করোনার সংকটে আউশে স্বপ্ন বুনছেন কমলগঞ্জের কৃষকরা

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


মে ২৯, ২০২০
০২:৪৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৯, ২০২০
০২:৪৮ পূর্বাহ্ন



করোনার সংকটে আউশে স্বপ্ন বুনছেন কমলগঞ্জের কৃষকরা

দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে কৃষি জমিতে চলছে আউশ ধানের আবাদ। বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, বীজ বপনের উপযোগী করে জমি তৈরি ও চারা গাছ রোপনসহ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নানা কাজ চলছে জমিতে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাঠে মাঠে চোখে পড়ছে এমন দৃশ্য। করোনার সংকটকালে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার আউশ চাষীরা।

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত এ উপজেলার কৃষকরা। হঠাৎ করে করোনার ছোবল পড়ায় বোরো ধানও ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংকটে বোরো ফসল ঘরে তোলা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অনেকটাই বিপাকে পড়েছিলেন হাওর ও নদীপাড়ের কৃষককূল। এমন ক্ষতি পোষাতে ভালো ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন প্রত্যাশায় সকাল-সন্ধ্যা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষি জমিতেই সময় পার করছেন চাষীরা।

উপজেলার কমলগঞ্জ পৌর এলাকা, মুন্সিবাজার, পতনঊষারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে আউশ ধানের চারা রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কমলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা। জমিতে পানি সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপন করছেন কৃষকরা। করোনার প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে ঘরের নারী-পুরুষ একত্রে যোগ দিয়েছেন কৃষিকাজে। ভালো ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তারা। করোনাভাইরাসের কারণে এবার চারা রোপনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে তাদের। তারপরও থেমে নেই তারা।

কৃষক রামানন্দ মালাকার, মনির মিয়া, আজিদ মিয়া, কাজল মল্লিকসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এ বছর আউশ ধান রোপনে ঘটেছে ব্যাপক বাধা। আউশের বীজতলা তৈরির সময় বৃষ্টি না থাকায় পানি সেচ করে বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। তাছাড়া করোনাভাইরাসের কারণে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংকট ও নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সময়মতো বীজতলা তৈরি করা যায়নি। এতে করে যথাসময়ে আউশের বীজ বপন ও জমি প্রস্তুত করতে পারেননি তারা। তাই দেরি হলেও জমি প্রস্তুত করে আউশ ধান রোপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

বৃষ্টি হওয়াতে তা আউশ ধান চাষের সহায়ক হয়েছে। চাষের জন্য তৈরি হওয়া জমিতে দ্রুত চলছে রোপনের কাজ। কৃষকদের প্রত্যাশা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলন হবে। আবার অনেক কৃষক প্রায় সপ্তাহখানেক আগেই রোপনের কাজ শেষ করেছেন। তবে সকল চাষীই ভালো ফলনের আশায় ফসলের যত্ন নিতে ক্ষেতের জমিতে সময় দিচ্ছেন। লাগানো চারা ধানগুলোর নানাভাবে পরিচর্যা করছেন তারা। কৃষকরা আরও জানান, তারা ভালো ফলনের আশায় বিআর-০৩, ৪৮ সহ বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাতের ধান আবাদ করছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৮শ ৮৮ হেক্টর।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠকর্মীদের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে আউশ ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ উপজেলার কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ১২ হাজার ৮শ ৮৮ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষাবাদ করছেন এই উপজেলার কৃষকরা।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ২ হাজার ৩শ ৫০ জনের মধ্যে সরকারি প্রণোদনার বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। আউশ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো উৎপাদনের প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।

 

এসডি/আরআর-০৪