নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৮, ২০২৫
০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০২৫
০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি ছিল একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সিলেটবাসী এই দাবি নিয়ে হরতাল পর্যন্ত করেছেন। সিলেটবাসী দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আজকে কার্গো ফ্লাইটের যে যাত্রা শুরু হলো, এটি অব্যাহত থাকলে সিলেটবাসী উপকৃত হবেন। এটি কেবল শুরু।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যাদের নিয়ে আমরা গৌরব অনুভব করি। আমাদের অর্থনীতির সমৃদ্ধি আমাদের রেমিটেন্সের কারণে। এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের সবচেয়ে বেশি এবং বিশাল অংশ এই সিলেটের। কিন্তু সেই হিসেবে সিলেটের মানুষ তাদের ন্যায্য হিস্যা বলতে যা বোঝায় প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যুষিত সিলেট তারা সেটা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলেন। সিলেটে এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে যে যাত্রা শুরু হলো এটি কেবল শুরু। আমি বিশ্বাস করি, এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সিলেটের মানুষকে আর অন্তত তাদের দাবির জন্য আকুতি জানাতে হবে না। বিশেষ করে বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের একটা সংস্কৃতি হচ্ছে আমরা যে যেখানে থাকার কথা না সে সেখানে থাকি। যে যেটা বলার কথা না সে সেটা বলি। কিন্তু আমি দীর্ঘ প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা দেখলাম, বিমানবন্দরে কাটালাম। বিমানবন্দরের প্রশস্তকরণের যে কাজ হচ্ছে, বড় কর্মযজ্ঞ, এই কর্মযজ্ঞের পেছনে একটা লুটেরা শ্রেনি থাকত সবসময়। হাজার হাজার, শত শত কোটি টাকা লুটপাটের চক্রান্ত সেখানে চলছিল। এবং খুব সুক্ষ্মভাবে আপনাদের এই উপদেষ্টা বিষয়টি ধরতে পেরেছেন, সেটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। এই যে উন্নয়নের নামে তারা গল্প বানানো, ন্যারেটিভ বাংলাদেশের নামে প্রচার করেছিল। তারা মানে যারা চলে গিয়েছিল। তাদের সেই বিষয়গুলো তিনি ধরতে পেরেছেন ভালোভাবে। তাতে আমি খুব আবেগপ্রবণ। এ ধরণের মানুষ আসলে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় খুব দরকার।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুমড়ে, মুচড়ে, পচে যাওয়া, গলে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে তুলে আনার জন্য কিছু মানুষ কাজ করছেন। আমি বলছি না, সব সেক্টর সর্বোতভাবে কাজ করছে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ যে কাজ করছেন। আমি আজকে খুব আনন্দিত- দেখলাম তিনি খুটিয়ে খুটিয়ে প্রতিটি বিষয় দেখবার যে একটা প্রয়াস তার এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। এই বাংলাদেশটাই আমরা চাই। এই পরিবর্তনটাই চাই। যাতে নিজের সকিয়তায় আমরা যাতে দাঁড়াতে পারি। আমাদের মগজকে যাতে কেউ কিনতে না পারে, আমার বিবেককে যাতে বন্ধক দিতে না হয়। সেই সংষ্কৃতি আমরা লান করতে চাই। কোনো ধরণের দুর্নীতি যাতে আমাদের গ্রাস করতে না পারে।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, আজকে এই যে কর্মযজ্ঞ শুরু হলো। বাংলাদেশের মানুষ চায় আমরা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াবো। এই মালামালগুলোই কিন্তু পরিবহন হতো। আরেকটি দেশে সড়কপথে যেত লরিতে করে। সেখান থেকে এই কার্গো বিমান দিয়েই কিন্তু ইউরোপে যেত, স্পেনে যেত। এখন যেটা হচ্ছে সেই দেশে আর যেতে হচ্ছে না। এখন বাংলাদেশেই এই কার্গো প্লেনটি আসছে। এবং সিলেট থেকে সপ্তাহে অন্তত দুটি ফ্লাইট তারা চালু করবে।
তিনি বলেন, সার্ভিস প্রোভাইটার যে সকল প্রতিষ্ঠান আছে আমরা যদি মনে করি এই যে বিমানে আমরা কাজ করছি অথবা আমরা সিভিল এভিয়েশনে কাজ করছি এবং আমরা মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য। বলি যে আমরা সেবা দিচ্ছি, এই সেবাদানকে আমরা নেহাতই সেবা হিসেবে যেন দেখি। আমার কোনো প্রবাসীর ব্যাগ যাতে আর কাঁটা ছেড়া না হয়। আবার কোনো প্রবাসীকে যেন হেনস্তার শিকার হতে না হয়। তারা যাতে খুব নির্বিঘ্নে তার কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলে, তার লাগেজের ওজন যদি পরিমাণের বেশি হয় তাকে যাতে হেনস্তার শিকার হতে না হয়। এই বিষয়গুলো আপনারা যাতে সার্ভিস করেন সেটাতে আপনাদের মনযোগী হতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে এই গরীব দেশের প্রবাসী মানুষটি তার ভিটামাটি বিক্রি করে প্রবাসে গিয়ে তারা যে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে সেই রেমিটেন্স দিয়েই অর্থনীতির ভিত মজবুত হচ্ছে। এবং এই গরীব মানুষের টেক্সের পয়সার আপনার বেতন হচ্ছে। সুতরাং সেদিকেও আপনার নজর রাখতে হবে। সবসময় আমি নিজেকে উর্ধ্বতন ভাবব, এবং অন্যকে অধস্তন ভেবে তাকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করব এটি হবে একটি বড় বৈষম্য। সেটি দূর করতে হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্বিতীয়ত বিষয় আপনাদের যারা আমরা সেবা গ্রহণ করি। বাংলাদেশে একটা অদ্ভুত সংস্কৃতি আছে। আমরা সবসময় একটু প্রিভিলাইজড হতে চাই। একটু ভিআইপি ভাবি। আজকে আমি অন রেকর্ড বলতে চাই, সিলেটে আমরা দেখি ভিআইপি ব্যবহারের প্রবণতা। যখনই আমি ভিআইপি ভাবি নিজেকে, বিশেষ করে যারা রাজনৈতি করেন মানুষের জন্য, যখনই আপনি নিজেকে ভিআইপি করলেন তখনই আপনি সাধারণ মানুষ থেকে আপনাকে বিচ্ছিন্ন করলেন। এরপর আপনি সেখানে এনটাইটেল কিনা সেটাও আপনার ভাবা উচিত। কারণ যখনই আমি নিজেকে প্রিভিলাইজড ভাববো, তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি কিন্তু পাঁচ জন মানুষকে পেছনে ফেলে দিলাম। আমাকে এন্টারটেইন করতে হবে পাঁচজন-সাতজনকে পেছনে ফেলে। সুতরাং আমি অনুরোধ করব, আমরা যে সমতার কথা বলি, আমরা যে ইক্যুয়েলিটির কথা বলি-আমরা যেন নিজেদের উপরতলার লোক না ভাবি। আমি যেন আমার অবস্থান থেকে আপনাকে আমার মতই ভাবি। বিশেষ করে এই সার্ভিস প্রোবাইডাররা যে সমস্যায় ভোগেন তারা আর ভোগবেন না।
তিনি বলেন, আমরা যে বাংলাদেশের কথা বলছি, একটি নতুন বাংলাদেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং বাংলাদেশের মানুষের সৌভাগ্য যে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের মতো একজন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকে পেয়েছি। এই ব্র্যান্ডকে যদি আমরা ক্যাশ করতে না পারি অধ্যাপক ইউনুসের তাতে যায় আসে না, কিন্তু তা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের হবে। তিনি এসেছেন বাংলাদেশের মানুষের আমানতদার ফেরত দেওয়া জন্য। অবশ্যই এটি অন্তবর্তীকালীন সরকার। মানুষের যে দীর্ঘ পনের বছর ভোটাধিকার লুণ্ঠিত হয়েছে। সেই আমানতদারি যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, মানুষ যাতে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে তার জন্য অধ্যাপক ইউনুস এবং তার উপদেষ্টা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছেন। এই কাজের প্রতি আমাদের সবার সমর্থন থাকা উচিত। আমার অন্তত থাকবে।
এএফ/০১