সরকারি সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বদলে আমলা নির্ভরতা?

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুন ১৪, ২০২০
০৮:০৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ১৪, ২০২০
০৮:৪৫ অপরাহ্ন



সরকারি সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বদলে আমলা নির্ভরতা?

দেশে করোনাভাইরাস দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা কতটা রয়েছে-এমন প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে রাজনৈতিক চিন্তার ঘাটতি থাকছে। -খবর বিবিসি বাংলার

বিরোধীদল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের চিন্তার কোন ছাপ না থাকায় ঢিলঢালা সাধারণ ছুটি থেকে শুরু করে তা প্রত্যাহার করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতা চোখ পড়ছে।

আসলে সরকারের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব থাকছে কিনা- এবং পরিস্থিতি সামলানোটা সরকারের জন্য কি কঠিন হয়ে উঠেছে—এনিয়ে নানা আলোচনা এখন চলছে।

এপ্রিলের শেষে সাধারণ ছুটির মধ্যে গার্মেন্টস খোলার কারণে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকায় ছুটে এসেছিলেন। সমালোচনার মুখে আবার গার্মেন্টস বন্ধ করা হলে শ্রমিকরা ঢাকা ছেড়েছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কিছুটা ক্ষোভের সাথে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাকে অবহিত না করার কথা তুলে ধরছিলেন।

একটা ন্যাশনাল কমিটি ফর্ম করা হয়েছে। ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান আমাকে করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে। কিন্তু ন্যাশনাল কমিটিতে যে সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের নলেজে নাই। কখন ফ্যাক্টরি খোলা হবে বা খোলা হবে কিনা-সে বিষয়ে আমরা জানি না। মসজিদে নামাজ কিভাবে হবে বা আলোচনা-সে বিষয়েও আমরা জানি না। এবং কখন রাস্তা খুলে দেবে বা বন্ধ করবে- এ বিষয়ও আমরা জানি না। আমি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি, তাদেরকে আমি সদুত্তর দিতে পারি না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের এই বক্তব্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল।

যদিও নানা আলোচনার মুখে মন্ত্রী তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটির প্রধান হলেও স্বাস্থ্য বিষয়েই তার কাজ সীমাবদ্ধ।

তার এই ব্যাখ্যার পরও সরকারের সিদ্ধান্ত বা কৌশল নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

দুই মাস পর সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় কি কোন পরিবর্তন আনা হয়েছে-এ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

করোনাভাইরাস সর্ম্পকিত জাতীয় কমিটি এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সাথে আলোচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব অবহিত হয়েই এই সাধারণ ছুটিসহ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমরা যারা অত্যন্ত কাছাকাছি এবং সশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যেগুলো আছে, তারা সকলে মিলেই কিন্তু প্রত্যেকটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

যদিও প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সব বিষয় তদারকি করছেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বিরোধীদল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ তুলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব না থাকায় এবং আমলা নির্ভরতার কারণে সরকারের সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় আসছে না।

এখানে আসলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কোন ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি যে, সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে জনগণের চিন্তাভাবনার বাইরে। এবং জনগণ যেটা চাচ্ছে, তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

আমরা প্রথম থেকেই যেটা লক্ষ্য করেছি, এখানে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে একটা প্রভাব থাকা উচিত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, সেটা নাই। এখন পর্যন্ত যেভাবে হয়ে আসছে, তাতে মনে হয়েছে যে শুধু গুটিকতক চাটুকার আমলা এবং আর অদৃশ্য কোন শক্তি আছে কিনা জানি না। তাদের দ্বারাই যেন সিদ্ধান্তগুলো আসছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় দফায় সরকারের রয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, এই সরকারেরই গত ১১ বছরে রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট সমাধানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রভাব দৃশ্যমান ছিল।

কিন্তু তারা এখন পার্থক্য দেখছেন করোনাভাইরাস দুর্যোগ সামলাতে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেছেন, এখন সরকার যেভাবে কাজ করছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিতে হচ্ছে।

অন্যান্য সময় আমরা দেখেছি, যদিও আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা নির্ভর দল, কিন্তু তারপরও অন্যান্য সময়ে তারা সামগ্রিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই দেখেছি যে, কোন এলাকায় মন্ত্রী এমপি বা রাজনৈতিক নেতারা নেই। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান মেম্বাররাও নেই।

আর ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের বিষয়গুলোতো আমরা জানি। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে শেখ হাসিনাকে এককভাবেই মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং উনি এককভাবেই নির্দেশনা দিচ্ছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভিতরেও সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন বা নানা আলোচনা রয়েছে। দলটির মাঠের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ মনে করেন, সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা কম।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে এই কঠিন সময়ে তিনি কিন্তু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এবং সত্যিকার অর্থে তার নির্দেশগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারতাম বা পারি তাহলে এই সঙ্কট থেকে মুক্তিলাভ কঠিন হবে বলে আমি মনে করি না। তবে একটা কথা বলি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদিও এখানে সরাসরি জড়িত কম। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকেও কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেছেন, তবে আমি মনে করি অতীতেও দুর্যোগে রাজনৈতিক নেতৃত্বই কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। আমি এটুকুই বলবো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশগুলো পালন করার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি সম্পৃক্ত হয়, তারা যদি কাজ করে বা এখন যা করে চলেছে, তাহলে সমস্যাটা সমাধানে আমরা সক্ষম হব।

লকডাউন না বলে সরকার সাধারণ ছুটি দিয়েছিল ৬৬দিন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সেই পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে বলে সরকারের সাথে সম্পৃক্ত সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন।

তাদেরও অভিযোগ রয়েছে যে, সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর জন্য তাদের পরামর্শ আমলে না নিয়ে অর্থনৈতিক সব কর্মকান্ড চালু করা হয়েছে।

সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত সরকারের কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো: শহিদুল্লাহ বলেছেন, তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের পরামর্শ সরকারের কাছে দেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের সুপারিশগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

আমাদের বক্তব্য ছিল, লকডাউনটা হলে প্রপার লকডাউন হতে হবে। যেমন আমরা দুই মাসের বেশি সময় লকডাউন করলাম। কিন্তু সেভাবে না করে, প্রথম তিন সপ্তাহ যদি কঠোরভাবে লকডাউন করা হতো, তারপর আস্তে আস্তে শিথিল করলে ফলাফলটা আরও ভাল পাওয়া যেতো। যেটা হয়ে গেছে। এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, জোন লকডাউন যেটা করা হচ্ছে, সেটাও প্রপার ওয়েতে করা হলে এখনও এই রোগটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।

এখন প্রতিকারের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহালদশা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা খবর প্রকাশ হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতির জন্য সরকারের কৌশলের ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংক্রমণ যেটা হয়েছে, এটাতো অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে গেছে। এখন বড় যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা হচ্ছে, কেউ চিকিৎসা পাচ্ছে না।এমনকি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী অক্সিজেনও পাচ্ছেন না। অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। এগুলোর ব্যাপারে যদি পলিটিক্যাল ডাইমেনশন থাকতো বা রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থাকতো, তাহলে কিন্তু একটা জায়গায় এসে পৌঁছাতে পারতো।

মির্জা ফখরুল বলেন, একটা রাজনৈতিক সরকার এত ভুল করবে কেন? যেখানে ভারত লকডাউন করেই চললো, আর আমরা সেখানে এমনভাবে ব্যবস্থা নিলাম যে একেবারে লেজেগোবরে অবস্থা করে ফেললাম। এসব করে এখন এই ভাইরাস সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছি।

আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতা কর্মীদেরও অনেকে মনে করেন যে, পরিস্থিতির দায় সরকারের ওপরই আসছে।

কয়েকটি জেলা থেকে দলটির অনেক নেতা কর্মী বলেছেন, করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগ শুরু পর থেকে তিন মাসে তাদের নানা অভিযোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের একজন নেত্রী জিনাত সোহানা বলছিলেন, মাঠ পর্যায়ে দলের নেতা কর্মীদের দায়িত্ব দিয়ে তাদের আরও সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

গৃহীত কর্মসূচিগুলো পালন না হওয়ার অনেক অভিযোগ আছে। যেমন বেসরকারি হাসপাতালে কোন চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর খবর আমরা প্রতিনিয়ত শুনছি। এবং তিন হাজার টাকার অক্সিজেন সিলিন্ডার ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমি নিজে এই দামে কিনেছি। ঔষধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে গেছে। নাপা এবং সিভিটসহ সাধারণ ঔষধগুলো বাজারে পাওয়াই যাচ্ছে না। এগুলো মাঠপর্যায়ে মনিটরিংয়ের চেইন অব কমান্ড কঠোর করতে হবে। অবশ্যই প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধি ও মাঠের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও দায়িত্ব আছে। তাদের দায়িত্বগুলো ভাগ করে দিতে হবে।

সংক্রমণ ঠেকানো এবং চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা-এই দুই টি টার্গেটের সাথে পাঁচ কোটির বেশি নিম্ন আয়ের এবং দরিদ্র মানুষকে সহায়তার দেয়ার বিষয়ও সরকারকে সামলাতে হয়।

প্রথমদিকে ত্রাণ তৎপরতায় অনেক ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। তখন ত্রাণ তৎপরতা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। একেকটি জেলার তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একেক জন সচিবকে।

এনিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরেই ক্ষোভ রয়েছে। রাজশাহী থেকে দলটির একজন নেত্রী বলছিলেন, ত্রাণ তৎপরতায় ভূমিকা না থাকায় মাঠের নেতা কর্মিরা একেবারে নিস্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।

খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা দেয়ার দায়িত্ব পুরোপুরি স্থানীয় প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। তাতে আমাদের নেতা কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা অসন্তুষ্ট হয়েছেন যে আমাদের কোন হাত নাই। একজন প্রতিনিধির মন্তব্য শুধু আপনাকে বলতে চাই, উনি ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন যে, আমরা রোদে পুড়ে সংগঠন করে মানুষের পাশে থাকি। কিন্তু এরপরও জেলাপ্রশাসনের কাছে আমরা কিছুই না। তারাই এখন সব হর্তাকর্তা। এ ধরণের ক্ষোভ হয়েছে আমাদের অনেকের মাঝে।

মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সাবেক একজন সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা ছাড়া মন্ত্রিসভার সব সদস্যের ভূমিকাও দৃশ্যমান নয়। যেহেতু সরকারের কৌশল নির্ধারণেই পুরো মন্ত্রিসভার বৈঠক করা যায়নি। ফলে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

আরও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা দরকার ছিল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে। মন্ত্রিসভার সব সদস্যের অংশগ্রহণ প্রয়োজন ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভার বৈঠক করা সম্ভব ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনেক কমিটি করা হলেও সেগুলোর কাজ নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে এবং তারা সুস্পষ্ট দায়িত্ব না নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।

আওয়ামী লীগের মন্ত্রী বা নেতাদের মধ্যে যারা এখন করোনভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন, তারা মনে করেন, এই দুর্যোগের শুরু থেকেই সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে কোন কোন পক্ষ থেকে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা ছিল। সিনিয়র মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাদের সরকার এবং দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যৌথ আলোচনার মাধ্যমেই কৌশল ঠিক করছে।

তিনি বলেন, জানি না, এসব অভিযোগ কারা করছেন। একটা জিনিস হচ্ছে না। সেটা হচ্ছে, পূর্ণাঙ্গ কেবিনেট মিটিং করা যাচ্ছে না। পূর্ণাঙ্গ বৈঠক হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সদস্যকে কথা বলার সুযোগ দেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সেই সুযোগ নাই। কিন্তু কিন্তু স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের সাথে সব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং উনি নির্দেশ দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেছেন, একটা নির্বাচিত সরকার এবং মন্ত্রী, এমপিরা রয়েছেন। কাজেই এটা আমলাদের কারণে লেজেগোবরে হবে, এটা আমি মনে করি না। আমাদের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। এই অসুখটি একেবারে নতুন। এর ভয়াবহতা সম্পর্কেও আমাদের কোন ধারণা ছিল না। সেই প্রেক্ষিতে কিছু ভুলভ্রান্তি হতে পারে, এটা অ্যাসেস করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু আস্তে আস্তে টেস্ট এবং হাসপাতালে চিকিৎসার সুবিধা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধিই হচ্ছে। এবং পরিস্থিতি সেইভাবেই মোকাবেলা করা হচ্ছে।

তিনি সরকারের কর্মকান্ডে কোন ঘাটতি দেখছেন না।

তবে সংক্রমণের বিস্তার নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি এবং চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা নিয়ে নানা অভিযোগকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে সন্দেহ রয়েছে।

তারা বলেছেন, এখনও বিশ্লেষকদের পরামর্শ, বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক চিন্তাকে সমন্বয় করে এখনও এগুনোর সুযোগ রয়েছে।

জেএসএস/বিএ-০৪