সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ

সিলেট মিরর ডেস্ক


ডিসেম্বর ২১, ২০২০
০৭:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২১, ২০২০
০৭:১৬ অপরাহ্ন



সিনহা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে জমা দেওয়া মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। আজ সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে পলাতক একমাত্র আসামি পুলিশ কনস্টেবল সাগর দেবের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ফরিদুল আলম বলেন, নিহত মেজর (অব.) সিনহার বোনের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করেছেন। এতে পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল সাগর দেবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় পুলিশের করা দুটি মামলা থেকে আসামি সাইদুল ইসলাম সিফাতকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

সিনহা হত্যার ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত উল্লেখ করে করে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে ১৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫–এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। 

এতে নতুন করে আসামি দেখানো হয় টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল সাগর দেবকে। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সুতরিয়া গ্রামে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা আসামিরা হলেন টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত্র কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মো. লিটন মিয়া, টেকনাফ থানার কনস্টেবল ছাফানুল করিম, মো. কামাল হোসাইন আজাদ, মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের তিন ব্যক্তি মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান আলী, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন এবং অপর দুই আসামি হলেন কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব।

আসামিদের মধ্যে প্রথম ১৪ জন কারাগারে রয়েছেন। ১৪ আসামির মধ্যে ৯ জন জেলা পুলিশের সদস্য। এ ছাড়া ৩ জন মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের সোর্স।

প্রসঙ্গত, এ বছরের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তাঁর সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তাঁর ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।

সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। তিনটি মামলার দুটি মাদক রাখার অভিযোগে এবং একটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে।

এ ঘটনায় হত্যা মামলাটি করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। ৫ আগস্ট আদালতে করা ওই মামলায় তিনি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের ৯ সদস্যকে আসামি করেন।

চারটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। পরে র‌্যাব এ ঘটনায় প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের ১১ জন পুলিশ সদস্য ও ৩ জন গ্রামবাসী। পুলিশের করা তিনটি মামলার তদন্তে উত্থাপিত অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে র‌্যাব।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পূর্বপরিকল্পনায় আসামিরা মেজর (অব.) সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ১৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

বিএ-০৫