দিরাইয়ে চেয়ারম্যানের স্বজনদের হাতে লাঞ্ছিত চিকিৎসক

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি


এপ্রিল ১২, ২০২০
১১:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১২, ২০২০
১১:৫০ অপরাহ্ন



দিরাইয়ে চেয়ারম্যানের স্বজনদের হাতে লাঞ্ছিত চিকিৎসক
নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই, ছেলে ও ভাগ্নেসহ স্বজনরা। অসুস্থ উপজেলা চেয়ারম্যানকে তার বাসায় দেখতে না যাওয়ায় স্বজনরা আজ রবিবার (১২ এপ্রিল) সকালে হাসপাতালে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসককে অশ্লীল ভাষায় গালাগালসহ শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করতেও তেড়ে যান।

কর্তব্যরত ওই চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে এ ঘটনার বিচার না হলে নিরাপত্তার কারণে দায়িত্ব পালন করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনায় রবিবার বিকেল ৪টায় লাঞ্ছিত চিকিৎসক দিরাই থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও হুমকি-ধমকি দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে সুনামগঞ্জ বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন সুনামগঞ্জ)। তারা দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৬টায় জরুরি বিভাগে কাজ করছিলেন ৩৯তম বিসিএসের চিকিৎসক স্বপন সরকার। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাগ্নে রাজিব আহমদ জরুরি বিভাগে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বপন সরকারকে বলেন তার মামা উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরীকে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দিতে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জরুরি বিভাগ ছেড়ে কোনো বাসায় গিয়ে রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারবেন না জানালে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি শুরু করেন রাজিব। এ সময় হুমকি দিয়ে তিনি চলে যান।

কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই আবুল কাশেম চৌধুরী ও ছেলে ইফতেখারুল আলম জাকি চিকিৎকের কক্ষে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এ সময় ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যানের ভাই লাথি দিয়ে চিকিৎসকের চেয়ার ফেলে দিয়ে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। হৈ চৈ শুনে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ আরও দুইজন চিকিৎসক ছুটে এলে তারা তাদেরকেও গালিগালাজ করেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তাদের সঙ্গে একজন চিকিৎসক তার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। যাওয়ার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বপন সরকারকে রাস্তায় ফেলে পেটাবেন বলে হুমকি দেন চেয়ারম্যানের স্বজনরা।

কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বপন সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি ইমার্জেন্সি ছেড়ে যেতে পারতাম, কিন্তু তখন যদি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী আসতেন, তখন ইমার্জেন্সিতে কে রোগী দেখত? চেয়ারম্যান সাহেবের ভাই, ছেলে আর ভাগিনা? আমি যাইনি, তাই উনারা হুমকি দিয়েছেন। এই মহামারীর সময়ে আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। এর মাঝে এ রকম হুমকি, গালাগালি শুনলে আর কাজ করতে ইচ্ছে করে না। তখন মনে হয় এদেশে সবচেয়ে বড় পাপ ক্ষমতাশালী না হওয়া, দ্বিতীয় পাপ ডাক্তার হওয়া।’

এ বিষয়ে দিরাই উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ইমার্জেন্সি ডাক্তারের সঙ্গে চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয়রা খারাপ আচরণ করেছেন। পরে বাসায় গিয়ে ডাক্তার চেয়ারম্যান সাহেবকে দেখে এসেছেন। বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে।

সুনামগঞ্জ বিএমএ'র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাস বলেন, করোনার এই ভয়াল সময়ে জীবন বাজি রেখে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রভাবশালীরা হাসপাতালে ঢুকে যেভাবে ডাক্তারদের অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করছে, রাস্তায় ফেলে পেটানোর কথা বলছে, হুমকি-ধমকি দিয়েছে, তা নিন্দনীয়। এমন ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই। 

এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল বলেন, দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।