‘সত্যিকার অর্থেই কামরান ছিলেন গণমানুষের নেতা’

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ১৫, ২০২০
০৫:৫৮ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১৫, ২০২০
০৫:৫৮ অপরাহ্ন



‘সত্যিকার অর্থেই কামরান ছিলেন গণমানুষের নেতা’
সিলেটের রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া

সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুধু আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেই নয়, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছেও তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছিল পিলে চমকানোর মতো। কেউ সহজভাবে নিতে পারছেন না এই মৃত্যুকে। 

সিলেটের সব রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই মৃত্যু কোনোদিন পূরণ হবার নয়।’ তারা বলেন, ‘বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি ছিলেন সব মতের, সব দলের সব রাজনৈতিকদের নেতা। এজন্যই তিনি হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের নেতা। তার মৃত্যু সিলেটের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’ 

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ হক। ২০০৮ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু সিলেটের রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কালো কোনো অধ্যায় নেই। কামরানও সেই ধারা দারুণভাবে অব্যাহত রেখেছিলেন উল্লেখ করে এম এ হক বলেন, ‘বয়সে আমার চেয়ে মাত্র দুই বছরের ছোট। তবুও খুব সমীহ এবং সম্মান করতো আমাকে। সিটি করপোরেশনে মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম আমরা। কিন্তু কোনোদিন অসৌজন্যমূলক কোনো আচরণ সে করেনি। তাঁর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিন্তু সেগুলো তো আর কোনোদিন তাঁর সঙ্গে বিনিময় করা হবে না।’ 

কামরানের মৃত্যু সিলেটের রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সিলেটবাসী শুধু একজন রাজনৈতিক নেতাকে হারায়নি। হারিয়েছে সামাজিকভাবে পরিচ্ছন্ন একজন মানুষকে। তাঁর মৃত্যু সিলেটের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অপূরণীয় এক ক্ষতি।’ 

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে গণমানুষের নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন গণমানুষের নেতা। সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তার দরজা সবসময় খোলা ছিল। একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শ তিনি আমৃত্যু লালন করে গেছেন। তাঁর বিদায়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হবার নয়।’ 

কামরানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ উদ্দিন আহমদ। দীর্ঘ ১১ বছর দুজন একসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শেষ দেখার স্মৃতিচারণ করে তাই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শামসুদ্দিন হাসপাতাল থেকে যখন অ্যাম্বুলেন্স তোলা হচ্ছিল বিমানবন্দরে নেওয়ার জন্য, তখনই ছিল তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। কথাও হয় তখন তার সঙ্গে। বলেছিলাম, চিন্তা না করতে। আপনি সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসবেন, আমরা আবার এক সঙ্গে সিলেটের রাজপথে নামব। কিন্তু আর নামা হলো না। তিনি চলে গেলেন আমাদের ফেলে।’ 

আসাদ উদ্দিন বলেন, ‘তিনি রাজনৈতিক দূরদর্শী এবং খুবই যুক্তিবাদি ছিলেন। কখনও কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করলে তিনি দ্বিমত করতেন না। সাদরে গ্রহণ করতেন। আমি দীর্ঘ ১১ বছর তাঁর সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু আমি তাঁকে সবসময় একজন অভিভাবক মনে করতাম। তাঁর চলে যাওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে হারিয়েছি আমার রাজনৈতিক অভিভাবককে। সিলেটবাসী হারিয়েছি বন্ধুপ্রতীম এক রাজনীতিবিদকে। আর আওয়ামী লীগ হারিয়েছে পরীক্ষিত এক সহযোদ্ধাকে।’ 

কামরানের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘২০০৯ সালে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে এক অনুষ্ঠানে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা করে। সেখানে সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিম, মহানগর বিএনপির তৎকালীন সভাপতি এম এ হক এবং আমিসহ আরও কয়েকজন নেতাকর্মী আটক হয়েছিলাম। তবে ঘণ্টা দুয়েক পরেই পুলিশ আমাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সেটা কামরান ভাইয়ের জন্যই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের গঠনমূলক সমালোচনার বাইরে কোনো মন্তব্য করতেন না তিনি। তাই কোনো অনুষ্ঠানে আমরাও বিব্রতবোধ করতাম না। এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সিলেটের রাজনীতি আর কোনোদিন পাবে না।’  

সাবেক নগর পিতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘খবরটা শোনার পর আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হলেও আমাদের সঙ্গে খুবই আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। রাজনৈতিক অনেক শিক্ষা পেয়েছি তাঁর কাছ থেকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে অনেক সহযোগিতাও পেয়েছি তার কাছ থেকে। তাঁর মৃত্যু সিলেটের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’  

কামরানের মৃত্যুতে সিলেটবাসী একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ও মানুষকে হারিয়েছেন বলে মনে করেন গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী। তিনি বলেন, ‘তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা বা নগর পিতা ছিলেন না। তিনি সিলেটের মানুষের আপনজন। তাঁর সঙ্গে আমার শুধু রাজনৈতিক সম্পর্কই ছিল না। অনেকভাবেই তিনি ছিলেন আমার প্রিয়জন। তাঁর মৃত্যুতে সিলেট হারালো একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদকে। রাজনৈতিক সম্প্রীতির ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। এমন একজন নেতাকে হারানো সিলেটের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। যা কোনোদিন পূরণ হবার নয়।’ 

এই মৃত্যুকে পূরণ হবার নয় বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট জাকির আহমদ। তিনি বলেন, ‘কামরান ভাই ছিলেন গণমানুষের নেতা। রাজনৈতিক নেতাদের জন্য তাঁর দরজা সবসময় খোলা ছিল। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, তিনি ছিলেন সব রাজনীতিবিদদের নেতা। বিভিন্ন সময় তিনি বিভিন্নজনকে নানানভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন। এমন একজন রাজনৈতিক নেতা হারানো সহজে মেনে নেওয়ার নয়। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদকে হারানো সিলেটের রাজনীতির জন্য অনেক বড় ক্ষতি। এই ক্ষতি কোনোদিন পূরণ হবার নয়।’       

আরসি/এনপি-০৬