মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য

বড়লেখা প্রতিনিধি


নভেম্বর ০৩, ২০২০
১০:২৮ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ০৩, ২০২০
১০:২৮ অপরাহ্ন



মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য

দীর্ঘদিন পর মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায় ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। প্রকৃতির জলকন্যার সান্নিধ্য উপভোগ ও দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটছেন মাধবকুণ্ডে। করোনা সংকটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ মাস বন্ধ থাকার পর গত রবিবার থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে মাধবকুণ্ড।

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত মার্চে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত বন্ধ ঘোষণা করায় পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়েন। জলপ্রপাত খুলে দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের মাঝে তাই স্বস্তি ফিরেছে। প্রথমদিনেই দীর্ঘদিনের একঘেয়েমি কাটাতে অনেক পর্যটক মাধবকুণ্ডে বেড়াতে গেছেন। মাধবকুণ্ড যেতে পেরে পর্যটকরা ভীষণ খুশি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা সেখানে যাচ্ছেন। 

ঢাকার শাখারীবাজার থেকে পরিবার নিয়ে প্রথমবার মাধবকুণ্ডে ঘুরতে এসেছিলেন জনি ঘোষ। তিনি বলেন, ‘মাধবকুণ্ড খুলে দেওয়া হবে এটা জানতাম না। আমরা অন্য জায়গা ঘুরে এখানে এসেছি। খোলা পাওয়া গেলে ঘুরে দেখব এটাই ছিল উদ্দেশ্য। এসে দেখলাম খুলে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সকলে অনেক খুশি এখানে আসতে পেরে। সবাই আনন্দ করছে।’

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছরজুড়ে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকত। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ অবকাশ পেলেই ছুটে আসেন মাধবকুণ্ডে। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবে এখানে একটু বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে। পর্যটকের পদভারে তখন মুখর হয়ে ওঠে জলপ্রপাত ও আশেপাশের এলাকা। এতে বেচাকেনা বাড়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এ বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কায় ১৯ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাধবকুণ্ডের ফটক বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রবেশ পথ থেকে ফিরে যেতে হয়েছে। 

গত রবিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর্যটকদের আনাগোনা না থাকায় প্রাণ ফিরেছে মাধবকুণ্ডের প্রকৃতিতে। নির্জন পাহাড়ি ঝর্ণার আশেপাশে ফিরেছে বুনো আবহ। পর্যটকদের হেঁটে চলার পথে জমেছে শ্যাওলা। ফাঁকা জায়গাগুলোতে মাথা তুলেছে বুনো ঘাস-লতা, জেগে উঠছে চেনা-অচেনা গাছ। দীর্ঘদিন পর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে প্রকৃতির নতুন রূপ, ঝর্ণার শব্দের সঙ্গে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, পাখির কলকাকলি ও পর্যটকদের উচ্ছ্বাস মিলেমিশে একাকার হয়েছে। পর্যটকদের কেউ কেউ জলপ্রাপাতের জলে নেমে শরীর ভিজিয়েছেন। হাঁটু সমান জলের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। আবার অনেকে স্মৃতি ধরে রাখতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন।

মাধবকুণ্ডে আসা পর্যটকদের ছবি তোলে দিয়ে রোজগার করতেন জুয়েল আহমদ। করোনার কারণে জলপ্রপাত বন্ধ ঘোষণার পর বেকার হয়ে পড়েন তিনি। মাধবকুণ্ড খুলে দেওয়ায় তার মনে এখন অনেক আনন্দ। জুয়েল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করেছি। মাধবকুণ্ড খুলে দেওয়ায় ভালো হয়েছে। এখন ছবি তোলে টাকা রোজগার করতে পারব। প্রথমদিন হওয়ায় মানুষ কম হয়েছে।’ 

মাধবকুণ্ড পর্যটক সহায়ক ও উন্নয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে পর্যটকদের জন্য কাজ করি, যাতে তাদের কোনো সমস্যা না হয়। সেজন্য একটি দল সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখে।’

পর্যটন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ভানু লাল রায় বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা মাধবকুণ্ডে ঘুরছেন। প্রথমদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মতো পর্যটক এসেছেন। তবে কয়েকদিন গেলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে আমরা কাজ করছি, যাতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে।’

 

এজে/আরআর-১৩