সুনামগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল সড়ক যোগাযোগ, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ০৪, ২০২৫
০৩:১০ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২৫
০৩:১১ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল সড়ক যোগাযোগ, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা


সুনামগঞ্জে তিন দফা দাবিতে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শুরু হওয়া ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে জেলার সড়ক যোগাযোগ। সোমবার সকাল থেকে জেলার কোথাও থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা, বিশেষ করে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ জরুরি কাজে বাইরে যাওয়া মানুষ।

ধর্মঘটের সূত্রপাত ঘটে রোববার বিকেলে। সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাসভাড়া নিয়ে শ্রমিকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর জেরে পরিবহন শ্রমিকেরা প্রথমে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে অবরোধ করেন। পরে বাস চলাচল বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেন।

শুধু বাস নয়, সোমবার সকাল থেকে সিএনজি অটোরিকশাও বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। কেউ কেউ চালাতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়।

সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আত্মীয়কে দেখতে যাওয়ার জন্য সকালে বাস টার্মিনালে আসেন তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা এরশাদ মিয়া। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় তিনি পড়েন চরম বিপাকে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না, প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।’

ঢাকা ফেরত পর্যটক সামিয়ান ইসলাম বলেন, ‘টিকিট কেটে রেখেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি বাস বন্ধ। কোথাও যেতে পারছি না, বিপদে পড়েছি।’

সুনামগঞ্জে একটি দূরপাল্লার পরিবহনের ব্যবস্থাপক জানান, রোববার সন্ধ্যার পর শ্রমিকেরা বাস বন্ধের ঘোষণা দিলে যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেকে সিলেটে বিকল্প উপায়ে গেলেও সোমবার থেকে সেটিও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, জনগণের হয়রানি ঠেকাতে প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানান, তাদের তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের বিচার, কারাবন্দি শ্রমিক দেলোয়ার হোসেনের মুক্তি।

রোববার সকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী শান্তিগঞ্জে নামার সময় বাসভাড়া নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। শ্রমিকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা বাস ভাঙচুর ও এক শ্রমিককে মারধর করেন। পরে শ্রমিকেরা শহরের টার্মিনাল এলাকায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন।

জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে না। একজন শ্রমিক পাঁচ মাস ধরে জেলে, আরেকজন হামলার শিকার হলেও পুলিশ আসামি ধরছে না। এ অবস্থায় আমরা কাজ করতে পারছি না।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাসের সহকারীর কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেওয়া হয়। এ থেকেই মূলত উত্তেজনার সূত্রপাত।

সাময়িক এই সংকট নিরসনে প্রশাসন, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে দ্রুত সমাধান দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাতে না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি এবং জনদুর্ভোগ বাড়তে পারে।

জিসি / ০৪