তাহিরপুরের বারেক টিলা : ভাঙতে ভাঙতে বেহাল সড়ক

আবির হাসান-মানিক, তাহিরপুর


সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
০৫:৫৪ অপরাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০
০৫:৫৪ অপরাহ্ন



তাহিরপুরের বারেক টিলা : ভাঙতে ভাঙতে বেহাল সড়ক

পাহাড়, নদী আর প্রকৃতির বিরল সৌন্দর্যের মেলবন্ধন বারেক টিলা। কিন্তু সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি দেখে চোখ জুড়ানোর পরিবর্তে শঙ্কা আর দুর্ভোগের অপর নাম হয়ে উঠেছে বাংলার আইফেল টাওয়ার খ্যাত তাহিরপুরের বারেক টিলার আঁকাবাকা সড়কটি।

বারেক টিলা স্থানীয়দের কাছে বারিক্কা টিলা হিসেবে পরিচিত। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা টিলার উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পথ বেয়ে হাওর আর পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া যাদুকাটার স্বচ্ছ স্রোতধারা দেখে নয়ন জুড়ানোর কথা। কিন্তু এর পরিবর্তে গত বছরদুয়েক যাবত টিলার এ আঁকাবাকা সড়কটি পর্যটকদের জন্য উপভোগের তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ আর শঙ্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সড়কটির শুরু থেকে শেষ অবধি খানাখন্দ, সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা।

করোনাকালীন সময়ে সারাদেশের ন্যায় তাহিরপুরেও পর্যটকদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সম্প্রতি এ নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করায় পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভ্রমণপিপাসুরা তাহিরপুরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি টিলার আঁকাবাঁকা সড়কটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আর সড়কটির এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা দেখে রীতিমতো অভিযোগের তীর তুলেছেন দায়িত্বশীলদের প্রতি। আর দায়িত্বশীলরা বলছেন, খুব শিগগির সংস্কার করা হবে এ সড়ক। এতে লাঘব হবে ভ্রমণপিপাসুদের দুর্ভোগ আর শঙ্কা, পরিবর্তে মিলবে স্বস্তি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বারেক টিলায় উঠার জন্য প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা একটি সড়ক রয়েছে। আর এই সড়ক বেয়েই পর্যটকরা উপরে উঠে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেন। তবে উপরে উঠতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন পর্যটকরা। কারণ এই ১ কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ জায়গাই বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরপুর। নিচে থেকে উপরে উঠতে গেলে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্তের দেখা মেলে। এছাড়াও সড়কের মাঝে এবং একেবারে উপরের দিকে রয়েছে আরও একাধিক গর্ত। আঁকাবাঁকা এ সড়কের অনেক জায়গায় পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ছে বিড়ম্বনা। এসব গর্তে বিভিন্ন যানবাহন পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কটি আঁকাবাঁকা হওয়ায় ঝুঁকি বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। কারণ একবার যদি যানবাহন সড়কচ্যুত হয়, তাহলে নিচ দিয়ে বয়ে চলা যাদুকাটা নদীতে গিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। এজন্য বড় ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ঘুরতে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা।

কুষ্টিয়া থেকে ঘুরতে আসা ইমরান আহমেদ বলেন, 'দূর থেকে যতটা শুনেছি বা বিভিন্ন মাধ্যমে দেখেছি তার থেকেও বেশি ভালোলাগা বোধ কাজ করছে এমন সৌন্দর্যের এতো কাছে আসতে পারে। বারেক টিলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আঁকাবাঁকা পথ অসাধারণ। তবে আঁকাবাঁকা রাস্তার বেশ কিছু স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা দেখার পর মোটরসাইকেল বেয়ে উপরে উঠার সাহস হচ্ছে না। মোটরসাইকেল খোয়া যেতে পারে এ শঙ্কা মনে নিয়েই মোটরসাইকেল নিচে রেখে পায়ে হেঁটে উপরে উঠেছি। অনেককে মোটরসাইকেলে চেপে উপরে উঠতে দেখেছি। কিন্তু ভয় আর আশঙ্কায় আমি মোটরসাইকেল টিলার নিচে রেখে এসেছি।'

বারেক টিলা, যাদুকাট, বড়ছড়া, শিমুল বাগান রোডে চলাচল করা স্থানীয় পেশাদার মোটরসাইকেল চালকদের কয়েকজন বলেন, 'ঘুরতে আসা পর্যটকরা মোটরসাইকেল নিয়ে টিলার এ রাস্তা বেয়ে সহজে উপরে উঠার সাহস করেন না । আর যারা মোটরসাইকেলে চেপে উপরে উঠেন, তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে উপরে উঠতে হয়। কারণ সড়কটির বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটি বর্তমানে অনেকাংশেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আমরা ভয় নিয়েই এ রাস্তা বেয়ে উপরে উঠানামা করি।'

স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার হাসান রুবেল বলেন, 'মোটরসাইকেলে করে বারেক টিলার রাস্তা বেয়ে উপরে উঠানামা করার সময় অনেকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে বিভিন্ন সময় কয়েকজন আহত হয়েছেন। এজন্য আমরা খুব সাবধানে এ রাস্তা বেয়ে উপরে উঠানামা করি। কারণ রাস্তাটি যতটা আকর্ষণীয়, ঠিক ততটাই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় অসাবধানতার কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে আসেন, তাদের জন্য রাস্তাটা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ নতুন অবস্থায় রাস্তা বেয়ে উপরে উঠার সময় আঁকাবাঁকা রাস্তার গতিপ্রকৃতি তেমনভাবে অনুধাবন করা যায় না। এজন্য পর্যটকদের চলাচল নিরাপদ তথা সার্বিক দিক বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের কাছে আহ্বান করছি যেন রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।'

তাহিরপুরের বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল কাসেম বলেন, 'বারেক টিলার আঁকাবাঁকা রাস্তাটি এখন অনেকাংশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য মারাত্মক বিপদজনক হয়ে উঠছে রাস্তাটি। বারেক টিলায় অনেক সময় প্রশাসনের বা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘুরতে আসেন। আমি তাদেরকেও রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বলেছি। তাছাড়া উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি বার বার উপস্থাপন করা হয়েছে। জেলার সংশ্লিষ্ট যারা রয়েছেন, তাদেরকেও সড়কটির বেহাল দশার কথা জানিয়েছি। কিন্তু সবাই কেবল আশ্বস্তই করেছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।'

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তাহিরপুর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কাজী ফজলুল হক বলেন, 'সড়কটি আমরা দেখেছি। পর্যটকদের জন্য এটা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিওবি এর স্কিম গ্রহণ করে প্রাক্কালন প্রেরণ করা হয়েছিল, কিন্তু অনুমোদন পায়নি। জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।'

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, 'বারেক টিলার আঁকাবাঁকা সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।'

 

এএইচ/আরআর-০১