নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৭, ২০২৫
১১:৫৭ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০২৫
০৩:০৫ পূর্বাহ্ন
প্রথমবারের মতো সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে গেলো কার্গো ফ্লাইট। গতকাল রবিবার রাত ৮টা ০৫ মিনিটে ৬০ টন গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে স্পেনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেয় মেক্সিকান কার্গো এয়ারলাইনস মাস এয়ার ও গ্যালিস্টেয়ারের যৌথ মালিকানার একটি এয়ারবাস। এর মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানিতে যোগ হলো নতুন মাত্রা।
বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন এর উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
আপাতত ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সপ্তাহে দুটি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আগামীতে ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। এরপর রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখতে বিকল্প রুট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আধুনিক কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রামে এই সুবিধা চালু হলে ট্রান্সশিপমেন্টের বিষয়ে আর পরনির্ভরশীলতা থাকবে না বলে আশা আমদানি-রপ্তানিকারকদের।
ঢাকার পর সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরু হওয়ায় খুশি রপ্তানিকারক ও সিলেটের ব্যবসায়ীরা। প্রথম ফ্লাইটে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির গার্মেন্টস সামগ্রী।
সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনার সুযোগ সৃষ্টির কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সকলে মিলে একত্রে কাজ করছি বলে এটা সম্ভব হয়েছে। সিলেটের জন্য আজ ঐতিহাসিক দিন। ঢাকার বাইরে সিলেট থেকে স্বাধীনতার পর এটি প্রথম কার্গো ফ্লাইট। আমরা আমাদের সক্ষমতা কাজে লাগিয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে এ ফ্লাইট অব্যাহত থাকে সেজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
ওসমানী বিমানবন্দরে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান। স্বাগত বক্তব্য দেন ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজ আহমেদ প্রমুখ। এর আগে উপদেষ্টা কার্গো কমপ্লেক্স ঘুরে দেখেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামেও আমরা খুব শিগগিরই শুরু করব। কার্গো যেটা ছিল সেটার মধ্যে কিছু ছোটখাট কাজ গত ১ সপ্তাহ ধরে চলছে। অন্যান্য সব প্রিপারেশনও আমরা নিচ্ছি। ওখানে কাস্টমস-ইমিগ্রেশনকে নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের উন্মোচন স্বাক্ষী হলাম আমরা সবাই। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে কার্গো ফ্লাইটের এই সূচনা শুধুমাত্র সিলেটের নয় গোটা দেশের অর্থনীতির গতিপথকে ত্বরান্বিত করবে। এই ফ্লাইট পরিচালনা করছে গ্যালিস্টার, ইনফিনিট এভিয়েশন। যার প্রথম গন্তব্য হচ্ছে স্পেনের জারাগোজা শহরে। এই ফ্লাইটের মাধ্যমে রপ্তানির যে দ্বার উন্মোচিত হলো তা দেশের বহু রপ্তানিকারকের জন্য আশার আলো হয়ে দাঁড়াবে। এটি শুধু একটি ফ্লাইট নয় বরং সিলেট অঞ্চলসহ সমগ্র বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষেত্রে অর্থনীতিকে বেগবান করার একটি বড় পদক্ষেপ।
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এখানে শুধু বেবিচক নয় ২৪টি সংস্থা একসঙ্গে কাজ করেছে। প্রত্যেকের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমরা আজকে এখানে আসতে পেরেছি। এখন সপ্তাহে আমরা দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতে আশা করব এই কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পাবে। তার জন্য অবশ্য আমাদের টার্মিনাল ফ্যাসিলিটিজ আরেকটু বাড়াতে হবে। এটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এর আগে বিকেল পৌনে ৫টায় ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছায় কার্গো ৩৩০ ফ্লাইট। এটি অবতরণের পর শুরু হয় পণ্য লোড কার্যক্রম। মোট ৬০ টন পণ্য লোড করা হয়। লোড হ্যান্ডেলিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ এয়ারলাইস কর্তৃপক্ষ। আর নিরাপত্তা দেয় বেবিচক কর্মীরা। প্রথম ফ্লাইটে ঢাকার এমজিএইচ গ্রুপ ও অরিজিন সলিউশন্সসহ আরেকটি কোম্পানির গার্মেন্ট পণ্য যায়। এর আগে শনিবার ট্রাকযোগে ওসমানী বিমানবন্দরে পণ্য পৌঁছায়। রাত ৮টা ৫ মিনিটে ফ্লাইটটি ওসমানী বিমানবন্দর ছাড়ে। এ সময় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কর্মকর্তা, ঢাকার রপ্তানিকারকসহ সিলেটের সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
আগে সিলেট থেকে যাত্রীবাহী বিমানে কিছু পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। গতকাল থেকে শুরু হলো কার্গো ফ্লাইট। কার্গো ফ্লাইটের মালামাল রাখার জন্য ২০২২ সালে ১০০ টন ক্ষমতার এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ হয় এই বিমানবন্দরে। ওই বছর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও লাভ করে। কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার সুবিধার্থে এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন ও এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।
সিলেটের আমদানি-রপ্তানিকারক মো. আবুল কালাম বলেন, ‘কার্গো ফ্লাইট চালু হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। ব্যবসায়ীরা কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন। আমদানি করারও ভালো সুযোগ রয়েছে। কার্গো ফ্লাইট চালু যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের সকলের।’