বিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্টের নামে অর্থ আদায়ের হিড়িক

সাইফুল্লাহ হাসান, মৌলভীবাজার


নভেম্বর ১৫, ২০২০
১০:১৫ অপরাহ্ন


আপডেট : নভেম্বর ১৫, ২০২০
১০:১৫ অপরাহ্ন



বিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্টের নামে অর্থ আদায়ের হিড়িক

মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ হাজার হাজার টাকা ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অ্যাসাইনমেন্টের নামে কোনো ফি গ্রহণ না করার জন্য সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দিলেও জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা মানছে না। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ এসেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলার রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা করে ফি আদায় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলে, 'আজ আমরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছি। ক্লাসের একজন শিক্ষার্থী সকল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০ টাকা করে তোলে মিতু নামের একজন শিক্ষিকার হাতে দিয়েছে।'

রাবেয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সালাম টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফটোকপি বাবদ ২০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।'

ওই উপজেলার ব্রাম্মণবাজারের জালালাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির দুইজন শিক্ষার্থী বলে, 'অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের জন্য আমাদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।'

তবে জালালাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র বাবদ কোনো ফি নেওয়া হচ্ছে না।'

এদিকে রাজনগর উপজেলার বিমলাচরণ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ ২৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বইলে খবর পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, 'বেতনের টাকা মাফ দিলেও অ্যাসাইনমেন্টের টাকা মাফ দেওয়া হচ্ছে না। এ টাকা বাধ্যতামূলক দিতেই হবে। কোনো ছাড় দিচ্ছে না তারা।'

তবে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিপন আহমদের দাবি, 'এরকম কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। অনেকে অনেক কিছু গুজব ছড়াচ্ছে।'

রাজনগর উপজেলার কদমহাটা উচ্চবিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২শ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানা যায়, শিক্ষকরা বলছেন পরীক্ষার ফি বাবদ এ টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৪শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ টাকা প্রত্যেক শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে, যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮০ হাজার টাকা।

বিষয়টি স্বীকার করে কদমহাটা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, 'শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফটোকপি বাবদ ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এই ২শ টাকার মধ্যেই আছে তাদের সম্পূর্ণ খরচ। আমরা তাদের এ ফোর কাগজে উত্তরপত্র দিয়েছি।'

কুলাউড়া উপজেলার কর্মদা ইউনিয়নের বাবনিয়া হাশিমপুর নিজামীয়া আলীম মাদরাসায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এসাইনমেন্ট বাবদ ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, 'আমার পরিবারের ৪ জন শিক্ষার্থী আছে এই মাদরাসায়। সবার এসাইনমেন্ট বাবদ ৩০ টাকা করে দিয়ে এসেছি।'

এ বিষয়ে মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা আহসান উদ্দিন বলেন, 'প্রশ্ন ফটোকপি বাবদ ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।'

সার্বিক বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, 'জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। তাদের স্পষ্ট করে বলা হয়েছে এসাইনমেন্ট বাবদ কোনো টাকা নেওয়া যাবে না। যারা তখন অনুপস্থিত ছিলেন তারা এসব কাণ্ড ঘটাচ্ছেন। যারা এসব কাণ্ড ঘটাচ্ছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

 

এসএইচ/আরআর-১৬