সিলেট মিরর ডেস্ক
আগস্ট ১৩, ২০২৪
০৩:৫০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১৩, ২০২৪
০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেছেন, দলকে পুনর্গঠন করুন। নির্বাচন এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় যাবেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন যে আবার একটা কাউন্টার রেভল্যুশন (প্রতিবিপ্লব) করে আসবেন, এর জন্য হাজার হাজার লোকের রক্তের প্রয়োজন। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান, তাহলে আমার কিছু করার নেই। গন্ডগোল পাকিয়ে লাভ হবে না। লোকজন খেপে উঠবে। ব্যক্তিগত স্বার্থে এত বড় একটা দলকে নষ্ট করবেন না। এটা (আওয়ামী লীগ) আমাদের গর্ব। এটা নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি আপনাদের একটা অনুরোধ করি, এমন কিছু করবেন না যে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) জীবন বিপন্ন হয়। এ দেশের পাবলিক এখনও আপনাদের গ্রহণ করতে আসেনি।’
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অনেক অবদান আছে উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি বরং মনে করি, আপনারা পার্টি অর্গানাইজ করুন। আপনারা গোছান নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্বে ও নতুন অঙ্গীকার নিয়ে।’
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি থাকবে কিনা প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে উপদেষ্টা পরিষদ। জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে কিনা–এমন প্রশ্নে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এটা আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ। সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘এ দেশের লোক এত তাড়াতাড়ি ভুলে নাই। সময় দেন, হয়তো ভুলে যাবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি না। কারণ যাকে নেতা ধরেছিলেন, সেই নেতারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন; যাকে ধরছে, তাকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। অনেক নেতাকে অনেকে বাঁচিয়েছে। আমরা জানি, কে কোথায় আছে। কিন্তু ওটা না করে আপনারা বরং পার্টিকে দাঁড় করান, এটি অনেক বড় পার্টি। অ্যান্ড আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় আমাদের মতো বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বাংলাদেশে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, স্বাধীনতা– এটা পার্সোনাল কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ।’’
তিনি বলেন, এখানে মারামারি করে কোনো লাভ নেই। আরও কিছু লোকের মৃত্যু আমরা চাই না। অলরেডি ৪০০ থেকে ৫০০, হয়তো তারও বেশি মারা গেছে। পুলিশেরও একই অবস্থা হয়েছে, আনসারেরও এই দশা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যদি উস্কানি দিতাম, তাহলে আপনারা টিকতে পারতেন না, আর্মি ফায়ারে। আমরা আর্মিকে মানা করেছি যে ডোন্ট ওপেন ফায়ার। কারণ কাকে মারবেন আপনি? এই পুলিশকে দিয়ে কাকে মেরেছেন? পুলিশকে দিয়ে মেরেছেন আপনার সন্তানকে।’
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে সরকার পতন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ইয়াং জেনারেশন, তারা এটা করেছে। কোনো পলিটিক্যাল পার্টি করে নাই। দে হ্যাভ গিভেন দেয়ার লাইফ। যেটা আপনারা কোনোদিন দিতে পারতেন না। বুক পেতে দাঁড়িয়ে গেছে পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য। তার মুখে কোনো দুঃখ নাই। দে আর অল স্মাইলিং। তারা যতদিন আছে, তারা কোথাও দৌড়াবে না। তারা আপনার মুখোমুখি দাঁড়াবে। একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে বলছি, দয়া করে দেশটাকে স্বাধীন রাখেন।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) এই দেশকে আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন? ৩০ লাখ লোকের ওপর দাঁড়িয়ে দেশটা আপনি আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন?’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে ভালো ভালো নেতা আছেন। এই দল একসময় মধ্যবিত্তের সেক্যুলার দল ছিল। মুসলিম লীগ ছিল উচ্চবিত্তের। তিনি (বঙ্গবন্ধু) স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা এসেছে। সেই দল এ রকমভাবে ভেঙে পড়ে যাবে! আপনারাও দল গুছিয়ে নেন। আপনাদের দলকে কেউ তো নিষিদ্ধ করেনি।’
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, একে-তাকে দিয়ে গন্ডগোল করাবেন। আর বলবেন, ‘আমি আসতেছি।’ আপনি আসেন, এটা আপনার দেশ। আসেন না কেন? কে আটকাচ্ছে আপনাকে? নাগরকিত্ব তো কারও যায়নি। আপনি ২১ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেছেন। আপনি স্বেচ্ছায় চলে গেছেন। কেউ তো যেতে বলেনি।’
বেসামরিক মানুষের হাতে নিষিদ্ধ ৭.৬২ এমএম রাইফেল পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা পুলিশ ও র্যাবকে দেওয়া হয়েছিল। সেই অস্ত্র কীভাবে সাধারণ মানুষের হাতে গেল? যাদের হাতে অবৈধ অস্ত্র আছে, তারা সাত দিনের মধ্যে থানায় জমা দেবেন। নিজেরা না দিলে অন্যদের মাধ্যমে দিন। জমা না দিলে দুটি মামলা হবে। একটা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র রাখা, আরেকটা হচ্ছে সরকারি নিষিদ্ধ অস্ত্র আপনাদের হাতে।
হিন্দু মহাজোটের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুর্গাপূজায় তিন দিনের ছুটির সুপারিশ করবে বলে জানান সাখাওয়াত হোসেন। শাহবাগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, মানুষের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ। হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, খ্রিষ্টান হোক– সবাইকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ ওঠে। ওই হামলা প্রতিরোধ করতে না পারায় ক্ষমা চান সাখাওয়াত হোসেন।
এএফ/০৭