শ্রীমঙ্গলে নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি


জুন ০৩, ২০২০
০২:৩০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৩, ২০২০
০২:৩১ পূর্বাহ্ন



শ্রীমঙ্গলে নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য হলেন উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিনারা বেগম। 

এই ইউপি সদস্য বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দিয়ে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তার বিরুদ্ধে টাকা না দিলে কার্ড করে দেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। এসব ভাতার জন্য কার্ড পাওয়ার আগে ও পরে ৫ হাজার টাকা না দিলে কার্ড বাতিল করার হুমকিও দেন এই নারী ইউপি সদস্য। আর টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে বললে নারী সদস্যের হেনস্তার শিকার হতে হয় সাধারণ জনগণকে। 

ভুনবীর ইউনিয়নের বাসিন্দা ছমেদ মিয়া বলেন, বয়স্ক ভাতা পাই না। গেলাম নারী মেম্বারের কাছে। তিনি বললেন ভাতা করে দেবেন। কিন্তু ভাতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। তারপর অনেকদিন ঘোরাঘুরি করেও কার্ড পাইনি। আমি গরিব মানুষ। ভাবলাম কিছু টাকা দিয়েও যদি পাই। পরে মেম্বারকে বলেছি ভাতার টাকা পেলেই ৫ হাজার টাকা দেব। পরে তিনি আমায় কার্ড করে দেন। যেদিন ব্যাংক থেকে আমি বয়স্ক ভাতার টাকা উঠাই, সেদিন তিনি ব্যাংকের নিচে দাঁড়িয়েছিলেন। আমি ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর তিনি ৫ হাজার টাকা নেন। শুধু আমার কাছ থেকেই নয়, আরও কয়েকজনের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন।

জ্যোৎস্না বেগম নামের এক নারী বলেন, আমি গর্ভবতী অবস্থায় ইউপি সদস্য মিনারা বেগমের কাছে গিয়েছিলাম গর্ভভাতার একটা কার্ড করে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন টাকা ছাড়া এসব কার্ড করা যায় না। আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। তিনি বলেন যতবার টাকা পাবো ততবার অর্ধেক টাকা তাকে দিতে হবে। আমি গরিব মানুষ। টাকার দরকার ছিল, তাই আমি রাজি হই। আমি ৪ বার তিন হাজার টাকা করে পাই। এর মধ্যে ৩ বার তিনি টাকা উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেক টাকা (১ হাজার ৫শ) নিয়ে গেছেন। শেষবার আমি তাকে টাকা দেইনি। তিনি এই টাকা নেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেন। বলেন- আর জীবনেও আমার ও আমার পরিবারের কাউকে কার্ড করে দেবেন না।

চেরাগ আলী নামের একজন বলেন, কার্ড করতে নাকি অনেক টাকা লাগে। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে হয়। উপজেলার কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে কার্ড করা যায় না। এই কথা বলে নারী মেম্বার আমার কাছ থেকে কার্ড করার আগে ৫ হাজার টাকা নেন। আমি ঋণ করে তাকে টাকা দেই। পরে আমাকে অনেকদিন ঘুরিয়ে কার্ড করে দেন।

এই গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, তারা কার্ড করার আগেই ওই নারী মেম্বারকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। যারা টাকা দিয়েছেন কেবল তাদের কার্ড হয়েছে। কেউ আগে টাকা না দিলে পরে ভাতার টাকা তুলে দিতে হয়েছে। ৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও তিনি আরও টাকা দাবি করেন। যদি কেউ মুখ খোলে, মেম্বার তাদের কার্ড বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। মেম্বারের লোকজন মারধরের হুমকিও দেয়। তাই কেউ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।

ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) মো. নিয়াজ ইকবাল মাসুদ বলেন, আমাদের কাছেও অনেকে ওই নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ইউপি সদস্য প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ জনগণ ভয়ে তার নামে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন না। তবে আমাদের কাছে এলাকার অনেকে প্রায়ই মৌখিক অভিযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মিনারা বেগম বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো ভাতার কার্ড করার জন্য কারও কাছে টাকা-পয়সা চাইনি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে আমরা সেটা তদন্ত করে দেখি। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।

 

জিকে/আরআর-০৫