মিনহাজ মির্জা, গোয়াইনঘাট
জুন ২৭, ২০২০
১১:৫২ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২৭, ২০২০
১১:৫২ অপরাহ্ন
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার সবক'টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধি এ উপজেলায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে উপজেলাজুড়ে বড় ধরণের বন্যা দেখার শঙ্কা রয়েছে।
গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) থেকে ভারী বর্ষণ হওয়ায় ঢলের পানি বেড়ে গিয়ে গোয়াইনঘাটের সিংহভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় রাস্তা ভেঙে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বানের পানি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে উপজেলার আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নে।
গতকাল শুক্রবার (২৬ জুন) রাতে পানি কিছুটা কমলেও আজ শনিবার (২৭ জুন) সকাল থেকে হওয়া বৃষ্টির কারণে আবারও মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। হঠাৎ করে পানি বাড়লেও এখন পর্যন্ত গোয়াইনঘাটের কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। অবিরাম বৃষ্টিতে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ি ঢলের পানি জাফলং এলাকার পিয়াইন নদ ও ডাউকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঢুকছে।
আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী মনজুর আহমদ বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা দেখা দেওয়ায় মানুষের জীবন যাত্রায় নেমে এসেছে দুর্ভোগ। আলীরগাঁও ইউনিয়নে এ রকম বন্যা আগে কখনও দেখিনি। এই ইউনিয়নের সিংহভাগ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ত্রাণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
জানা গেছে, আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা-বাগান, বাউরভাগ হাওর, মমিনপুর, আসাম পাড়া, আসাম পাড়া হাওর, ছৈলাখেল অষ্টম খন্ড (আংশিক এলাকা) নবম খন্ড, সানকী ভাঙ্গা, নয়াগাঙের পার, ভিত্রিখেল হাওর, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দার হাওর, তিতকুল্লি হাওর, বুধিগাঁও হাওর, রাজবাড়ি কান্দিসহ পশ্চিম জাফলং, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
এতে করে রোপায়িত আউশ ও আমন ধানের বীজতলাসহ কৃষকের আউশ ধান, বোনা আমন, বীজতলা এবং সবজি ক্ষেতসহ প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যদিও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দাবি, তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৮শ হেক্টরের মতো হবে। যার মধ্যে ৮০০ হেক্টর আউশ ধান, ২০ হেক্টর বোনা আমন ও ২০ হেক্টর বীজতলা এবং ১০ হেক্টরের মতো সবজি ক্ষেত। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ডাউকি, গোয়াইন এবং সারী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবক'টি ইউনিয়নের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বন্যায় জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পানিবন্দি মানুষজনের জন্য জরুরি শুকনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
এমএম/আরআর-০৫