‘লাখো মানুষকে হত্যা করেও শেখ হাসিনা টিকে থাকতে চেয়েছিলেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক


সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
০৬:১৭ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
০২:৫০ পূর্বাহ্ন



‘লাখো মানুষকে হত্যা করেও শেখ হাসিনা টিকে থাকতে চেয়েছিলেন’
সিলেটে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী


সরকার পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘শেষ দিন পর্যন্ত সে চেষ্টা করেছে, দরকার হলে এক দুই লাখ লোককে হত্যা করে হলেও তাকে টিকে থাকতে। কিন্তু সেটি আর তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।’ বাংলাদেশ কব্জায় রাখতে চায় বাংলাদেশ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) জনগণকে কৃতদাস করে রাখতে চান ক্ষমতার জন্য। দিল্লির কাছ থেকে গ্যারান্টি নিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।’

আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সিলেট সফরে আসেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত এটিএম তুরাবের বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

রুহল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করে মনে করেছিলেন তিনি অদ্বিতীয়। তাকে আর কেউ ধরা ছোঁয়ার মধ্যে পাবে না। আল্লাহ তো সবসময় দেখেন। অনেক সময় দড়ি ছেড়ে দেন, তারপর যখন দড়ি টান দেন-তখন মানুষ বুঝতে পারে তার ক্ষমতা কত কম।’

তিনি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘সারা বাংলাদেশকে লাশের দেশে পরিণত করেছিল। শিশু, কিশোর, তরুণ-এদেরও রক্ত পান করে শেখ হাসিনা আবারো ভেবেছিল ক্ষমতায় টিকে থাকবে। কিন্তু একের পর এক নিজেদের আত্মদান, ত্যাগ, আত্মহুতি দিয়ে যেভাবে ছাত্র-জনতা শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরেছিল শেখ হাসিনা তা টেরই পায়নি।’ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে চাননি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেষদিন পর্যন্ত সে চেষ্টা করেছে, দরকার হলে এক-দুই লাখ লোককে হত্যা করে হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে। কিন্তু না, সেটি আর তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।’ শিক্ষার্থীদের আত্মদানের কারণে শেখ হাসিনাকে পালাতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকল বাঁধা উপেক্ষা করে বাচ্চা ছেলেরা যখন নিজের জীবন দিচ্ছে একের পর এক আর সেই জীবন দেওয়ার পর তার লাশ রেখে তার সহকর্মী আরেক শিশু-কিশোর এগিয়ে গেছে তাদের জীবন দেওয়ার জন্য। এই আত্ম উৎসর্গ, এই মহিমামণ্ডিত নিজের আত্মদান বাংলাদেশে এক উজ্জ্বল অধ্যায় রচিত করেছে। আর এই উজ্জ্বল অধ্যায়ে শেখ হাসিনাকে অবশেষে পালাতে হয়েছে।’

সাংবাদিক এটিএম তুরাব দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের দায়িত্ব পালনে জীবন উৎসর্গ করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের জন্য আত্মদানকারীদের মধ্যে একটি জীবন সাংবাদিক তুরাবের। ১৯ জুলাই সেদিন আমি গ্রেপ্তার হই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে। এরপরে শুনলাম, এটিএম তুরাব নিহত হয়েছে। নয়া দিগন্তের এই তরুণ সাংবাদিক মাত্র দুই মাস আগে যার শুভ পরিণয় হয়েছে, বিয়ে হয়েছে। তার নববধূকে বিধবা করে দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন অকাতরে দিয়ে দিয়েছে ‘

সেদিন বিএনপির কর্মসূচিতে দায়িত্ব পালনে গিয়ে তিনি মারা যান মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই আত্মদান তো বৃথা যাবে না। এই আত্মদান তো বৃথা যেতে পারে না। আজকে এই শেখ হাসিনাকে যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে ১৬ বছর ধরে, এখনো তারা দিয়ে যাচ্ছেন। গোটা পৃথিবীর মানুষ বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার আমলে একভাবে দেখেছে এখন আরেকভাবে দেখছে।’

সীমান্তে ভারতের গুলি চালানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বারবার বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ কী মানুষ না? দেখামাত্রই আপনি সীমান্তে গুলি করে হত্যা করেন। আপনি ঠাকুরগাঁ, বালিয়াগাঙ্গিতে গুলি করে জয়ন্ত কুমারকে হত্যা করলেন। কয়েকদিন আগে পহেলা সেপ্টেম্বর এই বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজারে স্বর্ণা দাসকে গুলি করে হত্যা করলেন। বাংলাদেশে যদি আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে কোথাও মারামারি হয় তখন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা তার নাম যদি ধনঞ্জয় হয়, তার নাম যদি সুকুমার হয়-এইটাকে দিল্লি এবং ভারতের বিভিন্ন পলিসি মেকাররা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খেতাব দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যে বাংলাদেশের নাগরিক জয়ন্ত, স্বর্ণা দাসকে আপনার বিএসএফ গুলি করে হত্যা-এটা কি নাম আপনারা দেবেন? এটা এখন কি বলবেন আপনারা? এখন তার পরিচয় সে বাংলাদেশি, বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হচ্ছিল। বাংলাদেশি মানুষকে পাখির মতো মেরে ফেলার অধিকার ভারত রাখে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে শিশু-কিশোরের ঘাতক, অপরাধি এবং হাজার, লাখ, কোটি চোরেরাকে দিল্লি পুনর্বাসন করে। আর সীমান্তের বাংলাদেশিদের দেখামাত্র সে হিন্দু হোক, মুসলমান হোক, বৌদ্ধ হোক তার বেঁচে থাকার  অধিকার নেই।’

ভারত বাংলাদেশকে কব্জায় রাখতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশের চারিদিকে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে, যে পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে কব্জার মধ্যে রাখতে চায়। মুঠোর মধ্যে রাখতে চায়। ওরা আমাদের বাইরে যাবে কেন? যা বলল আমরা-তাই করবে। আমরা যাকে যেভাবে স্বীকৃতি দেবো বাংলাদেশ তা-ই মানবে। শেখ হাসিনা সেটাই মেনে নিয়েছিল। কারণ উনি নিজের জনগণকে কৃতদাস হিসেবে রাখতে চান তার ক্ষমতার জন্য। আর এটার গ্যারান্টি পেয়েছিলেন দিল্লির কাছ থেকে। দিল্লির কাছ থেকে গ্যারান্টি নিয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশে মানুষের যে নির্বাচন, ভোটের অধিকার, তার বেঁচে থাকার অধিকার-সমস্ত কিছুকে পদধলিত করে তিনি- তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার ক্ষমতা চাই। আমার সোনার হরিণ চাই-এটাই ছিল শেখ হাসিনার নীতি। আর এই নীতি তিনি বাস্তবায়ন করেছেন রক্তাক্ত পন্থায়, বর্বরোচিতভাবে।’

এর আগে তিনি সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে সাংবাদিক তুরাবের মাকে শান্তনা দেওয়ার পাশাপাশি দোয়া চেয়ে বলেন, ‘তাদের (তুরাবদের) এই অবদানের জন্য আজকে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছি। শান্তিতে ঘুমাতে পারছি। স্বাধীন একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে, স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ইনশাল্লাহ তাদের এই অবদান এদেশের মানুষ কোনোদিন ভুলবে না। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’



এ সংক্রান্ত ভিডিও দেখুন





এএফ/০৫