ঘরের চৌহদ্দি থেকে যেভাবে ভারতের শীর্ষ দশ ধনীর তালিকায় সাবিত্রী

সিলেট মিরর ডেস্ক


নভেম্বর ১৩, ২০২৩
০৯:২৬ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৪, ২০২৩
১১:৪৭ পূর্বাহ্ন



ঘরের চৌহদ্দি থেকে যেভাবে ভারতের শীর্ষ দশ ধনীর তালিকায় সাবিত্রী


ঘরের চৌহদ্দি ছেড়ে তাঁকে যে বেরোতে হবে, তা কখনও ভাবেননি। বরং উল্টো মত পোষণ করতেন সাবিত্রী জিন্দল। একবার এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘আমরা মেয়েরা ঘরের চৌহদ্দি সামলাব। আর পুরুষেরা বাইরের জগতের সব কিছু দেখাশোনা করবে।’ তবে ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, এক সময় তাঁকেই ঘরের চৌহদ্দি ছেড়ে বাইরের জগৎ সামলাতে হয়েছিল।’

সাবিত্রীর স্বামী ছিলেন ভারতের ইস্পাত সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি। বেশ নিশ্চিন্তেই সংসার সামলাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় স্বামীর অকস্মাৎ মৃত্যুর পর তাঁকে ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিল। অথচ এমনটা যে করতে হবে, বোধ হয় কল্পনাও করেননি তিনি।

প্রাচুর্যে ভরপুর সংসার। মধ্য পঞ্চাশের ন’সন্তানের মা সাবিত্রীর জীবন কাটছিল বেশ নিশ্চিন্তে। ২০০৫ সালে আচমকা বড়সড় ঝাঁকুনিতে থমকে গিয়েছিল জীবন। সে বছর কপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর স্বামী শিল্পপতি ওমপ্রকাশ জিন্দলের।

৭৪ বছরের ওমপ্রকাশ ছিলেন ওপি জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার। ইস্পাত এবং বিদ্যুৎক্ষেত্রে যে গোষ্ঠীর চোখধাঁধানো রমরমা ব্যবসা। ২০০৫ সালে ৩১ মার্চ উত্তরপ্রদেশের সহারনপুরের কাছে তাঁর হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে। ওমপ্রকাশের সঙ্গে মৃত্যু হয়েছিল হরিয়ানার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বংশীলালের ছেলে তথা সে সময় ওই রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী সুরেন্দ্র সিংহ এবং কপ্টারচালক টিএস চৌহানের। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ওমপ্রকাশের আত্মীয় বেদ গয়াল এবং কনস্টেবল বিনোদ কুমার।

শিল্পপতি ছাড়া আরও একটি পরিচয় ছিল ওপি জিন্দলের। তিনি ছিলেন হরিয়ানার হিসার বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন হরিয়ানার বিদ্যুৎমন্ত্রী। জানা গিয়েছিল, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ওমপ্রকাশের হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ে।

স্বামীর অকালপ্রয়াণের পর ওপি গোষ্ঠীর দায়িত্ব সামলেছিলেন সাবিত্রী। যে বয়সে নিশ্চিন্তির সংসার করেন অনেকে, সেই বয়সে ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখতে হয়েছিল তাঁকে। সে সময় সাবিত্রীর বয়স ছিল ৫৫।

সাবিত্রী এখন ওপি জিন্দল গোষ্ঠীর চেয়ারপারসন এমিরেটা। সেই সঙ্গে দেশের শীর্ষ ১০ ধনীর একজন।

সংবাদমাধ্যমের দাবি, ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দু’বছরে চড়চড় করে বেড়েছে সাবিত্রীর সম্পত্তি। ওই সময়ের মধ্যে ৯৫ হাজার ২৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকার সম্পত্তি করে নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর নিট সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকায়। এর আগে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪৮০ কোটি ডলার, চলতি বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১,৭০০ কোটি ডলারে। আর ২০২৩ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। 

অসমের তিনসুকিয়া জেলার বাসিন্দা সাবিত্রীর জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ মার্চ। সত্তরের দশকে ওমপ্রকাশের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল।পৃথ্বীরাজ, সজ্জন, রতন এবং নবীন জিন্দল— বাবার মৃত্যুর পর এই চার সন্তানের মধ্যে ওপি গোষ্ঠী ভাগ দেওয়া হয়েছিল। চার জনের মধ্যে জেএসডব্লিউ স্টিলের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সজ্জন। সেটি ছিল গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অংশ।

ব্যবসার পাশাপাশি স্বামীর মতো রাজনীতির আঙিনায়ও পা রেখেছেন সাবিত্রী। ২০০৫ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর কেন্দ্র থেকেই নির্বাচনের দাঁড়ান। কংগ্রেসের টিকিটে সেই কেন্দ্রে জয়ী হয়ে পা রাখেন হরিয়ানা বিধানসভায়। পরের বিধানসভা নির্বাচনে আবার জয়। ২০১৩ সালে হরিয়ানার ক্যাবিনেট মন্ত্রীও হয়েছিলেন তিনি। তবে রাজনীতিক নয়, সাবিত্রীর আসল সাফল্য ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে, এমনটাই মনে করেন শিল্প মহলের একটা বড় অংশ।



এএফ/১০