দোয়ারায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু : খাটিয়া ব্যবহারে বাধা!

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি


এপ্রিল ১০, ২০২০
১০:৫৮ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১০, ২০২০
১০:৫৮ অপরাহ্ন



দোয়ারায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু : খাটিয়া ব্যবহারে বাধা!

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যাওয়া এক যুবকের লাশ দাফনে মসজিদের খাটিয়া ব্যবহার করতে না দেয়া ও দাফনের সময় গোসল না করানোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তবে এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেছে উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই যুবকের সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো একটি ছবি ভাইরাল হলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে করোনাভাইরাসের উপসর্গ জ্বর, গলা ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় বক্তারপুর গ্রামের মো. সালাম (২২)। তিনি সিলেটের একটি ইটভাটায় কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পরদিন বুধবার সকালে করোনা উপসর্গে মারা যাওয়ায় তার নমুনা সংগ্রহ করা ও দাফনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও  পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িতে উপস্থিত হন। সালামের নমুনা সংগ্রহ করার পর তার লাশ গোসল না করিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করেন কর্মকর্তারা।

এ সময় সালামের মা সালেমা বেগম তার ছেলের লাশ গোসল করানোর জন্য পানি এনে দিলেও উপস্থিত কর্মকর্তারা বাধা দেন বলে অভিযোগ পরিবারের। তাদের অভিযোগ, লাশ বহনের জন্য খাটিয়া দেয়নি গ্রামের মসজিদ। পরে অন্য একটি গ্রাম থেকে খাটিয়া নিয়ে এলেও সেই খাটিয়ায় লাশ শোয়াতে বাধা দেন ইউপি সদস্য শরিফ উল্লাহ। এছাড়া নিয়মানুযায়ী করোনার উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা দাফন করার কথা থাকলেও সেটিও করেননি তারা। পরে মারা যাওয়া সালামের বাবা জইবুর রহমান এবং তার দুই ছেলে খালিক ও আলীনূর মিলে লাশটি দাফন করেন।

সালামের মা সালেমা বেগম বলেন, আমার ছেলে মারা গেছে কিন্তু কেউ আগাইয়া আইছে না। স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশের লোকজন আইয়া আমার ছেলের শরীরও একটা পাউডার ছিটাইয়া দিছে আর একজন হুজুর আনছে। কিন্তু আমার ছেলেরে গোসল করাইছে না। আমি তারারে পানি আনিয়া দিলেও তারা আমার ছেলেরে গোসল করায় নাই। আমার ছেলের লাশে কেউ হাত দেয়নি, তার বাবা ও ভাইরা মিলেই সবকিছু করছে। আমার ছেলেরে খাটিয়ায় তুলতে দিসে না মেম্বারে। আমারে গালিগালাজ করছে কেনে আমি ছেলেরে খাটিয়ায় তোলার কথা কইলাম।  

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন আমারে আমার ছেলের রিপোর্ট দিতে অইবো। আমার ছেলের এসব কিছু (করোনাভাইরাস) আছিল না। আমার ছেলের রিপোর্টে যদি এসব কিছু না আসে, তাহলে আমি পুলিশের মাধ্যমে আমার ছেলের লাশ আবার উত্তোলন করে শরিয়ত অনুযায়ী দাফন করাইমু।

মৃত সালামের বাবা জইবুর মিয়া বলেন, আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর মেম্বার আমারে বলে লাশ যেন কিছু না করি। পরদিন পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোক আইসা আমার ছেলের শরীরের নমুনা নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আমার ছেলেরে খাটিয়ায় তুলতে দিসে না। যারা আইছিল, তারা তাড়াহুড়া করছে। পরে আমি আর আমার দুই ছেলে মিলিয়া তারে দাফন করি আর সবাই দূরে দাড়াইয়া রইছিল।

তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া শ্রমিক মো. সালামের দাফন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হয়েছে বলে দাবি করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন। তাদের দাবি, লাশ তার পরিবারের লোকজন স্পর্শ করেননি। স্বাস্থ্য বিভাগের লোকেরাই লাশ দাফন করেন।   

আর অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য শরিফ উল্লাহ বলেন, তার পরিবারের লোকজন স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশের উপর চড়াও হয়। তারা দাবি করে, কেন তাদের ছেলের মৃত্যুকে করোনাভাইরাসের নাম দিয়ে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এ সময় মারা যাওয়া সালামের মা সবাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরবর্তীতে পঞ্চায়তের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়ে আসা খাটিয়া ফেরত নেওয়া হয়। আমি তাদের কোনো গালিগালাজ করিনি।

দোয়ারাবাজার উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সুমন বলেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশে কেউ হাত দেয়নি। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনই তার দাফন সম্পন্ন করেছে। এ সময় পরিবারের লোকজন অনেক দূরে অবস্থান করছিল।

দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশেম বলেন, লাশ দাফনের সময় আমার পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলে। স্বাস্থ্য বিধি ও শরিয়ত বিধি মেনেই তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এখানে তার পরিবারের কেউ লাশে হাত দেয়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি জেনেছি। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আমি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। তদন্ত কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে তদন্ত করে আমাদের রিপোর্ট দেবেন।

সিভিল সার্জন ডা. মো. শামস উদ্দিন বলেন, দোয়ারাবাজারে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত যুবকের নমুনা পরীক্ষার জন্য গত বুধবার সিলেটে পাঠানো হয়েছে। এখনো রিপোর্ট আসেনি।