কুলাউড়ায় চা শ্রমিকদের ‘ভুখা লংমার্চ’

কুলাউড়া প্রতিনিধি


এপ্রিল ২০, ২০২০
০২:১৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০২০
০২:২২ পূর্বাহ্ন



কুলাউড়ায় চা শ্রমিকদের ‘ভুখা লংমার্চ’
১২ সপ্তাহ মজুরি পান না শ্রমিকরা * কর্মকর্তারা বেতনহীন ১১ মাস * ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম

বকেয়া মজুরী আদায়ের জন্য কুলাউড়ার কালিটি চা বাগানের শ্রমিকরা `ভুখা লংমার্চ’ করে। ছবি- সংগৃহীত

চা শ্রমিকরা কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিতই। তবু মজুরি পান না ১২ সপ্তাহ ধরে। অনাহার তাই করোনা ভাইরাসের চেয়ে প্রকট আকার ধারণ করেছে। দিচ্ছি, দেব বলে সময় ক্ষেপণ করে কাটিয়ে দিচ্ছেন বাগান কর্তৃপক্ষ। বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা তাই ‘ভুখা লংমার্চ’ করেছেন। দিয়েছেন ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা বাগানের শ্রমিকরা আজ আজ রবিবার (১৯ এপ্রিল) এক ‘ভুখা লংমার্চ’-এ এসব তথ্য জানান। সকাল ১১ টায় উপজেলা সদরের অভিমুখে ‘ভুখা লংমার্চ’ করেন চা শ্রমিকরা।

চা  বাগানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের ১১ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে বলেও এসময় জানা গেছে। 

শ্রমিকরা নিজেদের ১২ দফা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও খালি থালা-বাসন নিয়ে কালিটি চা বাগান থেকে দুই ঘণ্টা লংমার্চ করে কুলাউড়া পৌঁছান। বকেয়া মজুরি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধ না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কথাও বলেছেন শ্রমিকরা।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালিটি বাগানটি ‘জোবেদা টি কোম্পানি লিমিটেডের’ নামে সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। বাগানে এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি সপ্তাহের শেষে বৃহস্পতিবার দৈনিক ১০২ টাকা হিসাবে তাদের মজুরি পাওয়ার কথা। কিন্তু কাজ করেও ১২ সপ্তাহ ধরে তারা মজুরি পাচ্ছেন না। বাগানের শ্রমিক সরদার ও কর্মকর্তাদেরও ১১ মাসের বেতন আটকা পড়ে আছে।

বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার বলেন, ‘শ্রমিকেরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। এরপর দীর্ঘদিন ধরে মজুরি পাচ্ছেন না। ঘরে চাল-ডাল না থাকায় অনেককেই উপোষ দিন কাটাতে হচ্ছে। বাগান কর্তৃপক্ষ—আজ দিচ্ছি, কাল দিচ্ছি—বলে সময়ক্ষেপণ করছে।’

ছাত্র-যুবক নেতা দয়াল অলমিক বলেন, বাগানে চিকিৎসক নেই। শ্রমিকেরা বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করালে বাগান কর্তৃপক্ষ খরচ দেয় না। বাগানের এসব সমস্যার প্রতিকার চেয়ে ৫ জানুয়ারি তারা শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।

চা শ্রমিক নেতা বিশ্বজিত দাস বলেন বলেন, অনাহার তাদের কাছে এখন করোনাভাইরাসের চেয়ে বড় হুমকি। অবিলম্বে এই বাগানের সংকট নিরসন করা না গেলে শত শত চা শ্রমিককে অনাহারে মরতে হবে।

মজুরি বন্ধের ব্যাপারে কালিটি বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দাশ বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে সময়মতো টাকা না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাগানের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১১ মাস ধরে বেতন বন্ধ আছে।

চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শম্ভু দাশ বলেন, বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা। শ্রমিকদের আগের মজুরিরও বেশ কিছু টাকা বকেয়া পড়ে আছে। অনেক শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচাঘরে বাস করেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অবসরে যাওয়া শ্রমিকেরা তহবিলের টাকা পাচ্ছেন না। অথচ প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি থেকে সাত শতাংশ করে ভবিষ্য তহবিলের টাকা কেটে রাখা হয়। এর সঙ্গে মালিক পক্ষ থেকে সাত শতাংশ যোগ করে টাকা শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়া কথা। বাগান কর্তৃপক্ষ তা-ও করছে না।

কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফি আহমেদ সলমান বলেন, মালিকের সাথে কথা বলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান করব। নয়তো মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

আরসি-০৭/