হৃদয় কাপানো ম্যাচ জেতালেন তাওহিদ

খেলা ডেস্ক


জুলাই ১৪, ২০২৩
০৩:৩৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২৩
০৩:৩৫ অপরাহ্ন



হৃদয় কাপানো ম্যাচ জেতালেন তাওহিদ

তাওহিদ হৃদয়, শামীম হোসেন ও শরিফুল ইসলাম। একটু ২০২০ এর কথা মনে করে স্মরণ করুন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নামগুলোর হাত ধরেই এসেছিল সেরা ট্রফিটা, যুব বিশ্বকাপ।

তাদের মিলিত পদধ্বনিতে আজ সিলেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ও চরম নাটকীয় ম্যাচে ২ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। করিম জানাতের শেষ ওভারে পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে অনেক কিছুই হল। প্রথম বলে মিরাজের ব্যাট থেকে ৪ এল, এরপর হ্যাটট্রিক হলো, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৫০তম, এরপর শরিফুলের মারা চারে নাটকীয় ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ।

৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ীরা এত দ্রুত হারে না। যুব বিশ্বকাপ জেতা তাওহিদ হৃদয় ও শামীম হোসেন ২০২০ এর পর আবার ক্রিজে জুটি হলেন। তাদের দৃপ্ত পথচলায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে কঠিন হয়ে যাওয়া ম্যাচ হাতে এল। দুই তরুন মিলে ৭.১ ওভারে ৭৩ রানের জুটি গড়েন। অপরপ্রান্তে আইপিএল খেলা, বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা বোলাররা। অথচ তাদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে এগিয়ে যান দুজনে। পুরোনো বন্ধুত্বের খোলা মন ফিরিয়ে খেলতে থাকেন নিজেদের মতো। দারুন সব শটে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছিলেন তারা। শেষ পর্যন্ত হৃদয় ম্যাচ জিতিয়ে অপরাজিত ছিলেন ৩২ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৭ রানে। শামীম ২৫ করেন ৩৩ বলে।

তাদের ব্যাটে ম্যাচ অনেকটা বের হয়ে এলেও নাটক জমে উঠে শেষ ওভারে। প্রথম বলে মিরাজ চার মেরে ৬ রানের প্রয়োজনীয়তা ২-এ নামিয়ে আনেন। পরের বলে আরেকটি চার মারতে গিয়ে মিডউইকেটে নবির হাতে ধরা পড়েন ৮ রান করা মিরাজ। পরের বলে তাসকিন আরকেটি শটে টপএজড হন, সহজেই ক্যাচ ধরেন উইকেটরক্ষক গুরবাজ। আর শেষ চতুর্থ বলে নাসুম ব্যাটে বলে লাগালেও ডিপ থার্ড ম্যানে উড়ে যাওয়া বল লুফে নেন ফরিদ। তাতে স্মরনীয় হ্যাটট্রিক করে ফেলেন জানাত। আর পঞ্চম বলে দেখে শুনে দারুন কাট শটে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন শরিফুল। জয়ের পর হৃদয় ও শরিফুলের উল্লাস এক মুহুর্তের জন্য এনে দিয়েছিলেন যুব বিশ্বকাপ জয়ের পর তাদের উদযাপন করার সেই আমেজ।

বিশ্বকাপ জয়ী দুই যুবা দাঁড়িয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের পুরোনো ব্যাটিং রোগটাই ফুটে ওঠে। টপঅর্ডারের কেউ ব্যাট হাতে বড় স্কোর করতে পারেননি। অথচ শুরু পেয়েছিলেন তিনজন। রনি তালুকদার ১ চারে শুরু করে ফারুকির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। শুরুর চার ব্যাটারের বাকি তিনজনই রান পেয়েছেন। লিটন দাশ ১৯ বলে দুই চারে ১৮ করার পর চট্টগ্রামের প্রথম দুই ওয়ানডের মতো ভুল শটে আউট হয়েছেন। আবারও গুডলেন্থ থেকে উঠে আসা বলে ব্যাট চালিয়ে ব্যাটে-বলে করতে ব্যর্থ হন। নাজমুল শান্তরও একই অবস্থা। চট্টগ্রামে ওয়ানডেতেও বলের লাইনে গিয়ে না খেলায় সরাসরি বোল্ড হয়েছেন। ঠিক একই ভুলের পনরাবৃত্তি করে ফিরেছেন ১৪ রানে। ভরসার নাম হয়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ৩ চারে ১৭ বলে করেছেন ১৯ রান। দারুন সব শটে উইকেটে থিতু হওয়ার মুখেই নতুন বোলার ফরিদের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারী লাইনে ধরা পড়েন।

৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন বিপদে। ১৫৫ রানের লক্ষ্য মনে হচ্ছিল ১৮০ বা তারও বেশি। কিন্তু যুব দলের দুই সাবেক সতীর্থ মিলে দলকে টেনে তুললেন খাদের কিনারা থেকে। শামিম হোসেন দীর্ঘদিন পর দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার সুযোগ পেয়ে দারুন সব শট খেলেন। টি-টোয়েন্টির উদ্ভাবনী সেসব শটে দ্রুত ২৫ বলে চার চারে করেন ৩৩। উইকেটের পেছনে ৩০ গজের উপর দিয়ে রশিদ খানকে আরও একটি শট মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক গুরবাজের হাতে ধরা গড়েন শামীম। তার বিদায়ে আবারও ম্যাচটা জটিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত এই জটিলতা কাটিয়ে ওঠেন শেষের ব্যাটাররা।

এর আগে মোহাম্মদ নবির অপরাজিত ৪০ বলে ৫৪ রানে আফগানিস্তান ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও ৭ উইকেটে ১৫৪ রান তোলে। নবিকে যোগ্য সঙ্গ দেন নাজিবুল্লাহ জাদরান ২৩ ও আজমতুল্লাহ ওমরজাই ৩৩ রানে।

আরসি-০৯