আরেক দফা ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রস্তাব

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ০৫, ২০২০
০৮:৩২ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ০৫, ২০২০
০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন



আরেক দফা ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রস্তাব

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় সরকারকে কঠোর হওয়ার তগিদ এসেছে একটি আলোচনা সভা থেকে।

ব্যবসায়ী, কূটনীতিক, আমলা ও উন্নয়ন গবেষকদের এই আলোচনায় মহামারী নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের সমন্বয় জোরদারেরও পরামর্শ এসেছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা, করোনা সংক্রমণ যেভাবে ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের মানুষের জীবনের পাশাপাশি অর্থনীতিরও ক্ষতি হবে বলে সতর্ক করে নতুন করে ১৫ থেকে ২০ দিনের কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছেন ।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘রিসার্জেন্ট বাংলাদেশ: রোডম্যাপ টু রিকভারি’ শিরোনামের এই সংলাপে উন্নয়ন গবেষক আহসান এইচ মনসুর, এমসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরও কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন। শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহও আলোচনায় অংশ নেন।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সংলাপ, গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (বিল্ড) এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ এই সংলাপ আয়োজনে সহযোগিতা করে।

নতুন করে লকডাউনের প্রস্তাব করে নিহাদ কবির বলেন, “আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন যে সক্ষমতা রয়েছে তাতে আমরা ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য যদি একটা কঠোর লকডাউন দিতে পারি তাহলে পরবর্তীতে আমাদের অর্থনীতি পূনরুদ্ধারে ততটাই উপকার হবে।”

এই ব্যবসায়ী বলেন, “এই মুহূর্তে সামনে এগিয়ে যেতে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন না হতে চাইলে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ ছুটির মতো বিভ্রান্তিকর কোনো তথ্য না দিয়ে একেবারে কঠিন একটা লকডাউন দিতে হবে।

“তারপর একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে সকল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ আমাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে হবে।”

নিহাদ কবির বলেন, আমরা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, সবার আগে আমাদের দেশের সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় যারা আছেন তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা করার পর আমরা আমাদের ব্যবসার দিকে তাকাব।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, এই মুহূর্তে স্বল্প মেয়াদি লাভের কৌশল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে না, বরং তাতে ‘বিরাট ক্ষতি’ হয়ে যেতে পারে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, “এখনকার পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিগগির সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের অন্যান্যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশ সময়মতো খুলতে পারবে না।

“আমরা যদি সংক্রমণ বন্ধ করতে না পারি তাহলে চীন থেকে যেসব ব্যবসায়ী অন্য দেশে বিনিয়োগের দেশ খুঁজছে, তখন সেসব ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আসবে না। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে উল্টো আমাদের দেশ থেকে চীনা ও জাপানিরা চলে যেতে পারে।”

পরিস্থিতির উত্তরণে নতুন করে লকডাউন দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, “আরও কিছু দিনের জন্য যদি একটা কঠোর লকডাউন করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে অনেক বেশি লাভ হতে পারে। লকডাউন দিলে কঠোর লকডাউন দিতে হবে। যদি আবার একটা লকডাউনের ঘোষণা দিয়ে এরমধ্যে বাস ট্রেন কিংবা সাধারণ মানুষের যাতায়াত অব্যাহত থাকে তাহলে কিন্তু হবে না।

তবে ভবিষ্যতের যে কোনো সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিতে হবে বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, “আমরা যদি সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে না পারি তাহলে গত চার মাসে আমরা যেসব ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি হবে। সমন্বয়ের অভাবেই আজ আমরা এই অবস্থায় চলে এসেছি। তবে ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”

এই গবেষক বলেন, “মহামারী মোকাবেলায় আমাদেরকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগে আরও মনোযোগী হতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে যে (এই মহামারী) কতটা ভয়ঙ্কর।

শ্রীলঙ্কায় দায়িত্ব পালনের সুবাদে সেখানকার পরিস্থিতি দেখার অভিজ্ঞতা থেকে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহও।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি খাত সমন্বিতভাবে কাজ করেছে।

কিন্তু আমাদের দেশে বিশেষ করে সরকারি অধিদপ্তরগুলোর মধ্যেও সমন্বয় নেই।”

সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এর আগে আসলে লকডাউন দেওয়া হয়নি, তা ছিল সাধারণ ছুটি। এখন নতুন করে লকডাউন দিতে হলে প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষের কাছে কীভাবে খাবার পৌঁছাবেন তার একটা পরিকল্পনা করে যাওয়া দরকার।”

বৈষম্য যাতে আরও বেড়ে না যায় তাও পরিকল্পনায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ব্যবসায়ী নেতা আবুল কাশেম বলেন, প্রতিটি দেশেরই করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রক্রিয়া ভিন্ন হবে।

কারণ একেক দেশের মানুষের লাইফস্টাইল বা বসবাস একেক রকম হতে পারে। আমাদের দেশ সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। তাই অন্য দেশের সঙ্গে মেলানো যাবে না। আমাদের সমস্যা আমরা কীভাবে মোকাবেলা করব তার জন্য সরকারি- বেসরকারি উভয়পক্ষকেই সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”

মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষকে বাঁচানোর জন্যই লকডাউন খুলেছে সরকার। কিন্তু এতে যদি ক্ষতি হয় বা অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”

জেএসএস/এনপি-১৪