কমলগঞ্জে পশুর হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


জুলাই ১৯, ২০২০
০৭:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৯, ২০২০
০৭:০৪ অপরাহ্ন



কমলগঞ্জে পশুর হাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বসা পশুর হাটগুলো করোনায় যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দিন দিন করোনায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে আর কোরবানিকে সামনে রেখে হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই। হাটগুলোতে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ছাড়া ও সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলছে পশু ক্রয়-বিক্রয়। এতে যেন পশুর হাটগুলো করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎসে পরিণত হয়েছে।

এদিকে ল্যাম্পি স্কিন নামক গবাদিপশুর নতুন একটি ভাইরাস সারাদেশের মতো কমলগঞ্জ উপজেলায়ও মহামারি আকারে ছড়িয়েছে। এর পরেও হাটগুলোতে পশু কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই চলছে ক্রয়-বিক্রয়। বাজারগুলোতে নেই পশুর রোগ নির্ণয় করার কোনো ব্যবস্থা, নেই কোনো প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের পশু ডাক্তার বা পর্যবেক্ষণ টিম। এমন দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার সর্ববৃহত পশুর হাট আদমপুর বাজারে।

কমলগঞ্জ উপজেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৫১ জন ও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। অন্যদিকে উপজেলায় ল্যাম্পি স্কিন ভাইরাসে সহস্রাধিক গবাদি পশু আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২০টি গরুর। তবে এখন এ রোগের প্রকোপ নেই বলে দাবি করেছে উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ।

গরু ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গরুগুলোকে কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বাজারে প্রবেশ করানো হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা উচিত বলেও মনে করেন তারা। কিন্তু তবুও নানা অজুহাত দেখিয়ে মানছেন না কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি। করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতা কিছুটা কম হওয়ায় ও ল্যাম্পিং স্কিন ভাইরাসের কারণে গরুর দামও অনেক কমে গেছে।

হাট ইজারাদার ও স্থানীয় সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই পশু ক্রয়-বিক্রয় করার কথা স্বীকার করে বলছেন, তারা জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটরাও হাট-বাজারগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে অনেককে জরিমানাও করছেন। কিন্তু তারপরও জনগণ তা মানছে না।

সরেজমিনে আদমপুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারের চায়ের দোকানে, সেলুনে, গণপরিবহনে, প্রতিটি অলিগলিতে নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব, অমান্য করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। দোকানে রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বেশিরভাগ লোক মাস্ক ব্যবহার করছে না। কেউ কেউ মুখে না পরে গলায় বা থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখছেন। জিজ্ঞেস করলে দিচ্ছেন নানা ধরণের অজুহাত। সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়িগুলো আগের মতোই পাঁচজন যাত্রী গা ঘেঁষে বসিয়ে চলাচল করছে। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলেও সেলুনে যাচ্ছেন সবাই। সেখানে বসার আসন আর সরঞ্জামাদি জীবাণুমুক্ত না করেই চলছে চুল-দাড়ি কাটা। পাড়া-মহল্লায় চায়ের দোকানে চলছে আড্ডা। নামমাত্র ধুয়ে দেওয়া অন্যের চুমুক দেওয়া কাপেই চলছে চা পান।

আদমপুর বাজারের রিকশাচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, 'সংসারের প্রয়োজনে বের হয়েছি। কাজ না করলে খাবো কী? নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে বের হলেও বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। ফলে আমি নিজেও রয়েছি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।'

উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেদায়েত আলী জানান, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে তাদের মেডিকেল টিম কাজ করতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়ে যাতে উপকৃত হন, তার জন্য দুই-একদিনের মধ্যে মেডিকেল টিম পশুর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক তদারকি করবে।

তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে কমলগঞ্জ উপজেলায় ল্যাম্পিং স্কিন ভাইরাসে গবাদি পশু আক্রান্ত হলেও এখন আর এ ভাইরাসটি নেই। গবাদিপশুগুলো এখন সুস্থ আছে।

কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, 'আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একমাত্র ব্যক্তি সচেতনতাই পারে কমলগঞ্জে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না, তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরও যতটা সম্ভব সকলে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেজন্য উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।'

 

এসডি/আরআর-০৫