হাওরের ধান কাটার মেশিন পড়ে আছে গুদামে

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


এপ্রিল ১৯, ২০২০
১১:০৬ অপরাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০২০
১১:০৬ অপরাহ্ন



হাওরের ধান কাটার মেশিন পড়ে আছে গুদামে
কৃষকের হাতে নেই ভর্তুকির টাকা

একদিকে করোনার থাবা, অন্যদিকে হাওরের পাকা ধান নিয়ে শ্রমিক না পাওয়ার দুশ্চিন্তা। এই শাখের করাতে এখন হাওরের চাষীরা। কৃষকের ফসল দ্রুততম সময়ে কেটে ঘরে তুলতে সরকার হাওরের কৃষকদের ভর্তুকি দিয়ে এই মৌসুমে ধান কাটার কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার মেশিন দিয়েছে। কিন্তু করোনা সংকটে বিপর্যস্ত কৃষক এখন ভর্তুকির টাকা দিয়ে মেশিন নিতে পারছে না। তাই অধিকাংশ মেশিন পড়ে আছে গুদামে। ফলে হাওরের ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে সরকার এই মেশিনগুলো বরাদ্দ দিলেও এর সুফল ভোগ করতে পারছেন না কৃষকরা। এছাড়া এসব মেশিন হাওরের জমির ধান কাটার জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী নয় বলে জানিয়েছেন হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে চলতি মাসে ৪০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি মেশিনের মূল্য ১১ লাখ থেকে ২৯ লাখ টাকার মধ্যে। এই মেশিনে ঘন্টায় তিন একর জমির ধান কাটা সম্ভব। তবে হাওরের বদলে এই মেশিন আমন ধানের জন্য উপযুক্ত থাকায় সেগুলো গভীর হাওরে নামানো যায় না বলে জানা গেছে। এছাড়াও চলতি মাসে আরও ২৭টি রিপার মেশিনও বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই মেশিনের মূল্য ২-৩ লাখ টাকা। এই যন্ত্রে ঘন্টায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা যায়। তবে এই দু'টো যন্ত্রই হাওরের জমির জন্য উপযুক্ত নয় বলে কৃষক ও হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানিয়ে আসছেন। হাওরের কান্দা শ্রেণির অল্প জমির ধান এই মেশিনে কাটানোর সুযোগ রয়েছে, যা এই মৌসুমে কিছুটা হলেও কৃষকের কাজে দেবে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার সুনামগঞ্জে সম্প্রতি এই যন্ত্রগুলো বরাদ্দ দেয়। ৭০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে এই মেশিন কৃষকদের দেওয়া হয়। কিন্তু এখন করোনার কারণে কৃষকরা নানা সংকটে আছেন। তাদের হাত খালি, এই অবস্থায় ভর্তুকির এই মেশিন নিতে পারছেন না অধিকাংশ কৃষক। ফলে ধান কাটার এই সময়ে মেশিনগুলো সরকারি গুদামেই পড়ে আছে। এ অবস্থায় কৃষকরা বিনা জামানতে মেশিনগুলো বিশেষভাবে বণ্টনের দাবি জানিয়েছেন।

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, সরকার কৃষককে ধান কাটার জন্য এই যন্ত্র দিয়েছে। যদিও এই যন্ত্র হাওরের জন্য পুরো উপযোগী না, তারপরও কিছু জমির ধান কাটা সম্ভব। কিন্তু ধান কাটার মৌসুম শুরু হলেও কৃষক টাকা দিতে না পারায় মেশিনগুলো অলস পড়ে আছে। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ডিড করে মেশিনগুলো আপাতত বিনামূল্যে বণ্টন করা উচিত। ফসল তোলার পর কৃষক টাকা দেবে। না হলে এখন এই করোনা সংকটে কেউ মেশিন নিতে পারবে না।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার ৪০টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও ২৭টি রিপার মেশিন দিয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি মেশিন নিয়েছেন কৃষকরা। বাকিরা এখন এই মেশিনগুলো নিতে চাচ্ছেন না। তারা জানিয়েছেন হাতে টাকা নেই। বিনা টাকায় আবার এই মেশিন কৃষককে দেওয়ার নির্দেশনা নেই। তাই গুদামে পড়ে আছে।

 

এসএস/আরআর