টি ও সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। দলের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই তারা নিজের কর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুমকি দিয়েও বাগে আনতে পারেনি বিএনপি।

বর্মতমান কাউন্সিলর ছাড়া মনোয়নপত্র জমাদানকারী কাউন্সিরর প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সংরক্ষিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেত্রী শাহানা বেগম শানু  সংরক্ষিত ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি সালেহা কবির শেপি, সংরক্ষিত ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দিবারাণী, ১৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান মুজিব, ২৬নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সেলিম আহমদ রনি, ৩৯নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, ১নং ওয়ার্ডে মুফতি কমর উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডে মো. মিজানুর রহমান, ৪নং ওয়ার্ডে কামাল মিয়া ও শেখ মো. শাহেদ সিরাজ, ১০নং ওয়ার্ডে আফতাব, ১২নং ওয়ার্ডে আবদুল কাদির,  ১৮নং ওয়ার্ডে সালমান চৌধুরী, ২৩ নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবে সদস্য মামুনুর রহমান মামুন  এবং সংরক্ষিত ৪ নং ওয়ার্ডে অ্যাডভোকেট জোহরা জাসমিন ও রাহেনা খানম মুক্তা, ৩৩নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন নাদিম, ৩৩নং ওয়ার্ডে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গৌস উদ্দিন পাখি. ৩৭নং ওয়ার্ডে উপজেলা বিএনপি নেতা দিলওয়ার হোসেন জয়,৩৮নং ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন পনির, ৪০নং ওয়ার্ডে ছাত্রদলের সাবেক নেতা মো. আবদুল হাছিব ।

দলের আপত্তি সত্ত্বেও মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রসঙ্গে রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, বিএনপির সকল কাউন্সিলররাই এবার প্রার্থী হয়েছেন। একমাত্র কয়েছ লোদী ছাড়া কেউই নির্বাচন বর্জন করেননি। তাই আমিও মনোনয়ন জমা দিয়েছি। বাকী নেতারা যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন তবে আমিও প্রত্যাহার করবো।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার যাতে বিএনপির কেউ প্রার্থী না হন এ ব্যাপারে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে দলটি। মেয়র আরিফুল হককে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও নির্বাচন থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালায় দলটি। সিলেটে বিএনপিদলীয় ২৫ সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়। এছাড়া ৩২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয় মহানগর বিএনপি।

এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে এসব প্রচেষ্টাও নেতাদের প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেনি বিএনপি। 

গত ১২ মে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সাক্ষরিত সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে পাঠানো চিঠিতে লেখা হয়- ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট বক্তব্য এই পাতানো নির্বাচনে দলের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মী মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন বা কোন ধরণের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। যদি এই পাতানো নির্বাচনে দলের কোন নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করে বা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ কঠিন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মনোনয়ন পত্র জমা দেয়া প্রসঙ্গে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, এলাকার মানুষ তো আমাকে ছাড়ছে না। আমি এখানকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। আর কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। তাই কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে দলের আপত্তি থাকা ঠিক নয়।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী বলেন, দলের পাশাপাশি আমাকে এলাকার মানুষের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হয়। এলাকাবাসীর চাপেই আমি প্রার্থী হয়েছি।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুইবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম  বলেন, ‘ওয়ার্ডের তরুণ, মুরব্বি ও মা-বোনদের সঙ্গে আলাদাভাবে মতবিনিময় করেছি। সবাই নির্বাচন করতে বলছেন।’

১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, ‘নমিনেশন ফরম কেনার পর রবিবার সেটা জমাও দিয়েছি। তিনবার নির্বাচন করেছি। এলাকার জনগণ আমাকে কখনো খালি হাতে ফেরাননি। তাঁদের দাবির কারণে আমার পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।’

দুইবারের নির্বাচিত ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আব্দুল রকিম তুহিন বলেন, ‘আমি যেহেতু আগেই দল থেকে পদত্যাগ করেছি। আমার ক্ষেত্রে দলীয় কোন বাঁধা নেই।’

তবে মনোনয়ন জমা দেওয়া নেতারাও ভুল বুঝতে পেরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। অনেকে না বুঝে সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন। তারপরও আমরা আশা করবো তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে এই পাতানো নির্বাচন বর্জন করবেন। অন্যথায় দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ঢাকা  বলেন, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তারা আজীবনের জন্য বহিষ্কার হবেন। বিএনপিতে থাকার কোনো অধিকারই তাদের থাকবে না।

এদিকে, মঙ্গলবার সিলেটে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময়সীমা শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটে মেয়র পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আর ২১ জুন ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।


এসই/০৩