তাহিরপুরে ত্রাণের তালিকায় ইউপি সদস্য ও স্বজনরা!

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


এপ্রিল ১৯, ২০২০
১০:৩৩ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০২০
১০:৩৫ অপরাহ্ন



তাহিরপুরে ত্রাণের তালিকায় ইউপি সদস্য ও স্বজনরা!
প্রতিবাদ করায় সাংবাদিককে 'হুমকি'

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আব্দুল হক

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঘোষিত লকডাউনে কর্মহীন হয়ে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির সংকটময় মুহূর্তে সরকার অসহায় দিনমজুর, অসচ্ছল পরিবারের দিকে ত্রাণ সহায়তার হাত বাড়ালেও দেশের বিভিন্ন এলাকার চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা ত্রাণ সহায়তা ও নামের তালিকায় একের পর এক অনিয়মকে যেন নিয়মে পরিণত করেছেন!

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অস্বচ্ছল, অসহায় পরিবারের পরিবর্তে খাদ্যসামগ্রী সহায়তার তালিকায় এক ইউপি সদস্য নিজের মা, শাশুড়ি, শ্যালক ও মেয়ের জামাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য।

ঘটনার সূত্রপাত তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি খাদ্যসামগ্রী সহায়তার অগ্রাধিকার তালিকায়। এই তালিকা প্রকাশের পর এলাকায় অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাদাঘাট (উত্তর) ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডটি জাংগালহাটি, লামা শ্রম, রাজারগাঁও, ডালারপাড় ও লাউড়েরগড় গ্রাম নিয়ে গঠিত। এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদত আলীর ছেলে আব্দুল হক।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া অস্বচ্ছল, অসহায় পরিবারকে সরকার কর্তৃক বরাদ্দ সহায়তার তালিকায় ইউপি সদস্য আব্দুল হকের স্বাক্ষর ও সিলমোহরকৃত নামের তালিকায় ৪৮টি নাম রয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগমের জন্য বরাদ্দ ছিল ১০টি নাম। আর অবশিষ্ট ৩৮টি নামের মধ্যে ১০ জনই আব্দুল হকের পরিবারের সদস্য।

তালিকায় উল্লেখিত ক্রমিক নং-৪ জরিনা খাতুন, স্বামী  মৃত সাদত আলী ইউপি সদস্যের মা), ক্রমিক নং-৩৫ আব্দুল হক, পিতা সাদত আলী (ইউপি সদস্যের নিজের নাম মোবাইল নম্বরসহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে)। এছাড়াও তালিকায় আছে আব্দুল হকের শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকা, অপর এক শ্যালকের স্ত্রী, ইউপি সদস্যের মেয়ের জামাই ও মামা শ্বশুরের নাম। অনেক নামের সঙ্গে নেই পিতা কিংবা স্বামীর নামের মিল।

এর আগেও ইউপি সদস্য আ. হকের বিরুদ্ধে ভিজিএফসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় সহায়তা তালিকা প্রকাশের পর সাংবাদিক আলম সাব্বির লাউড়েরগড় বাজারে ইউপি সদস্য আব্দুল হককে বলেন, সহায়তা তালিকায় সত্যিকারের অসচ্ছল লোকদের যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এ পরিস্থিতিতে সহায়তা তালিকায় নিজের নাম বাদ দিয়ে অসহায় লোকজনের কথা চিন্তা করা জরুরি। 

ওই সাংবাদিক জানতে চান, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে এক পরিবারে ৩ জনের নাম না দিয়ে দেখে-শুনে দিলে কী হয়? 

এ কথা বলার পর ইউপি সদস্য উত্তেজিত হয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। সেখানে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন ইউপি সদস্যের এমন অসদাচরনের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদও জানিয়েছেন। পরে লাউড়েরগড় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই ইউপি সদস্য সাংবাদিককে 'দেখে নেবেন' বলে হুমকিও দেন।

ঘটনার বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে অবহিত করেন সাংবাদিক আলম সাব্বির এবং ইউএনও বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। 

ঘটনার বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে ইউপি সদস্য আব্দুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমিও অসচ্ছল লোক, ত্রাণ পাওয়ার অধিকার আমারও আছে। আমি কি ত্রাণ পেতে পারি না? আর তালিকায় কে বা কারা আমার নাম দিয়েছে তা আমার জানা নেই।

আপনার স্বাক্ষরসহ সিলমোহর দেওয়া আছে তালিকায়- এর জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাংবাদিককে আমি কোনো হুমকি দেইনি। বরং ওই সাংবাদিকই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। 

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যনার্জি বলেন, ঘটনার খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

 

এএইচ/আরআর