মধ্যবিত্তদের কাছেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাচ্ছেন নাট্যকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ০৭, ২০২০
০৫:১৩ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৭, ২০২০
০৯:০৩ অপরাহ্ন



মধ্যবিত্তদের কাছেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাচ্ছেন নাট্যকর্মীরা
করোনার প্রভাবে কার্যক্রমে ধীরগতি

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্টি পরিস্থিতিতে সিলেট নগরের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের মতো তাদের অনেককে ভোগতে হচ্ছে খাদ্যসংকটে। পারিপার্শ্বিকতার কারণে তারা সাহায্যের হাতও পাততে পারছেন না। ফলে কোন ধরণের ত্রাণও জুটছে না তাদের। তবে তাদের বিষয়টি মাথায় রেখে আলাদা উদ্যোগ নিয়েছেন সিলেটের নাট্যকর্মীরা। ফোন করে তাদেরকে জানালে পরিচয় গোপন রেখেই তাদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। ফলে নিম্ন বিত্তদের পাশাপাশি মধ্য বিত্তরাও উপকৃত হচ্ছে নাট্য পরিষদের এই উদ্যোগ থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী সিলেট মিররকে জানান, তিনি একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তার বেতন ১২ হাজার টাকা। যার প্রায় পুরোটাই চলে যায় বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে। ছয় সদস্যের পরিবারের বাকি ব্যয় সংকুলান করতে তিনি একাধিক টিউশনি করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেগুলো আপাতত বন্ধ। গত কয়েকদিন ঘরবন্দি থাকায় হাতের নগদ অর্থ ফুরিয়ে গেছে। এখন তিনি রীতিমতো অসহায় বোধ করছেন। নাট্য পরিষদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বেশ বিব্রতকর। আবার আমার মতো অনেকে নিরুপায়ও।’

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ‘নিম্ন বিত্তের পাশাপাশি মধ্য বিত্তের যারা পরিস্থিতির শিকার আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কেউ যদি সংকটে থাকেন আমাদের নির্দিষ্ট নম্বরে যোগাযোগ করলে আমরা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে।’ ইতোমধ্যে ১৫০০ এর অধিক পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’ 

তবে করোনাভাইরাস সিলেটে আঘাত হানার পর নাট্যকর্মীদের সাহায্য বিতরণ কার্যক্রমেও একটু ধীরগতি নিয়ে আসা হচ্ছে। একান্তই যাদের প্রয়োজন কেবল তাদের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।  এই বিষয়ে নাট্যকর্মী কামরুল হক জুয়েল সিলেট মিররকে বলেন, আজ সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রমে একটু ধীরগতি নিয়ে আসা হচ্ছে। এই সময়ে যাদের ঘরে খাদ্যসামগ্রী থাকবেই না, কেবল তাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে ফোন কল ঠিকই আমরা গ্রহণ করব।

সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আগামী ১১ তারিখ থেকে আমরা আবার পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি।   

নাট্য পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি পরিবারকে ৪ থেকে ৬ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। যে পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি, সেই পরিবারকেই ৪ কেজির অধিক পরিমাণে চাল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু এবং একটি করে সাবান দেওয়া হচ্ছে প্রত্যেক পরিবারকে। প্রয়োজনে দ্বিতীয়বার খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পরিবারগুলোকে।

সিলেট নগর ও এর আশপাশের এলাকার ৫ হাজার পরিবারকে সাহায্য করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের নাট্যকর্মীরা। ৬টি মোটরসাইকেল ও ৩টি গাড়ির মাধ্যমে সেগুলো পৌঁছে দিচ্ছেন নাট্যকর্মীরা।’ এক্ষেত্রে সিলেটের সংস্কৃতিকর্মী, রাজনীতিবীদ, সমাজসেবী এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়।

তবে সাহায্যের জন্য সম্মিলিত নাট্য পরিষদ এতদিন তিনটি হটলাইনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করলেও এখন তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রজত কান্তি গুপ্ত। তিনি বলেন, ‌‌‘এতদিন তিনটি হটলাইন নম্বর ২৪ ঘন্টা খোলা থাকলেও এখন তাতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে নির্ধারিত একটি নম্বরে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩ট পর্যন্ত যে কেউ সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন।’ খাদ্যসামগ্রী সহায়তার জন্য ০১৭২৯ ২০০৯৮৪ নাম্বারে কল করার জন্য নাট্য পরিষদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

 

আরসি-০১/এএফ-১২