পরিবর্তনের আশ্বাস কমলার, ট্রাম্প দিলেন আশার বার্তা

সিলেট মিরর ডেস্ক


নভেম্বর ০৩, ২০২৪
১২:৩৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৩, ২০২৪
০৩:৪৮ অপরাহ্ন



পরিবর্তনের আশ্বাস কমলার, ট্রাম্প দিলেন আশার বার্তা


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর মাত্র দুই দিন। শেষ মুহূর্তের প্রচারণার অংশ হিসাবে শুক্রবার অন্যতম দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য মিশিগান ও উইসকনসিনে দুটি সমাবেশ করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে উইসকনসিনের অ্যাপলটন ও মিলওয়াকিতে প্রচার চালিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আলজাজিরার। 

উইসকনসিনের জ্যানেসভিল, লিটল চুট, ম্যাডিসন এবং মিলাউকিতে সমাবেশের মাধ্যমে শুক্রবার বেশ ব্যস্ত সময় কাটান কমলা হ্যারিস। ভোটারদের মন জয় করতে তার এসব সমাবেশে বাড়তি আকর্ষণ হিসাবে ছিলেন সংগীতশিল্পী গ্লোরিলা, কার্ডি বি এবং ফ্লো মিলি। 

ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পেলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পরিবর্তন করে দেবেন। সবার জন্য একটি সহনশীল অর্থনীতি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি পরিবারের অন্য সদস্য এবং বন্ধু-বান্ধবকে তাকে ভোট দিয়ে সমর্থন করার আহ্বান জানান।   

কমলা তার একজন গুরুত্বপূর্ণ রিপাবলিকান সমর্থককে নিয়ে (ট্রাম্পের সমালোচকদের অন্যতম) ট্রাম্পের ‘সহিংস বাগাড়ম্বরপূর্ণ মন্তব্যে’ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উইসকনসিনের ম্যাডিসনে সাংবাদিকদের কমলা বলেন, ‘ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য লিজ চেনিকে ঠেকাতে বন্দুকের প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।’

লিজ চেনিকে একজন সত্যিকারের ‘দেশপ্রেমিক’ উল্লেখ করে কমলা বলেন, ‘ট্রাম্পের এ উসকানিমূলক বক্তব্য অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে। যিনি এমন সহিংস বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলতে পারেন, তিনি পরিষ্কারভাবে একজন অযোগ্য ব্যক্তি। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য।’

কমলা বলেন, ‘তার (ট্রাম্পের) শত্রুর তালিকা কেবল দীর্ঘ হচ্ছে। আর তার বক্তব্যও ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে। আমেরিকার জনগণ যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে সেসব ইস্যুতে তার গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।’

এদিকে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইহুদি এবং আরব ভোটারদের মন জয় করতে কমলা হ্যারিস এবার গাজায় ইসরাইলের হামলার ইস্যুতে তার প্রচারণার বার্তায় পরিবর্তন এনেছেন। মিশিগানের প্রচারিত একটি বিজ্ঞাপনে কমলা বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্টে তিনি আর ‘নীরব’ থাকবেন না। তবে তিনি ইসরাইলের সামরিক সহযোগিতা কমানোর দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পেনসিলভানিয়ার ইহুদি ভোটারদের উদ্দেশে আরেকটি বিজ্ঞাপনে কমলা ইসরাইলের অধিকার রক্ষায় তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ওই ভিডিও বিজ্ঞাপনে গাজার ভোগান্তিকে কমলার ‘হৃদয়বিদারক’ উল্লেখ করা অংশটুকু কেটে দেওয়া হয়েছে।    

ওদিকে মিলাউকির সমাবেশে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ভোটারদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রবাসীর জন্য তিনি আশার বার্তা নিয়ে আসবেন। কমলাকে তিনি ‘নিম্ন বুদ্ধাংকের ব্যক্তিত্ব’ উল্লেখ করে বলেন, তিনিই দেশের মুদ্রাস্ফীতি দূর করতে পারবেন। দেশের অর্থনৈতিক ধসের জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকেও তিনি দায়ী করেন। অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ট্রাম্প বলেন, আমরা চাই লোকজন আমাদের দেশে আসুক। কিন্তু তাদের একটা সিস্টেমের মাধ্যমে বৈধভাবে আসতে হবে। আমাদের এবং আমাদের দেশকে তাদের ভালোবাসতে হবে।  

পরে মিশিগানের আরব-আমেরিকান ভোটারদের সঙ্গেও দেখা করেন ট্রাম্প। মিশিগানের ওয়ারেনের জনসমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘চার বছর ধরে আমরা যে লড়াই করছি, আগামী চার দিন পর তা শেষ হচ্ছে।’ পরে যে ভেন্যুতে ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন, সেখানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন। পেনসিলভানিয়ায় হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার কয়েকদিন পর তিনি এ ভেন্যুতেই জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়েছিলেন।

নির্বাচনি প্রচারের অংশ হিসাবে ট্রাম্প শুক্রবার মিশিগানের ডিয়ারবর্নে যাত্রাবিরতি করেন। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আরব-আমেরিকান কমিউনিটির বসবাস এ অঙ্গরাজ্যে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে সমর্থন দেওয়া নিয়ে এ অঙ্গরাজ্যে মুসলমানদের মধ্যে ডেমোক্রেটবিরোধী মনোভাব বেশ প্রবল। ডিয়ারবর্নে একটি ‘হালাল রেস্তোরাঁ’য় সমর্থকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনে তিনি জিতলে ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দিহান রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র স্বাস্থ্যসেবা খাতে ‘বড় ভ‚মিকা’ পালন করবেন। পরে ওয়ারেনে ট্রাম্পের সঙ্গে যোগ দেন কেনেডি।

আগামী মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই ৬৮ মিলিয়নের (৬ কোটি ৮০ লাখ) বেশি মার্কিন ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সমর্থনের দিক থেকে দুজনই সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। উইসকনসিন, মিশিগানসহ দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যে কে এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকেন, সেটার ওপরই মূলত এবারের নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ভর করছে।


এএফ/০২