ছাতকের ব্যবসায়ীর ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন সাহেদ

ছাতক প্রতিনিধি


জুলাই ২০, ২০২০
০৯:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২০, ২০২০
০৯:০২ অপরাহ্ন



ছাতকের ব্যবসায়ীর ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন সাহেদ

সাহেদ করিম

করোনাভাইরাস মহামারির মাঝেই চিকিৎসার নামে প্রতারণা এবং জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম। রিজেন্টকাণ্ডের পর এখন তার এমন নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসছে।

জানা গেছে, দেশ তোলপাড় করা প্রতারক সাহেদ করিম ও তার সঙ্গী মাসুদ পারভেজ সুনামগঞ্জের এক বালু-পাথর ব্যবাসায়ীর কাছ থেকেও প্রতারণা করে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাওনা টাকা চাইতে ঢাকায় গেলে ওই ব্যবসায়ীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখান সাহেদ। প্রতারণার শিকার সুনামগঞ্জের ছাতকের বালু-পাথর ব্যবসায়ী এখলাছ খান গতকাল রবিবার (১৯ জুলাই) এ ব্যাপারে মামলা করার জন্য ছাতক থানায় যোগাযোগ করেছেন। 

ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) মইন উদ্দিন আহমদ জানান, ব্যবসায়ী এখলাছের লিখিত অভিযোগে ভুল থাকায় তা সংশোধন করে আনার জন্য বলা হয়েছে। 

ছাতক শহরের মণ্ডলীভোগ এলাকার ব্যবসায়ী এখলাছ খান জানান, গত মে মাসে শাহেদ ও তার সহযোগী মাসুদ পারভেজ বালু-পাথর সরবরাহের কথা বলে দুই কোটি টাকার মালামাল নেন। সাহেদ করিম একই বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তার কাছ থেকে এক কোটি ৪৯ লাখ ২৫ হাজার ৪২ টাকার বালু-পাথর নেন। এরপর তাকে তিনি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং এক্সকেভেটর মেশিন বিদেশ থেকে আনার জন্য আরও এক লাখ ১০ হাজার ডলারের (প্রায় ৯৪ লাখ টাকা) এলসির কাগজপত্র প্রদান করেন। 

তিনি জানান, সাহেদ কর্তৃক প্রদত্ত চেক এখলাছ খান ছাতকে এসে ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর জানতে পারেন ওই হিসাবে কোনো টাকা নেই। কয়েকবার ব্যাংকে যোগাযোগ করেও হিসাবে কোনো টাকা পাননি এখলাছ। এক্সকেভেটর মেশিন কেনার জন্য যে কোম্পানিকে সাহেদ করিম এলসি দিয়েছিলেন, ওই কোম্পানির সঙ্গে এখলাছ যোগাযোগ করে জানতে পারেন এলসি ফেরত নিয়ে ক্যাশ করে ফেলেছেন সাহেদ করিম। এরপর অনেকবার ফোনে চেষ্টা করেও সাহেদ করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি এখলাছ খান। সর্বশেষ গত ৩০ জুন সাহেদের উত্তরার অফিসে (২/এ, সেক্টর-১২ এর ১৪ নম্বর সড়কে) গিয়ে যোগাযোগ করলে সাহেদ এখলাছের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে শাসান এবং বলেন আর যেন কোনোদিন তাকে (এখলাছ খান) ঢাকায় দেখা না যায়।

এ বিষয়ে এখলাছ খাঁন আরও জানান, অনেক চেষ্টা করে সাহেদের অফিসের এক স্টাফের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন সাহেদ ৩০ জুন উত্তরার অফিসে আসবেন। তাই ২৯ জুন তিনি ঢাকায় চলে যান। ৩০ জুন সকালে সাহেদের অফিসের সামনে গিয়ে বসে থাকেন তিনি। সকাল ১০টায় সাহেদ অফিসের সামনে এসে নামেন। তখন একলাছ তার সামনে গিয়ে বলেন, 'আপনি কি ঠিক করলেন ভাই? আমাকে চেক দিলেন কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা নাই। বলেছিলেন আমাকে বিদেশ থেকে অ্যাক্সকেভেটর আনিয়ে দেবেন। কোম্পানিকে এলসি দিয়ে আবার ফেরত এনে ক্যাশ করে নিয়েছেন। এটা কী করলেন?' এই কথা শেষ হওয়ার আগেই সাহেদ এখলাছের কপালে পিস্তল তাক করে বলেন, 'গুলি করে তোর লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেব। আর যদি ঢাকায় আসিস তোর শরীরে গুলি করার জায়গাও থাকবে না।' তখন সাহেদের সঙ্গে ৪-৫ জন লোক ছিল আর সকলের কাছেই অস্ত্র ছিল। তাই এখলাছ সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। একইভাবে মাসুদ পারভেজ বালু-পাথর নিয়ে একবার ১৮ লাখ টাকা দেয়। এখনও ৪০ লাখ ৫২ হাজার ২শ ৩৫ টাকা তার কাছে পাওনা আছে। ফোন করলে আজ দেব, কাল দেব বলছিল। এখন সেও জেলে আছে।

এ ব্যাপারে ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) মইন উদ্দিন আহমদ জানান, এখলাছ খান রবিবার সকালে সাহেদ ও মাসুদ পারভেজের প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। অভিযোগটি সংশোধন করে আনার জন্য বলা হয়েছে। সংশোধন করে আনার পর র‌্যাবের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটি গ্রহণ করা হবে।

 

এমএ/আরআর-০৫